সংবাদদাতা,বাঁকুড়া:– কালীর শহর নামে খ্যাত বাঁকুড়ার সোনামুখী শহরের অন্যতম বড় ও প্রাচীন পুজো “মাইতো কালী”র রোমহর্ষক কাহিনী আজও মানুষের মুখে মুখে ফেরে। কীভাবে মায়ের কৃপায় বৃদ্ধ সেবাইত প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন সেই সময়ের দুর্দান্ত এক বর্গি সেনাপতির হাত থেকে।
প্রায় ৪০০ বছরের প্রাচীন এই পুজো । এই নামকরণেও রয়েছে ইতিহাস। সময়টা আনুমানিক ১৭৪২ খ্রিস্টাব্দ। বর্তমানে যেখানে মায়ের বিরাট মন্দির তখন তালপাতার কুটির ছিল। শুনশান ওই এলাকায় দিনের বেলায় পর্যন্ত মানুষজন যেতে ভয় পেতেন। এরকম সময়ে বর্গীদের একটি দস্যুদল বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর থেকে সোনামুখিতে যায় লুঠপাট করার জন্য এবং সোনামুখির রানিরবাজারে মা কালীর মন্দিরের সামনে সমবেত হয়। বিকেল গড়িয়ে তখন সন্ধে। বর্গীদের ভয়ে কেউ বাড়ি থেকে না বেরোলেও সাহস করে মন্দিরের বৃদ্ধ সেবাইত প্রদীপ নিয়ে মাকে আলো দেখাতে যান। প্রদীপ মন্দিরে ঘটের সামনে রেখে বলিস্থানে হাড়িকাঠের সামনে প্রণাম করছিলেন তিনি। সেই সময় বর্গী দলের সর্দার ভাস্কর পণ্ডিত একটি খাঁড়া উঠিয়ে প্রণামরত বৃদ্ধকে বলি দিতে উদ্যত হয়। কিন্তু হাতের খাঁড়া আটকে যায়, এবং বর্গী সর্দার দৃষ্টি শক্তি হারান । প্রণামরত বৃদ্ধ মায়ের কৃপায় এইসব হচ্ছে বুঝতে পেরে তৎক্ষণাৎ মায়ের ঘটের জল ভাস্কর পণ্ডিতের সর্বাঙ্গে ছিটিয়ে দেন এবং তাতে স্বাভাবিক হন তিনি। স্বাভাবিক হয়েই তিনি জানতে চান যে এখানে কোন দেবীর অধিষ্ঠান? তখন বৃদ্ধ জানান এখানে মা কালী আছেন। তখন ভাস্কর পণ্ডিত বলেন “মাই তো কালী হ্যায়, মাই তো কালী হ্যায়” বলতে বলতে দলবল নিয়ে সোনামুখি ছেড়ে চলে যান। সেই তখন থেকেই মায়ের নাম “মাইতো কালী।”
প্রথা মেনে প্রতিদিনই হয় পুজো হয় এখানে। কার্তিকী অমাবস্যায় মায়ের বিশেষ পুজো চলে পাঁচদিন ধরে। আর এই পুজোর জন্যে অপেক্ষা করে থাকেন বহু মানুষ। পুজোর প্রথম দিনে ঘটের নিরঞ্জন হয়। সেই ঘটের জলে স্নান করতে দূর দূরান্ত থেকে ভক্তের সমাগম হয়। তৃতীয় দিনে ১০-১৫ হাজার মানুষের নর নারায়ণ সেবা হয়। চতুর্থ দিন নগর পরিক্রমা এবং পঞ্চম দিন পল্লী বাসিরাই হাতে করে মাকে মন্দির প্রাঙ্গনে নামান। কোচডিহি থেকে ৪২ জন বেহারা আসেন এবং মাকে কাঁধে করে খালিপায়ে গোটা সোনামুখী শহর পরিক্রমা করেন। পরেরদিন করা হয় বিসর্জন। একসময় বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের পুজো হলেও বর্তমানে এই পুজো সকলের।