নীহারিকা মুখার্জ্জী,শিলিগুড়িঃ- সাহিত্যপ্রেমী মা ‘মায়া’-র অধুরা স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে কন্যা ‘স্বপ্না’-র হাত ধরে ২০২১ সালের ১৭ ই সেপ্টেম্বর শিলিগুড়ির বুকে দিনের আলোর মুখ দেখে ‘স্বপ্নমায়া হিংলা সাহিত্যচর্চা পরিবার’। সঙ্গে নিয়ে আসে নতুন ঘরানার কাব্য ভাবনা ‘হিংলা’ – বাংলা ও হিন্দির মিশ্রণে তৈরি এক অভিনব কবিতা। ইতিমধ্যেই এই ঘরানা স্থানীয় কবিদের মনে উৎসাহ সৃষ্টি করেছে।
গত ১৭ ই সেপ্টেম্বর শিলিগুড়ি শোভরাজ হোটেলের সভাকক্ষে একগুচ্ছ সাহিত্যপ্রেমী মানুষের উপস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট সাহিত্য চর্চা পরিবারের জন্মদিন উপলক্ষ্যে প্রকাশিত হয় ১২৩ জন কবির সৃষ্টি সমৃদ্ধ প্রথম কবিতা সংকলন ‘জন্মদিন’।
কবিতা সংকলন প্রকাশ উপলক্ষ্যে একটি অনাড়ম্বর অনুষ্ঠান হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত কবিরা স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন। বিশিষ্ট প্রবীণ ব্যক্তিরা শুধু এই নতুন ঘরানা নয় কাব্যচর্চার সময় নবীনদের গভীরভাবে মননিবেশ করার পরামর্শ দেন। তারা আশা করেন এই নবীন প্রতিভাদের হাত ধরে বাংলা কাব্যজগত আবার তার হৃতগৌরব ফিরে পাবে। কারণ এদের অনেকের মধ্যে সেই সম্ভাবনা প্রবল। নবীন-প্রবীণের যুগলবন্দীতে অনুষ্ঠান একসময় অন্য উচ্চতায় পৌঁছে যায়।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন উত্তরবঙ্গের সুপরিচিত সঙ্গীত শিল্পী অয়ন ব্যানার্জ্জী। সাহিত্যচর্চার আসর হলেও সে উপস্থিত থাকবে অথচ সঙ্গীত পরিবেশিত হবেনা সেটাতো হয়না! উপস্থিত কবিদের দাবি মেনে অয়ন কয়েকটি সঙ্গীত পরিবেশন করে। তার সুরের জাদুতে শ্রোতারা মুগ্ধ হয়ে যায়। কবিতা ও সঙ্গীতের যুগলবন্দীতে এক ভিন্ন স্বাদের পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
অনুষ্ঠানে সভাপতির আসন অলংকৃত করেন সুব্রত ব্যানার্জ্জী ও প্রধান অতিথি ছিলেন শিলিগুড়ি কলেজের অধ্যাপক অভিজিৎ মজুমদার। অন্যান্য অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ‘পাল মিউজিক্যাল গ্রুপ’- এর কর্ণধার বিকাশ পাল, স্বপন দত্ত, অনিমেষ দাস প্রমুখ।
সমগ্র অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন পত্রিকা গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদিকা স্বপ্না ব্যানার্জ্জী ও অয়ন ব্যানার্জ্জী। সঞ্চালনার ক্ষেত্রেও মাতা-পুত্র অভিনবত্ব নিয়ে আসে।
এর আগে প্রদীপ প্রজ্বলিত করে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা করেন অভিজিৎ মজুমদার। তার দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন অন্যান্যরা। পরে মায়াদেবীর প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করে তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন অতিথিরা। উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে প্রত্যেক অতিথিকে বরণ করে নেওয়া হয়। হাতে তুলে দেওয়া হয় মেমেণ্টো ও ‘জন্মদিন’।
উপস্থিত অতিথি ও কবিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে স্বপ্নাদেবী বললেন – এতজন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে একসঙ্গে পাওয়া কষ্টের বিষয়। আমার সৌভাগ্য আমি তাদের পেয়েছি। তিনি আগামী দিনেও তাদের পাশে পাওয়ার আশা করেন। পাশাপাশি তিনি বলেন – আমার সাহিত্যপ্রেমী জন্মদাত্রী মায়ের স্বপ্ন ছিল একটি সাহিত্যচর্চা গোষ্ঠী প্রতিষ্ঠা করে কবিতা সংকলন প্রকাশ করা। আজ মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতে পেরে নিজেকে কৃতার্থ মনে হচ্ছে। মায়ের কথা বলতে গিয়ে বুক চাপা কান্নায় তার গলা বুজে যায়।