নিউজ ডেস্ক, এই বাংলায়ঃ আধুনিক এই সমাজে আজও বহাল তবিয়েতে অন্ধবিশ্বাস, কুসংস্কারের মত নানান সামাজি ব্যাধি যা আমাদের আধুনিক এই পৃথিবীতেও কুড়ে কুড়ে খাছে। কোথাও সাপে কাটা রোগীকে হাসপাতালে না নিয়ে গিয়ে ওঝা, গুনিন বা হাতুড়ে ডাক্তারদের শরনাপন্ন হচ্ছে মানুষ তো কোথাও কাউকে ভূতে ধরেছে বা কোনও মহিলাকে ডাইনী অপবাদে বেধড়ক মারধর করতেও পিছুপা হয়না আমাদের বর্তমান সমাজ। ফের এমনই এক নৃশংস ঘটনার সাক্ষী থাকল দক্ষিণ ২৪ পরগনার গাইঘাটা থানার জলেশ্বরের বাসিন্দা স্বর্নালী মণ্ডল নামে এক মহিলা। ওই গৃহবধূকে ভুতে ধরেছে এই সন্দেহে বাড়িতে ওঝা ডেকে এনে অমানসিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। পরিবারের বক্তব্য, বৃহস্পতিবার রাতে জলেশ্বরে একটি বিয়ে বাড়িতে গিয়েছিলেন ওই গৃহবধূ। শুক্রবার কোনোরকম কিছু লক্ষ্য না করা গেলেও শনিবার সকাল থেকে অদ্ভূত আচরণ করতে থাকেন স্বর্ণালী মণ্ডল নামে ওই গৃহবধূ। পরিবারের আশঙ্কা হয়, বিয়ে বাড়ি যাওয়ার পথেই তাকে ভূতে ধরেছে। এরপর শনিবার এলাকার বাসিন্দা ও পরিবারের লোকজন মিলে স্থানীয় এক ওঝাকে ডেকে নিয়ে আসে। শুরু হয় ওঝার অত্যাচার। তীব্র গরমে অসুস্থ ওই মহিলাকে রাস্তায় ফেলে ঝাটা দিয়ে বেধড়ক মারধর করা শুরু করে অভিযুক্ত ওই ওঝা, চলে এলোপাথাড়ি লাথি। অসুস্থতার জেরে ওই মহিলা আর্ত-চিৎকার করলেও গ্রামবাসীরা ও তার পরিবারের সদস্যরা নীরব দর্শকের ভূমিকায় ছিলেন। অন্যদিকে ওই ওঝা ভূত তাড়ানোর নামে ঝাটা দিয়ে নাগাড়ে ওই মহিলাকে মারতে থাকে, জল ভর্তি কলসি দাঁতে করে নিয়ে ঘোরানো হয় বলেও অভিযোগ।
এই আমাদের সমাজ, যেখানে দিনের পর দিন আমরা আধুনিকতা আর বিজ্ঞানের ছায়ায় ক্রমে উন্নতি শিখরে পৌঁছাচ্ছি তখন আমাদেরই এই সমাজে আজও ওঝা, গুনীনদের মতো ভন্ড কিছু স্বার্থলোভী মানুষের কাছে নিজেদের প্রিয়জনকে সপে দিচ্ছি তার সুস্থতা কামনায়। কিন্তু আদৌ কী তারা সুস্থ হচ্ছেন? এই যে স্বর্ণালী মণ্ডল নামে অসুস্থ গৃহবধূকে ভূত তাড়ানোর নামে যে নির্মম অত্যাচার করা হল তাতে আদৌ কী সে সুস্থ হল? গ্রামের মানুষ থেকে শুরু করে পরিবারের কোনও একজন সদস্যের মনে হল না ওই গৃহবধূকে কোনও ওঝার কাছে না নিয়ে গিয়ে ভালো একজন মানসিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করানোর কথা? আচমকায় এক গৃহবধূ এভাবে অসুস্থ হয়ে যাওয়ার পর তাকে প্রকাশ্য রাস্তায় ঝাটা পেটা করা কোনওধরণের চিকিৎসা পদ্ধতি তা আমাদের জানা নেই। শুধু এই ঘটনা নয়, বছরের পর বছর ধরে আমরা আধুনিকতার মুখোশ পরিধান করেছি ঠিকই কিন্তু আজও আমাদের মানসিকতাই পরিবর্তন আনতে পারিনি। আর মানসিক পরিবর্তন আনতে পারিনি বলেই এই একবিংশ শতকেও কাউকে সাপে কামড়ালে হাসপাতালে না নিয়ে গিয়ে আমরা ওঝা বা গুনীনের শরনাপন্ন হই, আবার কোনও মহিলাকে ডাইনি অপবাদে গণধোলাইয়ে নিজের জীবন দিতে হয় আর তা না হলে স্বর্ণালীর মতো গৃহবধূদের ভূত তাড়ানোর নামে প্রকাশ্যে ঝাটা পেটা সহ্য করতে হয়। কবে উদয় হবে শুভবুদ্ধির? বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে, মফস্বলে এখনও বিজ্ঞান মঞ্চের সদস্যরা মানুষকে কুসংস্কারের বেড়াজাল থেকে বের করে আনার চেষ্টা করে চলেছেন, কিন্তু তাসত্বেও আর কতদিন এভাবে ভূত তাড়ানোর নামে মানুষকে এভাবে অত্যাচার সহ্য করতে হবে তার উত্তর জানা নেই।