মনোজ সিংহ, দুর্গাপুরঃ– রাজ্যের মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঐকান্তিক প্রয়াস ও অনুপ্রেরণায় পশ্চিমবঙ্গের স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলা হস্তশিল্পীদের নতুন দিশা দেখাচ্ছে সৃষ্টিশ্রী মেলা। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলার বাছাই করা হস্তশিল্পের সম্ভার নিয়ে গত বছর দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের প্রাণকেন্দ্র সিটি সেন্টারের দুর্গাপুর হাটে শুরু হয় প্রথমবারের জন্য সৃষ্টিশ্রী মেলা। গতবারের ওই মেলাতে ক্রেতাদের অভূতপূর্ব সাড়া পেয়ে ও অনুপ্রাণিত হয়ে রাজ্য সরকারের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দপ্তর ও রাজ্য তথ্য ও সম্প্রচার বিভাগের ব্যবস্থাপনায় এবার দ্বিতীয় বর্ষেও সিটি সেন্টার সংলগ্ন দুর্গাপুর হাটে আয়োজন করেছে সৃষ্টিশ্রী মেলার। শুক্রবার ওস্তাদ বিক্রম ঘোষের তবলা লহরা সহ তাঁর সম্প্রদায়ের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সূচনা হয় এই মেলার। ১৭ই জানুয়ারি থেকে শুরু হয়ে মেলা চলবে ২৩ শে জানুয়ারি পর্যন্ত।
এই সৃষ্টিশ্রী মেলাতে ৯২ টি স্টল রাখা হয়েছে। যেখানে রাজ্যের সাতটি জেলা থেকে আগত মহিলা হস্তশিল্পীরা তাঁদের শিল্প সামগ্রী বিপণন করছেন। গত বছর এই মেলাতে ১ কোটি ৬২ লক্ষ টাকার বিকিকিনি হয়েছিল। এ বছরের সেই লক্ষ্যমাত্রা তিন কোটি টাকা ধার্য করা হয়েছে বলে জানান উদ্যোক্তারা। এছাড়াও এই মেলায় আগত মানুষজনের মনোরঞ্জনের জন্য রোজ নামিদামি শিল্পীদের নিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। কে নেই সেই তালিকায়! অন্য়না চক্রবর্তী, শ্রীরাধা বন্দ্যোপাধ্যায়,অন্বেষা দত্তগুপ্ত, রুপঙ্কর, অনিন্দ্য-পটা, ফকিরা, তন্ময় কর অ্যান্ড ফ্রেন্ডস সহ একাধিক শিল্পী। শিল্প শহর দুর্গাপুরের মানুষের ঢল নেমেছে সৃষ্টিশ্রী মেলার অনবদ্য সব সামগ্রিক দেখতে ও কিনতে, রয়েছে শীতকালের বাংলার বিশেষ মিষ্টান্নর বিপণনের ব্যবস্থা।
গতকাল (২১/০১/২৫) মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিখ্যাত সুরকার ও গায়ক রূপঙ্কর বাগচীর সঙ্গীতা অনুষ্ঠান ছিল সৃষ্টিশ্রী মেলা প্রাঙ্গণের অস্থায়ী মঞ্চে। কিন্তু তার আগে দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের মহকুমা শাসক ডাক্তার সৌরভ চ্যাটার্জী এক বৈঠকি আড্ডায় মিলিত হন মেলা প্রাঙ্গণের অস্থায়ী মঞ্চে। পার্শ্ববর্তী জেলার সংগীতের স্বর্গভূমি বিষ্ণুপুরে জন্ম দুর্গাপুর মহকুমা শাসক ডাক্তার সৌরভ চ্যাটার্জির। বিখ্যাত বিষ্ণুপুর ঘরানার ঐতিহ্য ও নিজের মায়ের কাছে থেকে পাওয়া সংগীতের অনুশীলন নিয়ে গতকাল সন্ধ্যায় মেলা প্রাঙ্গনে উপস্থিত হাজারো দর্শকে মন্ত্রমুগ্ধ করলেন তার গানের মালঞ্চে। পশ্চিম বর্ধমান জেলার গৌরব, বিখ্যাত কবি কাজী নজরুল ইসলামের বিখ্যাত গান দিয়ে শুরু করেন তিনি তার বৈঠকে আড্ডা। তারপর থেকেই বাঁধভাঙ্গা উল্লাস ও আনন্দে মেতে ওঠে উপস্থিত মেলা প্রাঙ্গণের হাজারো দর্শক তার গানের মালঞ্চে। পর পর হিন্দি, বাংলা, লোকসঙ্গীতে মাতিয়ে তোলেন উপস্থিত সকলকে। মেলার সকল দর্শক এদিন মহকুমা শাসক ডাক্তার সৌরভ চ্যাটার্জির এই প্রতিভা দেখে অবাক হয়ে যান। দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের মতন একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গার মহকুমার শাসক হয়েও তার এত দায়িত্ব,ব্যস্ততার মধ্যেও কাজের চাপের কাছে নতি স্বীকার না করে, সরল মনে মায়ের কাছে পাওয়া অনুশীলনে মন্ত্রমুগ্ধ করা গানে , গতকাল দুর্গাপুর সৃষ্টিশ্রী মেলার নতুন প্রাণের সঞ্চার করলেন।
শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন জায়গা থেকে সৃষ্টিশ্রী মেলায় আসা মানুষজন এদিন বিশ্বাসই করতে চাইছিলেন না, যে মঞ্চে যিনি এখন সংগীত পরিবেশন করছেন তিনি একজন মহকুমা শাসক। ডক্টর সৌরভ চ্যাটার্জী তার নিজের গানের প্রতি ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও আনুগত্যে কখন যে একজন নামি শিল্পী হয়ে উঠেছেন জনগণের কাছে তা তিনি নিজেও জানতে পারেননি গতকাল সন্ধ্যায় সৃষ্টিশ্রী মেলাতে।
শিল্পাঞ্চল দূর্গাপুরের বাসিন্দারা দুর্গাপুর মহকুমা শাসকের এহেন নতুন রূপ দেখে অভিভূত হয়ে যান। মঞ্চের সামনে উপস্থিত সকল দর্শকের তাকে বারবার নতুন গানের অনুরোধ দেখে সহজেই বোঝা গিয়েছিল মহকুমা শাসক ডক্টর সৌরভ চ্যাটার্জী মানুষের সরল মনের অন্তরে নিজের জায়গা করে নিয়েছেন। সম্ভবত, বাঁকুড়ার বিখ্যাত বিষ্ণুপুর শহরে জন্ম নেওয়ার ফলেই তার রক্তে মিশে গিয়েছে সংগীতের প্রেমের মাধুর্য। এদিন বিখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী ও সুরকার রূপঙ্কর বাগচীর অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কথা ছিল সন্ধ্যে সাড়ে সাতটা থেকে। শিল্পী রুপঙ্কর তার সহকর্মীদের নিয়ে মঞ্চের নিচে গ্রীনরুমে অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু তিনিও উপস্থিত দর্শকের বাঁধভাঙ্গা উল্লাস ও আনন্দে যাতে কোন খামতি না হয়, তাই চুপচাপ গ্রীন রুম থেকে বসেই ডাক্তার সৌরভ চ্যাটার্জির গানের আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে সুরের সাগরে ডুব দিয়েছিলেন। সত্যিই, একজন প্রকৃত শিল্পী জানে আরেক জন শিল্পীকে কি ভাবে সম্মান দিতে হয়।
এদিন সৃষ্টিশ্রী মেলা প্রাঙ্গণের অস্থায়ী মঞ্চে যেন নতুন প্রাণের সঞ্চার হল ডাক্তার সৌরভ চ্যাটার্জির গানের মালঞ্চে। রাজ্যের মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী যে সকল প্রকল্প ও ব্যবস্থাপনা করেন তার মধ্যে তিনি বাছাই করা মানুষজনকে যে সুযোগ দেন তার উজ্জ্বল উদাহরণ দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের মহকুমা শাসক ডক্টর সৌরভ চ্যাটার্জী। এদিন শুধু উপস্থিত দর্শকরাই নয় বেঙ্গল ডিজিটাল মিডিয়া ফাউন্ডেশন এর পক্ষ থেকে ডাক্তার সৌরভ চ্যাটার্জির অনবদ্য সংগীত পরিবেশন এর জন্য তাকে সম্মানিত করেন মঞ্চে। দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের সকল বাসিন্দা ডাক্তার সৌরভ চ্যাটার্জির শেষ গান “কাভি আলবিদা না কেহনা” শেষ হওয়ার সাথে সাথেই এক সুরে সকল দর্শক গেয়ে ওঠেন “তোমায় হৃদ মাঝারে রাখবো ছেড়ে দেব না”। উপস্থিত সকলেই প্রমাণ করে দিলেন দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চল সৃষ্টির শহর, কৃষ্টির শহর,সংস্কৃতির শহর, শিল্পের শহর সহ অফুরন্ত প্রেমের শহর।