eaibanglai
Homeএই বাংলায়সাত দফা ভোটে চূর্ণবিচূর্ণ হবে বিজেপি, অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ের হুঁশিয়ারী

সাত দফা ভোটে চূর্ণবিচূর্ণ হবে বিজেপি, অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ের হুঁশিয়ারী

সংবাদদাতা, আসানসোল:- প্রথম দফার ভোটে মাথা ভাঙা হয়েছে। দ্বিতীয় দফার ভোটে ভেঙেছে ঘাড়। তৃতীয় দফায় মেরুদণ্ড। চতুর্থ দফায় আপনারা ভাঙবেন কোমর। পঞ্চম দফায় ভাঙবে হাত ও কনুই। ষষ্ঠ দফায় ভাঙা যাবে পা ও হাঁটু। আর সবচেয়ে সপ্তম দফার ভোটে ১ জুন ডায়মন্ডহারবারে আমি ভাঙবো সারা শরীর। এই ভাবেই বিজেপি হবে চূর্ণবিচূর্ণ। শুক্রবার বিকেলে আসানসোলের রোডশোর শেষে এইভাবে বিজেপিকে হুঁশিয়ারী দিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা ঘাসফুলের সেকেন্ড ইন কম্যান্ড অভিষেক বন্দোপাধ্যায়।

রোডশো শেষে হটন রোড মোড়ের গাড়ির উপরে সবমিলিয়ে আধঘন্টা বক্তব্যে অভিষেক বন্দোপাধ্যায় নিয়োগ দূর্নীতি, সন্দেশখালি ইস্যু থেকে ২০২২ সালে আসানসোলে উপনির্বাচনে জেতা থেকে এবারের নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী নিয়ে বেশ আক্রমণাত্মক ছিলেন। তিনি বলেন, “২০১৪ ও ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে আসানসোলের মানুষ বিজেপিকে এখান থেকে জয়ী করেছিলেন। কিন্তু আট বছরে বিজেপি আসানসোলের জন্য কিছুই করেনি। তাই ২০২২ সালে, যখন এখানে উপনির্বাচন হয়েছিল, আসানসোলের মানুষ শত্রুঘ্ন সিনহাকে আশীর্বাদ করেছিলেন। এর পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দেখানো পথও শত্রুঘ্ন সিনহার চেষ্টায় আসানসোলে গত দুবছরে অনেক উন্নয়ন হয়েছে। এখন আবার নির্বাচনের পালা এসেছে। তাই শত্রুঘ্ন সিনহাকে গতবারের চেয়ে বড় ব্যবধানে জেতাতে হবে।”

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “একদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সমগ্র বাংলার মানুষের সাথে আসানসোলের উন্নয়ন করতে চান। কিন্তু বিজেপি তা করতে দিচ্ছে না। বাংলার উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ করা তহবিল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।” রোডশোর শেষে সভা থেকে তিনি বলেন, “এখন আসানসোলের মানুষদের ঠিক করতে হবে যে তারা বাংলার ১০ কোটি বেশি বসবাসকারী মানুষের উন্নয়নের জন্য যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কাজ করছেন, তাকে সমর্থন করবেন, না বাংলা বিরোধী বিজেপিকে সমর্থন করবেন।”

বিজেপি আসানসোল থেকে সুরেন্দ্র সিং আলুওয়ালিয়াকে প্রার্থী করেছে। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “যখন নির্বাচন আস তখন বিজেপি যে কোনো বাঙালিকে রোহিঙ্গা মনে করে। একজন মুসলমানকে পাকিস্তানি বলে। আর বিজেপির এক নেতা একজন শিখ আইপিএস অফিসারকে খালিস্তানি বলেছেন। আমার প্রশ্ন, এমন একটি দলের প্রতিনিধিকে আসানসোলের মানুষেরা কি বিবেচনা করবেন?”

