নিউজ ডেস্ক, এই বাংলায়ঃ বর্তমান যুগে রাজ্য পুলিশের যে দায়িত্ব ও কর্তব্য তা সকলেই জানেন। কিন্তু কোথাও কি পুলিশ বা অধঃস্তন পুলিশকর্মীরা তাদের নিজস্ব দায়বদ্ধতা থেকে ক্রমশ সরে আসছেন? বর্তমানে এই প্রশ্ন হামেশাই উঠতে শুরু করেছে। আর তাই যদি হয়ে থাকে তাহলে বলতে হবে রাজ্যবাসীর জন্য তা মোটেই ভালো খবর নয়। কারণ এর আগেও বহুবার পুলিশের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রকম অভিযোগ এবং কর্তব্যবিমূঢ়তার নানান অভিযোগ উঠেছে সমাজের বিভিন্ন মাধ্যম থেকে। এবার যা আরও একবার প্রকাশ্যে এলো দুর্গাপুর শিল্প শহরের বুকে। কারণ এবার নিচুতলার পুলিশ কর্মী ও সিভিক ভলেন্টিয়ারদের বিরুদ্ধে তোলাবাজির অভিযোগ তুললেন শিল্পশহরের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রায় তিন শতাধিক সিমেন্ট, বালি, পাথর সরবরাহের কাজে নিযুক্ত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। হ্যাঁ অবাক লাগলেও এমনই চাঞ্চল্যকর অভিযোগ তুলেছেন দুর্গাপুরের শতাধিক সিমেন, বালি সরবরাহের সঙ্গে যুক্ত ছোট ব্যবসায়ীরা। তাদের অভিযোগ দিনের পর দিন ব্যবসায় পুলিশের চাপ বাড়ছে। ঠিক কী ধরণের চাপ? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সিমেন্ট ও বালি সরবরাহের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী অভিযোগ জানাচ্ছেন, যখনই ট্রাক বা লরি বোঝাই করে কোনো ক্রেতাকে বালি বা সিমেন্ট ট্রাকে করে বোঝাই করে সরবরাহ করা হচ্ছে তখনই জাতীয় সড়ক বা কোন স্থানীয় সড়কের পাশে আগে থেকে দাঁড়িয়ে থাকা সিভিক ভলেন্টিয়ার ও কিছু নিচু তলার পুলিশকর্মী সেগুলিকে জোর পূর্বক দাঁড় করাচ্ছেন। শুধু তাই নয় ট্রাকচালকদের অভিযোগ, গাড়ি দাঁড় করিয়ে সেই সিমেন্ট, বালি, পাথরের রয়ালটি কাগজ বা পাকা বিল দেখানোর দাবি করছেন পুলিশ কর্মী বা সিভিক ভলেন্টিয়াররা। কোনও কোনও বার তো জিএসটি বিল পর্যন্ত দাবি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন শিল্পশহরের ব্যবসায়ীরা। ফলে স্বভাবতই শিল্পশহরের এই সমস্ত ব্যবসায়ীরা প্রশ্ন তুলেছেন এভাবে জাতীয় সড়কে গাড়ি দাঁড় করিয়ে জোরপূর্বক কাগজ দেখতে চাওয়া কি আদৌ পুলিশ প্রশাসনের অধিকারের মধ্যে পড়ে? পুলিশ প্রশাসনের ওপর ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে এই সমস্ত ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন আসলে নিম্নপদস্থ কিছু পুলিশকর্মী বা তাদের সঙ্গে থাকা সিভিক ভলেন্টিয়ারদের প্রধান উদ্দেশ্য সরকারী রাজস্ব বাঁচানো নয়, বরং এইসমস্ত সিমেন্ট, বালি, পাথর সরবরাহকারী ট্রাকগুলিকে আটকে তাদের কাছ থেকে নিয়মিত তোলা আদায়ই তাদের প্রধান উদ্দেশ্য বলে গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন এই ব্যবসায়ীরা। তাদের অভিযোগ, দিনের পর দিন দুর্গাপুর শহরজুড়ে যেভাবে পুলিশী তোলাবাজির দাপট বেড়েছে তাতে তাদের ব্যবসা চরম ক্ষতির মুখে পড়ছে। এইসমস্ত ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, এক এক জায়গায় পুলিশ সরাসরি চোখ রাঙাচ্ছে মাসিক মোটা অঙ্কের তোলা না দিলে ব্যবসা চালানো যাবে না। এই ব্যবসায়ীরা সবথেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সিভিক ভলেন্টিয়ারদের ওপর। তাদের অভিযোগ, পুলিশের থেকেও দাদাগিরিতে এগিয়ে এইসমস্ত সিভিক ভলেনটিয়ারদের এমনই হাবভাব যেন তারাই পুলিশ প্রশাসনের হত্তাকর্তা। এখানেই থেমে না থেকে তারা জানালেন, এইসমস্ত সিভিক ভলেন্টিয়াররা যেহেতু স্থানীয় এলাকা থেকে বা দুর্গাপুরেরই বাসিন্দা তাই নিজেদের ক্ষমতা জাহির করতে পিছুপা হয় না তারা। আর এই সমস্ত সিভিক পুলিশকর্মী ও সিভিক ভলেন্টিয়ারদের অত্যাচারে নাভিশ্বাস উঠেছে শিল্পশহরে এইমুহূর্তে এই ব্যবসার সঙ্গে নিযুক্ত তিন শতাধিক ব্যবসায়ীর। তাদের ক্ষোভ, একেই দিনের পর দিন যেভাবে সিমেন্ট, বালি, পাথরের দাম বাড়ছে তাতে ব্যবসায় লাভের পরিমাণ কমছে, এর ওপরে নতুন করে পুলিশের জোর-জুলুম করে তোলাবাজি আদায় শুরু হওয়ায় তাদের ব্যবসা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এমতাবস্থায় পুলিশি তরফে দায়বদ্ধতা আশা করছেন এই ব্যবসায়ীরা। তাদের মতে, পুলিশ প্রশাসনের ওপরে ভরসা করে সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা শান্তিতে জীবনযাপন ও জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। তাই পুলিশের প্রতি মানুষের আস্থা আরও বাড়াতে পুলিশ প্রশাসনের সজাগ দৃষ্টি আশা করছেন এই ব্যবসায়ীরা।