শুভ্রাচল চৌধুরী, বাঁকুড়াঃ- বাঁকুড়ার শুশুনিয়া পাহাড়ের কোলে প্রকৃতির মাঝে খোলা আকাশের নিচে ধামসা মাদলের বোল আর আদিবাসী রমনীদের নাচের তালে পুরানো বছরকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানাল শিউলিবনা গ্রামের আদিবাসী মানুষেরা। প্রকৃতির মাঝে এমন বর্ষবরণ দেখতে শুশুনিয়ায় বেড়াতে যাওয়া হাজার হাজার পর্যটকও পা বাড়ালেন শিউলিবনার রাস্তায়। শত শত বছরের প্রাচীন আদিবাসী সংস্কৃতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে ভিন্ন ধারায় পর্যটকরাও বরণ করে নিলেন নতুন বছরের নতুন সুর্যকে।
বাঁকুড়ার ছাতনা ব্লকের শুশুনিয়া পাহাড় ঘেঁসা শিউলিবনা গ্রাম। গ্রামের প্রান্তের মাঠে মাটির নিকানো মঞ্চে শুরু হয় এই খেরওয়াল তুকৌ উৎসব। কথিত আছে আজ থেকে প্রায় তিন দশক আগে শময়িতা মঠের প্রতিষ্ঠাতা সন্যাসী ধারতি বাবা শুশুনিয়ায় এসেছিলেন বছরের শেষ দিনে। ভালো লেগে যায় তাঁর এই শিউলিবনা গ্রামের মানুষের সহজ সরল জীবনযাপন। এরপর মূলত তাঁর উদ্যোগেই ওই গ্রামে শুরু হয় উন্নয়নের কাজ। দ্রুত বদলে যেতে থাকে গ্রামের মানুষের জীবনযাত্রার মান। তিন দশক আগে ধারতী বাবার আগমনের দিনটিকে স্মরনীয় করে রাখার পাশাপাশি বর্ষ বিদায় ও নববর্ষকে স্বাগত জানাতে তখন থেকেই শুরু হয় খেরওয়াল তুকৌ উৎসব। এখন শুধু বাঁকুড়া জেলা নয়, পুরুলিয়া, দুই মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, দুই বর্ধমান, মালদা, মুর্শিদাবাদ সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আদিবাসী মানুষেরা ধামসা মাদল নিয়ে হাজির হন শুশুনিয়ার কোলে। আসাম, ওড়িশা, ঝাড়খন্ড থেকেও আসেন আদিবাসী শিল্পীরা। রাতভর খোলা আকাশের নীচে চলে নাচ গান। নববর্ষের সকালে শুশুনিয়া পাহাড়ের কোল বেয়ে যখন নতুন সুর্য একরাশ আশা আর স্বপ্ন নিয়ে উঠে আসে তখন শিউলিবনা গ্রামের প্রান্তে আদিবাসীরা ধামসা মাদলের দ্রিমি দ্রিমি বোল আর আদিবাসী মহিলাদের পায়ের ছন্দে স্বাগত জানায় নতুন সুর্যকে।