eaibanglai
Homeএই বাংলায়সেই কৃষ্ণের বাঁশির সুরে ফের কি বালি, কয়লার 'প্যাড' শুরু শিল্পাঞ্চলে ?

সেই কৃষ্ণের বাঁশির সুরে ফের কি বালি, কয়লার ‘প্যাড’ শুরু শিল্পাঞ্চলে ?

মনোজ সিংহ, দুর্গাপুরঃ ‘ ‘সাবানে কয়লা, না ছাড়ে ময়লা।’ আর দক্ষিন বাঙলার কয়েকটি বাছাই করা জেলায় সম্ভবত ফের হতেও চলেছে ঠিক সেটাই।

যে কয়লাকে কেন্দ্র করে সংগঠিত মাফিয়ারাজ চলে ভারতের কয়লাঞ্চলের কয়েকটি রাজ্যে বাঙলা তার মধ্যে অন্যতম। কয়লার অপর নামই হলো ‘কালো সোনা’। সেই বাম জামানা থেকে সংগঠিত কয়লা মাফিয়ারা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে গোটা রাণীগঞ্জ, আসানসোল, দুর্গাপুর কয়লাঞ্চলের চিহ্নিত কয়েকটি থানা এলাকা জুড়ে। রাজ্যে পালা বদলের পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর প্রচেষ্টায় আসানসোল দুর্গাপুর পুলিস কমিশনারেট গঠিত হয় মূলতঃ অবৈধ কয়লা কারবারে রাশ টানতেই। কয়লা মাফিয়াদের বিরুদ্ধে জোর অভিযান চালানো হয় লাগাতার। গোটা রাজ্য জুড়ে যে সব কুখ্যাত কয়লা মাফিয়া ও কয়লা কারবারের সাথে যুক্ত ব্যক্তিরা ছিল তাদের সকলকেই একে একে গ্রেপ্তারও করা হয়।

মাফিয়ারা গোড়ায় চার বছর গর্তে সেঁধিয়ে গেলেও, ২০১৭ থেকে ধীরে ধীরে ফের ডালপালা বিস্তার করতে শুরু করে। তার দৌলতেই একাধিক রাজনেতা ফুলে ফেঁপে ঢোল হয়ে যায়। যার জেরে ২০২০ সালের নভেম্বরে কেন্দ্র সরকার কয়লা চুরি কান্ডের পর্দাফাঁস করতে প্রথমে সিবিআই ও পরে ইডি তদন্ত শুরু করে। কিন্ত, এরই মাঝে এদিন কলকাতায় এক প্রভাবশালী আইনজীবীর তত্ত্বাবধানে ফের কয়লা কারবারের নতুন করে তোড়জোড় শুরু হওয়ায় বিস্ময় ছড়িয়েছে শিল্পাঞ্চলের পুলিশ ও রাজনৈতীক মহলে।

উল্লেখ থাকে যে – বাম আমলে এই কয়লা মাফিয়াদের ঔদ্ধত্য এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে, রাজ্যের তৎকালীন সৎ, স্বচ্ছ মুখ্যমন্ত্রীকে বর্ধমানের একটি সভায় সরাসরি অনুদানের চেক দেওয়ার নামে মঞ্চে উঠে পড়ে আসানসোলের কুখ্যাত কালা সিং নামে এক কয়লা মাফিয়া। তারপর থেকে দামোদর ও অজয় নদ দিয়ে বয়ে গিয়েছে অনেক জল।

কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই, ইডি ও আয়কর দপ্তর গত চার বছরে পরপর শিল্পাঞ্চলে হানা দিয়ে আবারো গ্রেপ্তার করে কয়লা ব্যবসার কুখ্যাত বাদশা লালা সহ কয়লা উত্তোলন সংস্থার একাধিক বড় আধিকারিক, পুলিশকর্তা, ইসিএল আধিকারিক, ব্যবসায়ী সহ বেশ কয়েকজনকে। রাজ্যের প্রথম সারীর নেতা মন্ত্রীদের নামেও অভিযোগ আছে বলে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থাগুলি দাবি করে আসছে। যদিও শাসক তৃণমূল কংগ্রেস কেন্দ্রীয় সরকারের এই গোয়েন্দা বাহিনীদের রাজ্যে তৎপরতা শুধুমাত্র প্রতিহিংসা মূলক রাজনীতির প্রতিফলন বলে দাবি করে আসছেন।

তবে তারই মাঝে চোরা গুপ্তা ভাবে অবৈধ কয়লার কারবার সংগঠিত হয় প্রায় পশ্চিম বর্ধমান জেলার অনেক কটি থানা এলাকায় বলে অভিযোগ। এরই মধ্যে একদা অবৈধ কয়লা ব্যবসার বেতাজ এক বাদশা রাজু ঝা হঠাৎই দুষ্কৃতীদের গুলিতে নিহত হন পূর্ব বর্ধমানের শক্তিগড়ের ল্যাংচা হাবের সামনে। শোনা যায় নাকি একদা তার এক ব্যবসায়িক বন্ধু’র ষড়যন্ত্রেই নাকি প্রাণ যায় ওই কুখ্যাত কয়লা মাফিয়ার। এই ঘটনার পর থেকেই গোটা শিল্পাঞ্চলের ‘টুকরা-টুকরা গ্যাং’ আবার একত্রিত হয়ে সংগঠিত অবৈধ কয়লা কারবারের সূচনা করে। এবার তার নাম দেওয়া হয় ‘ডিও কয়লার পাস’। অর্থাৎ কয়লা উত্তোলন সংস্থার কাছ থেকে পাওয়া ডেলিভারি অর্ডারের চালানের বৈধ কাগজ ।

