এই বাংলায়, নিউজ ডেস্কঃ এই ঘটনা বর্তমানে নিত্যদিনের। পরিবারে কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করল মানেই বাবা-মায়ের মাথায় বাজ পড়ল কী করে মেয়ের বিয়ে দিয়ে কন্যাদায়গ্রস্ত পরিবার একটু মুক্তি পাবে। কিন্তু তারা একবারও ভেবে দেখেন না যে তাদের সেই কন্যা সন্তান কী চায়। ফলে ১৮-র কোটা পেরোনোর আগেই নিজের চরম অনিচ্ছা সত্ত্বেও শুধুমাত্র পরিবারের চাপে পড়ে নাবালিকা কন্যাদের বসতে হয় বিয়ের পিড়িতে। বর্তমানে আমরা নিজেদের আধুনিক যুগের আধুনিক মানুষ হিসেবে সমাজে জাহির করি। অথচ আধুনিক যুগের শো-কল্ড আধুনিক আমরাই আবার আমাদের কন্যা সন্তানদের ১৮ বছর না পেরোতেই স্কুলে পাঠানোর বদলে বিয়ের পিড়িতে বসিয়ে দিই। ফলস্বরূপ যা হওয়ার তাই হয়, বছর ঘুরতে না ঘুরতেই হয় পারিবারিক সমস্যায় জর্জরিত হয় পরিবার, আর নয়তো প্রাপ্তবয়সের আগে বিয়ে দেওয়ার ফলে সেই কন্যা সন্তানদের জীবন সংশয়ের মতো ঘটনা ঘটে থাকে। এইধরনের ঘটনা রাজ্যে নতুন নয়। প্রত্যেক দিন খবরের কাগজে, বিভিন্ন নিউজ চ্যানেলে প্রতিনিয়ত এইধরনের ঘটনার সাক্ষী থাকি আমরা। আর বর্তমানে রাজ্যের মধ্যে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা জুড়ে সম্প্রতি নাবালিকা বিয়ের ঘটনা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। কখনও পরিবারে স্বচ্ছলতার অভাবে, কখনো বা পরিবারের সদস্যদের চাপে আবার কখনো প্রশাসনের চোখে ধুলো দিয়ে নাবালিকা কন্যার বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে তাদের মা-বাবারা। ফের এমনই এক ঘটনার সাক্ষী থাকল দক্ষিণ ২৪ পরগনার জীবনতলা থানার পয়না গ্রাম। সেখানে ১৫ বছরের এক মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী নাবালিকাকে জোর করে প্রশাসনের চোখে ধুলো দিয়ে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ উঠল পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে। জানা গেছে, সাফিউদ্দিন মোল্লা নামে ওই নাবালিকার বাবা স্থানীয় বেদবারী গ্রামের এক যুবকের সাথে নিজের নাবালিকা কন্যার বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। পাত্রপক্ষের সাথে কথা বলে এবং পাত্রপক্ষের পরিবারের মেয়েকে পছন্দ হয়ে যাওয়ায় রাতারাতি বিয়ে দেওয়ার কথা পাকা করে ফেলে মেয়ের বাবা। এরপর ওই নাবালিকা বিয়ে উপলক্ষ্যে বাড়িতে লোকজন আসতে দেখে জীবনতলার বিডিও দেবব্রত পালকে ফোন করে সমস্ত ঘটনা জানায় এবং ওই নাবালিকা কান্নামিশ্রিত গলায় বিডিওকে জানায়, সে আরও পড়াশোনা করতে চাই, কিন্তু তার বাবা তাকে জোর করে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে। নাবালিকার ফোন পাওয়া মাত্রই বিডিও সাহবে তড়িঘড়ি জীবনতলা থানার পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছান। কিন্তু সেখানে মেয়ের বাবা সাফিউদ্দিন পুলিশ ও বিডিও সাহেবের চোখে ধুলো দিতে বাড়িতে আসা এক সাবালিকা আত্মীয়াকে দেখিয়ে এবং তার জন্ম সার্টিফিকেট দেখিয়ে প্রশাসনের আধিকারিকদের বোকা বানানোর চেষ্টা করে। সেই চেষ্টায় প্রাথমিকভাবে সফলও হয়ে গিয়েছিলেন বিডিও সাহেব এবং পুলিশ আধিকারিকরা। কিন্তু ফিরে আসার পথে বিডিও সাহবের সন্দেহ হওয়ায় ফের মেয়ের পরিবারকে চাপ দিলে আসল তথ্য বেরিয়ে আসে। এরপর পরিবারের চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে পুলিশ। পরে তাদের মুচলেকা লিখিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু রাজ্যে এধরনের ঘটনা তো একটা নয়, একাধিক। তাই প্রত্যেক নাবালিকার ভাগ্যও সমান হয় না। এরকম বহু নাবালিকার বিবাহ হয়ে গেলেও প্রশাসনের কাছে সেই তথ্য পৌঁছায় না। কিন্ত কেন? মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় আসার পর নাবালিকাদের জন্য যেমন কন্যাশ্রী প্রকল্প চালু করেছেন তেমনি সাবালিকাদের বিবাহের জন্য রূপশ্রী প্রকল্পও চালু করেছেন। যার আওতায় দু-ভাগে মোট ৫০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়ে থাকে। এত সুযোগ-সুবিধার পরেও কেন সমাজে বারবার এইধরণের ঘটনা ঘটছে তার উত্তর সত্যিই অজানা এবং উদ্বেগের। কারণ, জোর করে নাবালিকার বিয়ে বন্ধ করা এক ব্যাপার, আর মানুষের মধ্যে নিজে থেকে সচেতনতাবোধ জাগ্রত হওয়া অন্য ব্যাপার। তাই যতদিন পর্যন্ত আমাদের সমাজে এই সচেতনতাবোধ জাগ্রত হচ্ছে ততদিন এইধরনের ঘটনা বন্ধ করা খুবই কঠিন।