eaibanglai
Homeএই বাংলায়ফুলেশ্বরী- এক মনস্তাত্ত্বিক স্বল্পদৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র

ফুলেশ্বরী- এক মনস্তাত্ত্বিক স্বল্পদৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র

জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী:- ‘শুকনো ডালে ফুল আর ফুটবেনা…’ এই আক্ষেপ ভরা বাক্যবন্ধনী চল্লিশোর্ধ পুরুষের হৃদয়ে আঘাত করলেও তাদের মনস্তাত্ত্বিক বিষয়টি খুব সুন্দরভাবে ধরা পড়েছে মলয় চ্যাটার্জ্জীর ‘ফুলেশ্বরী’ কাহিনীর মধ্যে। সেই কাহিনী বাস্তব হয়ে ফুটে উঠেছে রাজা মুন্সীর দক্ষ পরিচালনায় এবং মলয় বাবু ছাড়াও তপন তাপস্বী, সঞ্চারী হালদার, অরিন বিজলীর অসাধারণ অভিনয় গুণে। প্রত্যেকেই কাহিনী ও চিত্রনাট্যের দাবি মেনে ‘ন্যাচারাল’ অভিনয় করে গেছেন।

কোনো বয়স্ক ব্যক্তিকে ‘কচি’ মেয়ের সঙ্গে প্রেম করার চেষ্টা করতে দেখলে সমাজের একটা অংশ বলতে শুরু করে ‘বুড়ো বয়সে ভীমরতি’ ধরেছে। সমাজের চোখে যতই বেমানান লাগুক না কেন এই প্রেম একটা স্বাভাবিক ঘটনা। ‘বুড়ো বয়সে ফুলে ফুলে মধু খাওয়ার ইচ্ছেটা’ থেকে যায় বলেই হয়তো অবচেতন মনের ‘রোমান্টিক ভাবটা’ ধরে রাখার জন্য কেউ কেউ বিভিন্নভাবে চেষ্টা করে যায়। ‘মেয়ে দেখলেই ছুক ছুক করার বাতিকটা’ থেকে যায়। অবশেষে বয়স জনিত কারণে একটা সময় তারা বাস্তবের মাটিতে ফিরে আসে।

কাহিনীর শুরুতে দেখা যায় দুই বন্ধু খগেন ও মহিম নামক দুই বয়স্ক ব্যক্তির হৃদয়ে ফুলেশ্বরী নামে একটি তরুণী জায়গা করে নিয়েছে – এযেন ‘এক ফুল দো মালি’। এদের মধ্যে আবার খগেন অবিবাহিত ও মহিম বিবাহিত। প্রত্যেকেই মনে করে ফুলেশ্বরী তাকে বেশি পচ্ছন্দ করে। ফলে দুই বন্ধুর মধ্যে চলে বাক্যের মাধ্যমে খুনসুটি। বিষয়টা ফুলেশ্বরী খুব উপভোগ করে এবং প্রেমিক প্রকাশকে বলে। যথারীতি প্রকাশও ওদের পেছনে লাগে। রাগাতে শুরু করে। শেষ পর্যন্ত দুই বন্ধু উপলব্ধি করে একটা বাচ্চা মেয়েকে নিয়ে এভাবে চিন্তা করাটা ঠিক নয়। শেষেরটা জানতে হলে অবশ্যই ইউটিউবে দেখতে হবে।

প্রায় কুড়ি মিনিটের কাহিনী। ফুলেশ্বরীকে নিয়ে দুই বন্ধুর কথোপকথন ও আচরণ দর্শকদের মনে একইসঙ্গে হাসি ও ভাবনা সৃষ্টি করবেই। মলয় বাবু ও তপন বাবু যে জাত শিল্পী সেটা বারবার তাদের অভিনয়ের মাধ্যমে ফুটে উঠেছে। কিন্তু কলেজ ছাত্রী সঞ্চারী যেভাবে অভিনয় করে গেছে সেটা প্রশংসার দাবি রাখে। কয়েকটি ক্ষেত্রে তার এক্সপ্রেশন ছিল অসাধারণ। অরিন বিজলী নিজের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে গেছে। বরাবরের মত এবারও রাজা মুন্সী কৃত্রিম আলোর পরিবর্তে প্রকৃতির আলোর উপর নির্ভর করে গেছেন। খগেন ও মহিমের উপর আলো-ছায়ার ‘শেড’ তাদের রঙিন ও হতাশ ভাবনার ইঙ্গিত বহন করে। একই ফ্রেমে ধরে রাখা খগেন, মহিম ও ফুলেশ্বরীর প্রতিক্রিয়া মনে রাখার মত। সবমিলিয়ে বলা যেতেই পারে স্বল্পদৈর্ঘ্যের ‘ফুলেশ্বরী’ দর্শক মনে দীর্ঘমেয়াদি ভাবনা এনে দেবে। চলচ্চিত্রটি দেখে নদীয়ার একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রবীণ শিক্ষক সুরসিক নীহার চক্রবর্তী বললেন – মানুষের ভাবনার বাস্তব প্রতিফলন ফুটে উঠেছে চলচ্চিত্রটিতে। বাড়তি পাওনা অভিনয় ও পরিচালনা। বাচ্চা মেয়েটির অভিনয় মনে রাখার মত। তারপর হাসতে হাসতে বললেন – ওর অভিনয় দেখলে সত্যিই প্রেমে পড়তে ইচ্ছে করে!

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments