সঙ্গীতা চ্যাটার্জী(চৌধুরী), বহরমপুরঃ- আজ ৭ ই নভেম্বর বিকেল ৪ টে ১৫ থেকে রাস পূর্ণিমার তিথি শুরু হবে এবং আগামী কাল অর্থাৎ ৮ ই নভেম্বর বিকেল ৪ টে ৩১ পর্যন্ত রাস পূর্ণিমার এই তিথি থাকবে। রাস পূর্ণিমার এই তিথির সাথে জড়িয়ে আছে তুলসী দেবীর কাহিনী। কথিত আছে মহা পরাক্রমশালী জলন্ধর অসুরের স্ত্রী ছিলেন সতী বৃন্দা তিনি আবার ছিলেন বিষ্ণু ভক্ত। জলন্ধরের প্রতি দেবাদিদেব মহাদেবের এইরূপ আশীর্বাদ ছিল যে, তার স্ত্রীর সতীত্ব যতক্ষণ বজায় থাকবে ততক্ষণ তার অমরত্ব থাকবে।
বৃন্দা মহাসতী ছিলেন তাই জলন্ধরের মৃত্যুর কোন সম্ভাবনা ছিল না, তাই সে প্রবল পরাক্রমে অসুরদের উপর এবং তিন লোকের উপর অত্যাচার করতে থাকে। এই পরিস্থিতিতে ভগবান বিষ্ণু তার মায়া সৃষ্টি করেন এবং নিজে জলন্ধরের ছদ্মবেশ নিয়ে সতী বৃন্দার কাছে যান। সতী বৃন্দা প্রথমে বুঝতে পারেন নি যে, তার স্বামীর ছদ্মবেশে অন্য কেউ তার কাছে এসেছে, তাই জলন্ধরের মৃত্যু হয় যুদ্ধক্ষেত্রে। পরবর্তীতে সতী বৃন্দা যখন বুঝতে পারেন ইনি তার স্বামী নন, ইনি তার আরাধ্য নারায়ণ, তখন তিনি রাগান্বিত হয়ে অভিশাপ দেন যে, ভগবান নারায়ণ তার সাথে করা অন্যায়ের জন্য পাষাণে পরিণত হবেন। অভিশাপ দেওয়ার পরও মুহূর্তেই বৃন্দা নিজের ভুল বুঝতে পারেন, কিন্তু তার আর কিছু করার ছিল না, তিনি তখন ভগবানের কাছে ক্ষমা চান এবং কাঁদতে থাকেন এই বলে যে সমগ্র জগত তাকে অসতী বলবে। এরপর তিনি প্রাণ ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেন।
ভগবান নারায়ন তখন বলেন তিনি স্বেচ্ছায় বৃন্দার অভিশাপ গ্রহণ করলেন। কিন্তু বৃন্দাকে যাতে কেউ কখনো অসতী না বলে সেই কারণে তিনি বলেন যে বৃন্দার দেহত্যাগের পর তার চুল থেকে তুলসী বৃক্ষ সৃষ্টি হবে আর এই তুলসী বৃক্ষের সাথে নারায়ণের শালগ্রামশীলার বিবাহ হবে। এই তুলসী মহাসতী রূপে গণ্য হবেন এবং এই তুলসী স্মরণে ও পুজোয় সমস্ত পাপ ক্ষয় হবে, একইসাথে ভগবান নারায়ন এও বলেন যে তুলসী দেবী ভিন্ন নারায়ন পুজো কখনোই সম্পন্ন হবে না। এরপর ভগবানের শালগ্রাম শিলা রূপের সাথে তুলসী দেবীর বিবাহ হয় এই রাস পূর্ণিমা তিথিতেই আর তুলসী দেবীর অভিশাপে পাষাণে পরিণত হওয়া নারায়ণ শালগ্রাম শিলা রূপে পরিচিতি পায় ও ঘরে ঘরে পূজিত হতে থাকে।