সঙ্গীতা চ্যাটার্জী (চৌধুরী),বহরমপুরঃ- অনেক সময় আমরা যখন কোন দুঃখ কষ্ট পাই তখন আমরা ঠাকুরকে বলি হে ভগবান আমি এত কিছু করেও কেন এত দুঃখ কষ্ট পাচ্ছি? হয়তো সত্যিই তাই। হয়তো সত্যিই আমরা অনেক ব্রত উপোস করেছি, অনেক জপ তপ করেছি, অনেক ধ্যান করেছি অনেক মালা করেছি কিন্তু তা সত্ত্বেও আমাদের কষ্ট ভোগ করতে হচ্ছে। কারণ আমরা আমাদের মনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি।
ভেবে দেখুন আমরা যখন ভগবানের নাম করি বা জপ করি একমাত্র সেই মুহূর্তটুকু আমাদের মন যাবতীয় হিংসা কূটনৈতিক ভাবনার থেকে দূরে থাকে, দিনের মধ্যে এই সময়টা হয়তো খুবই সংক্ষিপ্ত কিন্তু বাদবাকি দিনের মধ্যে ২৪ টা ঘন্টা আমরা কী করি? আমরা পরনিন্দা, পরচর্চা করি। আমরা লোকের দোষ গুণ নিয়ে আলোচনা করি। আমরা নানান রকম অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা বলি যেগুলি অপরের মনে আঘাত দেয়, এইগুলিও কিন্তু আমাদের কর্মফল। কারণ শাস্ত্রে বলেছে তুমি যা যা কর্ম করবে তার প্রত্যেক তার কর্মফল তোমাকে ভোগ করতে হবে। তাই আমি বা আপনি শুধু আমাদের ভগবানের নাম জপ করার মুহূর্তটুকু দেখতে পাচ্ছি কিন্তু ভগবান আমাদের সেই ২৪ ঘন্টা দেখতে পাচ্ছেন যে ২৪ ঘন্টা আমরা কখনো অন্যের অমঙ্গল কামনা করেছি বা অন্যের প্রতি অসূয়া প্রবন হয়ে পড়েছি, তাই মনকে নিয়ন্ত্রণ করুন মনকে ২৪ টা ঘন্টায় ইতিবাচক চিন্তাভাবনা এবং পজিটিভ এনার্জি দিয়ে পরিপূর্ণ করে রাখুন যাতে সে অন্য কারোর বিষয়ে চর্চা করার সময়ই না পাই।
এখন আপনার মনের মধ্যে প্রশ্ন থাকতে পারে যে মনকে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেন? এর উত্তরে আমি বলবো স্বামী বিরজানন্দ মহারাজের কথা। মহারজ বলেছেন, “ মনকে সব সময়ে কোন না কোন কাজে লাগিয়ে রাখবে, কখনো বেকার বসে থাকতে দেবে না, দিলেই সে ভিরকুটি করবে ও তোমায় জ্বালাবে । যখন মন একান্ত খারাপ হবে, বা কোন প্রলোভন ও মানসিক উত্তেজনা চেষ্টা করেও এড়াতে সমর্থ হচ্ছ না দেখবে, তখন ঠাঁইনাড়া হবে, সেই প্রতিকূল আবহাওয়া থেকে সরে পড়বে । প্রান্তরের মুক্ত বায়ুতে খুব হনহন করে তিন-চার মাইল বেড়িয়ে আসবে । তাহলে সেই নিম্নগামী ভাবটা কেটে যাবে, অন্ততঃ সেই সময়ের জন্যেও । প্রলোভন থেকে বাঁচবার মাত্র দুইটি উপায় আছে—হয় যুদ্ধ নয় পলায়ন । তবে মনের কাছ থেকে পালিয়ে থাকবার তো জো নেই , হয় তাকে বশ করতে হবে, নয় তো তার ইঙ্গিতে ওঠবোস করতে হবে।”