একটি বিশ্বস্ত সূত্র মারফত জানা গেছে, প্রাক্তন কয়লা মাফিয়া মৃত রাজু ঝায়ের অবৈধ কয়লা চোরা চালান সিন্ডিকেটের সাগরেদদের মধ্যে বেশ কয়েকজন যেমন, তারকেশ্বর, মিশ্রা, পাপ্পু, লোকেশ, রণবীর, আখতার, মইজরুল, রঞ্জিত, নিরঞ্জন, সাজিদ,পার্থ, লাটুয়া, ছোট্টু, সজল, সদু , কান্তা, গিতেশ, গৌতম, ভিকি, জীতেন্দ্র সহ আরো বেশ কয়েকজন দুষ্কৃতি মিলে একটি অবৈধ কয়লা কারবারের নতুন সিন্ডিকেট তৈরি করে কয়লার চোরা চালান চালিয়ে যাচ্ছে শিল্পাঞ্চলে।

সুত্র মারফত এও জানা গেছে এই অবৈধ কয়লা সিন্ডিকেটের কর্ণধার এখন নাকি স্বয়ং কৃষ্ণ মুরারি নামের এক দুষ্কৃতী। কিন্তু কে এই কৃষ্ণ মুরারি ? জানা গেছে, রানীগঞ্জ শহরে খুচরো লবণ বিক্রেতা কৃষ্ণাই এখন কয়লা সিন্ডিকেটের নতুন ‘ডন’। এই কৃষ্ণ মুরারি নাকি কলকাতা হাইকোর্টে যাওয়া আসা করা প্রথম সারির এক তৃণমূল কংগ্রেস নেতার যোগা-যোগে ও ছাত্র ছায়ায় এই অবৈধ কয়লা সিন্ডিকেটের নতুন ‘প্যাড’ চালু করতে চলেছে শিল্পাঞ্চলে খুব শিগ্রি। জানা গেছে এই তথাকথিত তৃণমূল কংগ্রেস নেতার নামে নাকি কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ইডি ও সিবিআই’র কাছে বহু অভিযোগ আগে থেকেই জমা রয়েছে।

সূত্র মারফত জানা গেছে, গত তিন মাস যাবত ধরে এই অবৈধ কয়লা সিন্ডিকেটের অংশীদাররা অনুমতি পাওয়া সঠিক জায়গায় টাকা পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়েছে সময় মত। তাই এই কয়লা সিন্ডিকেট এখন বেশ চাপে রয়েছে। ওই চাপমুক্ত হতেই আবার শিল্পাঞ্চলে নতুন করে ‘প্যাড’ চালু করার পরিকল্পনা নিয়েছে ওই কয়লা মাফিয়া সিন্ডিকেট বলেও জানা গেছে। এই নতুন অবৈধ কয়লা ‘প্যাডের’ দাম ঠিক করা হয়েছে ট্রাক পিছু ১ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা। প্রতিদিন প্রায় ১৭০ থেকে ১৮০টি কয়লা বোঝাই ট্রাক ও লরি শিল্পাঞ্চল থেকে অবৈধ অনুমতি পত্র ‘প্যাড’ নিয়ে নিশ্চিন্তে পাড়ি দিবে রাজ্য থেকে ভিন রাজ্যে। শুধু অবৈধ কয়লার চোরা চালানোর জন্যই ‘প্যাড’ ব্যবহার করা হবে এমনটা নয়। এবার থেকে শিল্পাঞ্চলে অবস্থিত দামোদর ও অজয় নদ থেকে বালি বোঝাই করা ট্রাক ও লরিকেও দিতে হবে ‘প্যাড’র জন্য নগদ ৭০,০০০ হাজার টাকা। অর্থাৎ এক কথায় বলতে গেলে এবার থেকে অবৈধ কয়লা ও বালির প্রতিটি ট্রাক ও লরির জন্য ‘প্যাড’ ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক করতে চলেছে এই কয়লা মাফিয়া সিন্ডিকেটের কর্মকর্তারা। বেশ কিছু নিচু তলার পুলিশ কর্মীরা এই অবৈধ কয়লা ব্যবসার সাথে সরাসরি জড়িত বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।

অন্যদিকে আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের বিশেষ গোয়েন্দা বাহিনী সর্বদা সজাগ দৃষ্টি রেখে চলেছে এই কয়লা মাফিয়া সিন্ডিকেটের গতিবিধির ওপর বলেও জানা গেছে। আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের একটি সূত্র মারফত জানা গেছে, ইতিমধ্যেই পুলিশের কাছে এই সিন্ডিকেট সংক্রান্ত বেশ কিছু খবর এসেছে। সমস্ত ঘটনার কথা লিখিত ভাবে উচ্চ পুলিশ আধিকারিকদের পাঠানোও নাকি হয়েছে। পুলিশের উচ্চ আধিকারিকদের অনুমতি পেলেই আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের দক্ষ ও নির্ভীক পুলিশ আধিকারিকরা এই অবৈধ কয়লা সিন্ডিকেটের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কড়া আইনি ব্যবস্থা নেবে বলে জানা গেছে।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments