eaibanglai
Homeএই বাংলায়রাজনীতিবিদদের ভাষা সন্ত্রাস বন্ধ করার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হবে কি?

রাজনীতিবিদদের ভাষা সন্ত্রাস বন্ধ করার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হবে কি?

জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জীঃ- মানুষের তার মনের ভাব প্রকাশ করার জন্য ভাষার ব্যবহার করতে শুরু করে। প্রতিটি ভাষার মধ্যে একাধিক শব্দ আছে যেগুলি অশ্লীল হিসাবে গণ্য করা হয় এবং সভ্যসমাজে সেগুলি আর প্রকাশ্যে ব্যবহার করা হয়না। অবশ্য বন্ধু মহলে এইসব শব্দের ব্যবহারের চল আছে।

রাজনীতির জগতে প্রতিটি শাসকদলে এমন একদল ‘সম্পদ’ আছেন যারা অবলীলায় সেইসব অশ্লীল শব্দ প্রকাশ্যে ব্যবহার করেন। দেশের সর্বত্র এরা বিরাজমান। তাদের আচরণ দেখে মনে হবে সংবিধান তাদের এই অধিকার দিয়েছে। বিরোধীদের পাশাপাশি প্রতিটি ক্ষেত্রেই তাদের আক্রমণের লক্ষ্য সেই পুলিশ। যেকোনো ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা বিরোধীদলের অনুকূলে নাহলেই ‘চটিচাটা’, ‘দলদাস’, ‘মেরুদণ্ডহীন’ ইত্যাদি শব্দ বন্ধনী পুলিশের বিশেষণ হয়ে ওঠে। আরজি করের ঘটনার সময় যখন বলা হয় ‘পুলিশ তুমি চিন্তা করো, তোমার মেয়ে হচ্ছে বড়’ – অশ্লীল ইঙ্গিত বহন করে। এটা ভক্তির মোড়কে সাধুভাষায় ব্যবহার করা হয়েছে বলে হয়তো মেরুদণ্ডযুক্ত(!) নেটিজেনদের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেনি।

সবকিছুকেই ছাপিয়ে গেছে সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া একটি অডিও। শোনা যাচ্ছে সেটা নাকি বীরভূমের দোর্দণ্ডপ্রতাপ তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডলের। ঘটনার জন্য ইতিমধ্যে অনুব্রত লিখিতভাবে পুলিশের কাছে ক্ষমা চেয়েছে। দল নির্দেশ দেওয়ার আগেই যদি সে ক্ষমা চাইত তাহলে বোঝা যেত শব্দগুলি ব্যবহার করার জন্য সে আন্তরিকভাবে অনুতপ্ত।

অডিওতে এমন কিছু শব্দ শোনা যাচ্ছে যেগুলো শুধু ছাপার অযোগ্য নয়, প্রকাশ্যে উচ্চারণের অযোগ্য। একজন রাজনীতিবিদের কাছে এটা কখনোই প্রত্যাশা করা যায়না। যদিও আগে অনুব্রতের বিরুদ্ধে একাধিকবার প্রকাশ্যে পুলিশকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠলেও এত নোংরা শব্দ ব্যবহারের অভিযোগ শোনা যায়নি। পুলিশ তদন্ত করে দেখতেই পারে কীভাবে অডিওটি কার মাধ্যমে একজন ইউটিউবারের হাতে গেছে অথবা অনুব্রতকে ফাঁদে ফেলা হয়েছে কিনা। তদন্তের ফলাফল যাইহোক শব্দগুলো ভক্তিপূর্ণ হয়ে উঠবেনা। সকালে উঠে মানুষ সেগুলোর মাহাত্ম্য প্রচারও করবেনা। সুতরাং শব্দ ব্যবহারকারীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে অন্যদের প্রতি বার্তা দেওয়া হোক।

অনুব্রতের ‘ডোজ’ বেশি হলেও পুলিশের বিরুদ্ধে কুৎসিত শব্দ বা বাক্য বন্ধনী প্রয়োগ করার জন্য প্রতিটি দলের মধ্যে একাধিক শব্দ বিশেষজ্ঞ পাওয়া যাবে। নন-বায়োলজিক্যাল বলেই হয়তো এদের মধ্যে লজ্জাশরম দেখা যায়না। এইসব শব্দ প্রয়োগের সময় যারা মঞ্চে বা দর্শক আসনে বসে হাততালি দিয়ে বক্তাকে উৎসাহিত করেন তারা অবিকল মানুষের মত দেখতে হলেও সত্যিই মনুষ্য পদবাচ্য কিনা সেটা ভাববার বিষয়! যেসব নেতা ভারতের বীর জওয়ানদের প্রতি কুৎসিত শব্দ ব্যবহার করছে তারাও কিন্তু অনুব্রতের মতই অপরাধী।

পহেলগাঁওয়ের সন্ত্রাসবাদী হামলার পর প্রতিটি রাজনৈতিক দল ও দেশবাসী একত্রিত হয়ে সন্ত্রাসবাদ দমন করার জন্য ভারত সরকারের পাশে এসে দাঁড়ায়। ফলাফল সবার জানা। ভাষা সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে কঠোর ব্যবস্থা নিতেই হবে। তাদের সমস্ত রকম রাজনৈতিক কার্যকলাপ বন্ধ করার জন্য উদ্যোগ নিতেই হবে। আইন করে তাদের রাজনৈতিক দলে যোগ দেওয়া বন্ধ করতে হবে। অনুব্রত নিজের অজান্তেই সেই সুযোগ এনে দিয়েছে। অবশ্যই এগুলো অলীক কল্পনা। কারণ সাধারণ মানুষ নয়, দলগুলোর কাছে ওরাই যে প্রকৃত সম্পদ!

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments