জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,গুসকরাঃ- শুরু হয়েছে বোরো ধান কাটার কাজ। এখন অধিকাংশ ক্ষেত্রে ধান কাটার জন্য আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্য নেওয়া হচ্ছে। জমির মধ্যে পড়ে থাকছে ধান গাছের শেষাংশ। পরে টুকরোগুলো জড়ো করে ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে আগুন। দূর থেকে দেখলে মনে হবে গণ শবদাহ হচ্ছে। সেই আগুনে পুড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে জমিতে থাকা কৃষির অনুকূল অণুজীবগুলো। শুধু তাই নয় আগুনে জমির উপরের অংশ পুড়ে কঠিন হয়ে যাচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে জমির স্বাভাবিক উর্বরতা শক্তি।
দ্বিতীয় দৃশ্যে দ্যাখা যায় ধানগুলো শুকানোর জন্য মিলে দেওয়া হচ্ছে জাতীয় বা রাজ্য সড়ক অথবা গ্রামের ঢালাই রাস্তার উপর। কোথাও কোথাও আবার উঁচু করে মিলে দেওয়া হচ্ছে কুটুরিগুলো। এনএইচ – টু বি, গুসকরা-নতুনহাট সহ প্রতিটি রাস্তায় এই দৃশ্য স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। ব্যস্ত সড়কের উপর দিয়ে দ্রুতগতিতে ছুটে চলেছে পণ্যবাহী গাড়ি। বিপদে পড়ে যাচ্ছে দু’চাকা বা টোটোতে যাতায়াতকারীরা। মাঝে মাঝে দুর্ঘটনাও ঘটছে।
প্রায়শই বোরো ধান কাটার সময় বৃষ্টি হচ্ছে। ফলে চাষীরা মাঠ থেকে ট্রাক্টর করে ধান খামারে তুলে আনতে বাধ্য হচ্ছে। ট্রাক্টটের চাকায় উঠে আসা এঁটেল কাদা রাস্তার উপর পড়ে থেকে বিপজ্জনক পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে। মাঝে মাঝে দুর্ঘটনা ঘটছে।
গত কয়েকবছর ধরে একই ঘটনা ঘটে চললেও ব্লক কৃষি দপ্তর কেবলমাত্র বিভিন্ন এলাকায় কিছু নিষেধাজ্ঞা জনিত ফেস্টুন লাগিয়ে নিজেদের দায়িত্ব পালন করছে। বিভিন্ন ব্লকের কৃষি আধিকারিকদের বক্তব্য – লোকবলের অভাবের জন্য এরবেশি কিছু করা সম্ভব নয়। তাছাড়া স্থানীয় মানুষদের সচেতন হতে হবে।
যারা নিজ নিজ এলাকার চাষীদের সতর্ক করতে পারত সেই পঞ্চায়েত প্রশাসন নীরব দর্শক হয়ে বসে আছে। তাদের দেখে মনে হচ্ছে এই সমস্যা দূর করার জন্য তারা উপরমহলের নির্দেশের জন্য অপেক্ষা করছে। অথবা ভোট ব্যাংক নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয়ে তারা উদাসীন থাকছে। অথচ দলমত নির্বিশেষে প্রত্যেকেই বিপদের মুখোমুখি হচ্ছে।
গলসী-২ নং ব্লকের সাটিনন্দী পঞ্চায়েতের প্রধান বৈশাখী পুইলে বললেন – আমাদের এলাকা মূলত কৃষিপ্রধান। বোরোধান কাটার সময় প্রতি বছর এই সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করি ধান ওঠার পর পঞ্চায়েত থেকে কর্মী নিয়োগ করে রাস্তা থেকে মাটি সরিয়ে দিতে। প্রত্যেকে যদি একটু সতর্ক হয় তাহলে এই সমস্যা থেকে অনেকটা রেহাই পাওয়া যাবে।
কথা হচ্ছিল আমেরিকায় গবেষণারত বাঙালি বিজ্ঞানী বিশ্বরূপ ঘোষের সঙ্গে। তিনি বললেন – কুটুরিগুলোতে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার ফলে পরিবেশ দূষণ তো হচ্ছেই কিন্তু কৃষি জমির ক্ষতি হয় সবচেয়ে বেশি। অথচ বৃষ্টির জল পড়ে ঐগুলো পচে জমিতে মিশে গিয়ে জৈব সারের কাজ করত। এতে জমির উপকার হতো। আগুন লাগানোর ফলে জমিতে বসবাসকারী কৃষির উপযোগী অণুজীবগুলো মরে যায়। মাটির উপরের অংশ পুড়ে নষ্ট হয়ে যায়। অর্থাৎ সবদিক দিয়েই চাষী ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এখন অঞ্চল ভিত্তিক যদি চাষীদের সচেতন করা হয় তাহলে সবচেয়ে উপকৃত হবে চাষী এবং রক্ষা পাবে পরিবেশ। এরজন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নিতে হবে।
প্রসঙ্গত গ্রামের ছেলে বিশ্বরূপ বাবু হলেন কৃষক বাড়ির সন্তান। কৃষিতে জৈব সারের প্রয়োগ নিয়ে তিনি কাজ করছেন। তার লক্ষ্য সীমিত আর্থিক সামর্থ্য নিয়ে যত বেশি সম্ভব কৃষকের কাছে পৌছানো।