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ, বিজেপির নেতারা শুধুমাত্র নির্বাচনের সময় জনগণের কাছে আসেন। কিন্তু নির্বাচনের পরে দেখা যায় না। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে, নরেন্দ্র মোদি ২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে পোলো গ্রাউন্ডে একটি নির্বাচনী জনসভায় ভাষণ দিয়েছিলেন। তখন তিনি আসানসোলের লোকদের বলেছিলেন, তারা আসানসোল থেকে বাবুল চাই। আসানসোলের মানুষ তাকে বাবুল দিয়েছিলেন। আজ সেই বাবুল সুপ্রিয় নরেন্দ্র মোদীর হাত ছেড়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে এসেছেন। কারণ তিনি মোদীর চেয়ে দিদির গ্যারান্টিতে বেশি আস্থা রেখেছেন। তার কটাক্ষ, বিজেপি আসানসোলকে ” ডাম্পিং গ্রাউন্ড মনে করছে। এসএস আলুওয়ালিয়াকে এনে প্রার্থী করলো। যিনি এর আগে পরপর ৫ বছর করে দুবার দার্জিলিং ও বর্ধমান দূর্গাপুর কেন্দ্রে জিতে সাংসদ ছিলেন। কেন তার বারবার কেন্দ্র চেঞ্জ হয়? তিনি যদি কাজ করেন, তাহলে সেখানকার মানুষেরা তাকে আবার চাইবেন। আসল কথা হলো, ঐ দুজায়গায় উনি ৫ মিনিটও সময় দেননি।

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপির বিরুদ্ধে বাংলার পাশাপাশি আসানসোলকে সবদিক থেকে বঞ্চিত করার অভিযোগ করেছেন। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বিজেপির নেতারা ক্ষমতায় এলে বাংলায় লক্ষ্মী ভান্ডার প্রকল্প বন্ধ করে দেবে। সারাদেশে সন্দেশখালি ইস্যু নিয়ে তোলপাড় হয়েছিল। কিন্তু গত কয়েকদিনে প্রমাণিত হয়েছে যে, এই সব বিজেপির ষড়যন্ত্র ছিল। সেখানকার মহিলারা বলেছেন, কোন ধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি। আসানসোলবাসীর কাছে আমি জানতে চাই, সন্দেশখালির এই অপমান আসানসোলের অপমান কিনা? যে দলের নেতারা এই ধরনের অপমান করছেন তাদের কি গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটের মাধ্যমে সঠিক শিক্ষা দেওয়া উচিত নয়? আসানসোল সহ বাংলার জনগণ এই লোকসভা নির্বাচনে ঐ দলের বিরুদ্ধে ভোট দিয়ে ক্ষমতাচ্যুত করবে। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচনে সঠিক শিক্ষা দেওয়া হবে।”

আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী শত্রুঘ্ন সিনহার সমর্থনে শুক্রবার সাড়ে তিনটের সামান্য কিছু সময় পরে আসানসোলের জিটি রোডের উষাগ্রাম থেকে রোডশো শুরু করেন তৃনমুল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দোপাধ্যায়। তার সঙ্গে বিশেষ হুড খোলা গাড়িতে ছিলেন আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রের তৃনমুল কংগ্রেসের প্রার্থী শত্রুঘ্ন সিনহা, রাজ্যের আইন ও শ্রম মন্ত্রী মলয় ঘটক, পশ্চিম বর্ধমান জেলা সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, আসানসোল পুরনিগমের মেয়র বিধান উপাধ্যায়, আসানসোল দূর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদ বা আড্ডার চেয়ারম্যান বিধায়ক তাপস বন্দোপাধ্যায়। এছাড়াও ছিলেন রাজ্য সম্পাদক ভি শিবদাসন তরফে দাসু। এর আগে সোড়া তিনটে নাগাদ আসানসোল উষাগ্রাম হাইস্কুল মাঠে অস্থায়ী হেলিপ্যাডে নামে অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ের চপার।

এদিকে, অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ের এই রোডশোয়ের জন্য উষাগ্রাম থেকে হটন রোড পর্যন্ত জিটি রোড যান চলাচল দুপুর দুটো থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়। সব জায়গায় ব্যারিকেড লাগানো হয়েছে। দড়ি দিয়ে আটকানো হয়েছে জিটি রোড সংযোগকারী সব বাইলেন। গোটা রাস্তায় বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। রোডশো শেষ করে বক্তব্য রাখার পরে অভিষেক বন্দোপাধ্যায় ফিরে যান।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments