eaibanglai
Homeএই বাংলায়আজ রমা একাদশীর মাহাত্ম্য কথা শুনলেই সকল পাপ থেকে মুক্ত হওয়া যায়!

আজ রমা একাদশীর মাহাত্ম্য কথা শুনলেই সকল পাপ থেকে মুক্ত হওয়া যায়!

সঙ্গীতা চৌধুরীঃ- আজ পবিত্র রমা একাদশী। এই একাদশীর ব্রত মাহাত্ম্য কথাই আজকে আপনাদেরকে বলবো। মহারাজ যুধিষ্ঠির ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে এই পবিত্র রমা একাদশীর মাহাত্ম্য কথা জিজ্ঞেস করেন! শ্রীকৃষ্ণ এই একাদশীর মাহাত্ম্য কথা বলতে গিয়ে, বলেন,“প্রাচীনকালে মুচুকুন্দ নামে একজন বিখ্যাত রাজা ছিলেন। দেবরাজ ইন্দ্র, যম, বরুন ও ধনপতি কুবেরের সাথে তার ছিলো বন্ধুত্বের সম্পর্ক। এমনকি ভক্ত শ্রেষ্ঠ বিভীষণের সাথেও তার ভালো সম্পর্ক ছিলো। তিনি ছিলেন একজন বিষ্ণু ভক্ত ও সত্যপ্রতিজ্ঞ। ধর্ম অনুযায়ী তিনি রাজ্য শাসন করতেন আর চন্দ্রভাগা নামে তার এক কন্যা ছিলো, চন্দসেনের পুত্র শোভনের সাথে তার বিবাহ হয়।এরপর শোভন এক সময় তার শ্বশুর বাড়ি যায়। দৈবক্রমে সেই দিন ছিল একাদশী তিথি। স্বামীকে দেখে পতি পরায়না চন্দ্রভাগা মনে মনে চিন্তা করতে লাগল—হে ভগবান! আমার স্বামী অত্যন্ত দুর্বল। তিনি ক্ষুধা সহ্য করতে পারেন না। এখানে আমার পিতার শাসন খুবই কঠোর। দশমীর দিন তিনি নাগরা বাজিয়ে ঘোষণা করে দিয়েছেন যে একাদশীতে আহার নিষিদ্ধ। আমি এখন কি করি! রাজার নিষেধাজ্ঞা শুনে শোভন তার প্রিয়তমা পত্নীকে বললো, “হে প্রিয়ে, এখন আমার কি কর্তব্য তা আমাকে বলো।” উত্তরে রাজকন্যা বলল—“হে স্বামী! আজ এই গৃহে এমনকি রাজ্য মধ্যে কেউই আহার করবে না। মানুষের কথা তো দূরে থাকুক, পশুরা পর্যন্ত অন্ন জল মাত্র গ্রহণ করবে না। হে নাথ! যদি তুমি এ থেকে পরিত্রাণ চাও তবে নিজগৃহে প্রত্যাবর্তন করো। এখানে আহার করলে তুমি সকলের নিন্দা ভাজন হবে এবং আমার পিতাও ক্রুদ্ধ হবেন। এখন বিশেষ ভাবে বিচার করে যা ভালো হয়, তুমি তা ই করো।”

সাধ্বী স্ত্রীর এই কথা শুনে শোভন বললেন,“হে প্রিয়ে! তুমি ঠিক বলেছ। কিন্তু আমি গৃহে ফিরে যাব না। এখানে থেকে একাদশী ব্রত পালন করব। ভাগ্যে যা লেখা আছে তা অবশ্যই ঘটবে।” এই ভাবে শোভন ব্রত পালন করলো, সমস্ত দিন অতিক্রান্ত হয়ে রাত্রি হয়ে গেলো, বৈষ্ণবদের কাছে এই রাত ভীষণ আনন্দের কিন্তু শোভনের কাছে তা ছিলো বড়ই দুঃখের, কেননা ক্ষুধা তৃষ্ণায় সে ক্রমে দুর্বল হয়ে পড়ে ও রাত্রির পর সূর্যোদয় হলে তার মৃত্যু হয়। রাজা মুচুকুন্দ সাড়ম্বরে তার শবদাহ কার্য সুসম্পন্ন করলেন। চন্দ্রভাগা স্বামীর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সমাপ্ত করে পিতার আদেশে পিতৃগৃহেই থাকতে লাগলেন। কালক্রমে রমা ব্রত প্রভাবে শোভন মন্দরাচল শিখরে অনুপম সৌন্দর্যবিশিষ্ট এক রমনীয় দেবপুরী প্রাপ্ত হলেন। এক সময় মুচুকুন্দ পুরের সোমশর্ম্মা নামে এক ব্রাহ্মণ তীর্থভ্রমন করতে করতে সেখানে উপস্থিত হলেন ও সেখানে রত্নমন্ডিত বিচিত্র স্ফটিক খচিত সিংহাসনে রত্নালংকারে ভূষিত রাজা শোভনকে তিনি দেখতে পেলেন। গন্ধর্ব ও অপ্সরাগণ দ্বারা নানা উপচারে সেখানে পূজিত হচ্ছিলেন। রাজা মুচুকুন্দের জামাতা রূপে ব্রাহ্মণ তাকে চিনতে পেরে তার কাছে গেলেন। শোভন তখন সেই ব্রাহ্মণকে দেখে আসন থেকে উঠে এসে তার চরণ বন্দনা করলেন। শ্বশুর মুচুকুন্দ ও স্ত্রী চন্দ্রভাগা সহ নগরবাসী সকলের কুশলবার্তা জিজ্ঞাসা করলেন। ব্রাহ্মণ সকলের কুশল সংবাদ জানালেন। জিজ্ঞাসা করলেন,“এমন বিচিত্র মনোরম স্থান কেউ কখনও দেখেনি। আপনি কিভাবে এই স্থান প্রাপ্ত হলেন, তা সবিস্তারে আমার কাছে বর্ণনা করুন।” শোভন বললেন যে, “কার্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষীয়া রমা একাদশী সবব্রতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। আমি তা শ্রদ্ধাহীন ভাবে পালন করেও তার আশ্চর্যজনক এই ফল লাভ করেছি। আপনি কৃপা করে চন্দ্রভাগাকে সব বলবেন।”

সোমশর্ম্মা মুচুকুন্দ পুরে ফিরে এসে চন্দ্রভাগার কাছে সব ঘটনার কথা জানালেন, ব্রাহ্মণের কথা শুনে অত্যন্ত আনন্দিত চন্দ্রভাগা বললেন, “হে ব্রাহ্মণ! আপনার কথা আমার কাছে স্বপ্ন বলে মনে হচ্ছে।” তখন সোমশর্ম্মা বললেন, “হে পুত্রী, সেখানে তোমার স্বামীকে আমি নিজের চোখে দেখেছি। অগ্নিদেবের মতো দীপ্তিমান তার নগরও দর্শন করেছি,কিন্তু তার নগর স্থির নয়, তা যাতে স্থির হয়, সেই মতো কোনো উপায় করো।” এইসব কথা শুনে চন্দ্রভাগা বললেন, “তাকে দেখতে আমার একান্ত ইচ্ছা হচ্ছে। আমাকে এখনি তার কাছে নিয়ে চলুন। আমি ব্রত পালনের পুণ্য প্রভাবে নগর স্থির করে দেব।” তখন সোমশর্ম্মা চন্দ্রভাগাকে নিয়ে মন্দার পর্বতে বামনদেবের আশ্রমে উপস্থিত হলেন। সেখানে ঋষির কৃপায় ও হরিবাসর ব্রত পালনের ফলে চন্দ্রভাগা দিব্য শরীর প্রাপ্ত হল। দিব্য গতি লাভ করে স্বামীর নিকট উপস্থিত হলেন। প্রিয় পত্নীকে দেখে শোভন অতীব আনন্দিত হলেন। বহু দিন পর স্বামীর সঙ্গ লাভ করে চন্দ্রভাগা নিজের পূণ্য কথা জানিয়ে বলেন যে,“আজ থেকে আট বছর আগে আমি যখন পিতৃগৃহে ছিলাম তখন থেকে রমা একাদশীর ব্রত নিষ্ঠা সহকারে পালন করতাম। সেই পূণ্যের ফলে এই নগর স্থির হবে এবং মহাপ্রলয় পর্যন্ত থাকবে। ”

এরপর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যুধিষ্ঠির কে বললেন, “হে মহারাজ! মন্দরাচল পর্বতের শিখরে শোভন তার স্ত্রী চন্দ্রভাগা সহ দিব্যসুখ ভোগ করতে লাগলেন। পাপনাশিনী ও ভুক্তি মুক্তি প্রদায়িনী রমা একাদশীর মাহাত্ম্য আপনার কাছে বর্ণনা করলাম। যিনি এই একাদশী ব্রত শ্রবণ করবেন, তিনি সর্বপাপ মুক্ত হয়ে বিষ্ণুলোকে পূজিত হবে।”

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments