eaibanglai
Homeএই বাংলায়বাপের জমিদারিঃ ছট পরবে রাস্তা কাঁপালো বিধায়কজী'র বেটার হুটার

বাপের জমিদারিঃ ছট পরবে রাস্তা কাঁপালো বিধায়কজী’র বেটার হুটার

মনোজ সিংহ, জামুড়িয়া: সনাতনী রাম রাম হরে হরে নয়, একদেহে তিনিই সাক্ষাৎ হরেরাম। এ রাজ্যে শাসকের বাহুবলী বিধায়ক। আবার দলের জেলা চেয়ারম্যানও।

সম্ভবত তাই, বাপের জমিদারিতে রাত বিরেতে পরিবার সমেত চারটি গাড়ীর কনভয় নিয়ে হুটার বাজিয়ে ‘দাদাগিরি ‘ করেন এনার সুসন্তান প্রেমপাল, আর ভয়ে সিঁটিয়ে থাকে জামুড়িয়া থেকে বহুলা, পাণ্ডবেশ্বর, কাজোড়া, এমনকি ঝাড়খণ্ড, উওর প্রদেশ, বিহারও। ‘বিধায়কজী কা বেটা’, এলাকার মাঈবাপ, সাত খুন মাফ, তাই মেপে চলে পুলিশ থেকে প্রশাসন!

ছট পুজোর বাজার করতে বেরিয়েছেন প্রেমপাল, যেন এলাকার নগরপাল, তাই সাথে পাইক পেয়াদা আর বাউন্সার। চারটি ঝাক্কাস এস ইউ ভি গাড়ীর কনভয় থমকে দাঁড়ালো সুনসান সড়কের পাশেই একটি ফলের দোকানে। ছট পুজোর ফল কিনবেন প্রেমপাল। ধুমধাম করে ছট উদযাপন করবেন উওর প্রদেশের বালিয়ায়, তার বাপের মুলুকে।

ঠিক যেন সিবিআই, ইডির রেইড শুরু হলো ফলের বাজারে। তারস্বরে হুটার, সাইরেন বাজিয়ে, এলাকা দাপিয়ে আসলে তখন ফল কিনছেন বাংলার এক এমএলএ’র বেটা! ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে হাতে তার ওয়াকিটকি, একপা তোলা ফলের টুকরিতে। তিন নম্বর গাড়ীতে বসে প্রেমের পত্নী ওয়াকিটকিতে ফরমায়েশ করছেন কলা, আপেল, তরমুজের, আর একনম্বর গাড়ীর গেট খুলে প্রেমের বাচ্চি মাটিতে নেমে আবদার করছে ‘হুটার বাজাও, জোরসে….’, ঠিক যেমন গ্যাংস অফ ওয়াসেপুরের লাইভ এপিসোড।

দেখুন সেই ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি

এই হলো ১০:৪২ মিনিটের টানা ভিডিও, যা রবিবার সন্ধ্যেয় ভাইরাল হয়েছে কয়লাঞ্চলে, যা নিয়ে শোরগোলের চেয়েও শাসক তৃণমূল কংগ্রেসের অন্দরে বেজায় অস্বস্তি।

বাঙালী অস্মিতার দাবিতে সোচ্চার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পার্টিতে বিহার, উওর প্রদেশের ভাইয়াজী কালচার? ভ্রূ কুঁচকে দলেরই কেউ কেউ বলে বসলেন – “এ দলটায় আর কিছু বলার নেই, এখন সবই সম্ভব। যে যেখানে পারছে, বাপের জমিদারি পেয়ে গেছে, দেখারও কেউ নেই, বলারও কেউ নেই।”

তার সাধের সপুতের কারনামায় যেন চমকে উঠলেন হরেরাম সিং – জামুড়িয়ার মহামহীম বিধায়কজী। আকাশ থেকে পড়ে বললেন, “ও কেনো হুটার বাজাচ্ছে? ওর তো এসব করার কোনো অধিকারই নেই। কেনো করলো, খোঁজ নিচ্ছি।” তিনি এও দাবি করেন, “তাছাড়া আমার ছেলেতো বাংলাই নেই এখন। ওতো উওর প্রদেশের বাড়িতে রয়েছে। তাহলেও কি করে এসব হলো, খোঁজ নেবো।”

বিধায়ক বললেন – তিনি খোঁজ নেবেন, আর খোঁজ নেবেন তৃণমূল কংগ্রেসের পশ্চিম বর্ধমানের জেলা সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীও।

বিরক্ত নরেন্দ্রনাথ বললেন, “এসব আবার কি ব্যাপার? হুটার বাজিয়ে মার্কেটিং করছে এমএলএ’র ছেলে। বিস্তারিত খোঁজ নিচ্ছি।”

ওনারা ফুরসৎ পেলে যে যার মতো খোঁজ নেবেন, ক্ষমতা থাকলে ব্যবস্থাও নেবেন। কি তার ফল দাঁড়ায় তাকিয়ে থাকবে তামাম বাংলা। কিন্তু, নেতাদের খোঁজ পর্বের অপেক্ষায় না থেকে, বালিয়া থেকেই ফোনে ‘এই বাংলায় ডট কম’ কে প্রেমপাল হুটার কান্ডের কৈফিয়ত দিতে গিয়ে প্রায় সব দায় ঝেড়ে ফেললেন, আর বেফিকির হয়ে বললেন, “আমি এখন উওর প্রদেশে। আর এই উওর প্রদেশ, বিহার, ঝাড়খণ্ডের পথেঘাটে এরকম সাইরেন, হুটার সবসময় বাজছে। এসব এখানে আকছার ব্যাপার। তাই, কে বাজিয়েছে, কেনো বাজিয়েছে, তা তো আমি ঠিক বলতে পারবনা।” বিধায়ক পুত্রের আরও সাফাই, “আমার বাবা বিধায়ক আর আমি জামুড়িয়ার একজন রাজনৈতীক কর্মী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মায়ের মতো। তাঁর দল করি, তাই এসব আমি কখনোই করতে পারিনা।” তাহলে ওই ভাইরাল ভিডিও? প্রেমের জবাব, “ওটা আমি বাজাইনি। আমি বাজার করছিলাম, বাকিটা জানা নেই।”

উল্লেখ্য, এই হরেরামের পরিবারেরই এক কিশোরের সোশ্যাল নেটওয়ার্কসে বন্দুক হাতে একটি পোস্ট গত বছর রাজ্য রাজনীতিতে ব্যাপক শোরগোল ফেলে। বেকায়দায় পড়ে দলের ধমক খেতে হয় বাহুবলী বিধায়ককে।

“এরা বাঙালী বাঙালী করে বড় বড় কথা বলে, আর যতসব উটকো বিহার, ইউপির ভাইয়াজী কালচার এখানে এনে বসাচ্ছে। পাড়ায় পাড়ায় রাজা উজিরের চাষ করছে। সময় এদের ক্ষমা করবেনা,” দাবি এস ইউ সি আই রাজ্য নেত্রী অধ্যাপিকা সুচেতা কুণ্ডুর। তিনি বলেন, “রাজ্য জুড়ে বিজেপি আর কিছু শিল্পাঞ্চলে টিএমসি ভোট রাজনীতির স্বার্থে লাগাতার যেভাবে অবাঙালি সংস্কৃতির বেসাতি করছে, তাতে এখন এসবই দেখবে বাংলা।”

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments