নীহারিকা মুখার্জ্জী চ্যাটার্জ্জী, ফলতা, দঃ চব্বিশ পরগণা -: আর্থিক সহ বিভিন্ন কারণে ফলতার ঈশ্বরীপুর গ্রামে হতোনা কোনো দুর্গাপুজো। ফলে বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গোৎসবের আনন্দ থেকে বঞ্চিত ছিল গ্রামবাসীরা। এটা নিয়ে গ্রামের বাসিন্দাদের মনের মধ্যে একটা দুঃখ থেকেই গিয়েছিল। দুর্গাপুজোর সময় সারাবাংলা যখন আনন্দে মেতে উঠত তখন বিষণ্ণতার কালো মেঘ ভিড় করত ঈশ্বরীপুর গ্রামের উপর। কিছুটা সংকুচিত ভাবে তাদের পাশের গ্রামে দুর্গাপুজো দেখতে যেতে হতো, তাতে আনন্দ থাকত না। ছেলেরা যেতে পারলেও পাড়ার মেয়েদের একটা সমস্যা থাকতই। তারা স্বাধীনভাবে যেতে পারত না। একই অবস্থা হতো বাচ্চাদের। ফলে আক্ষেপ থেকেই গিয়েছিল। অবশেষে সেই আক্ষেপ দূর করতে এগিয়ে আসেন গ্রামের বাসিন্দা মুরারী কয়াল, সন্তোষ মন্ডল, সরসী ভূষণ নস্কর, অমর মন্ডল, ননীলাল হালদার প্রমুখ। এদের হাত ধরে গ্রামে শুরু হয় দুর্গাপুজো। এসব ৭৮ বছর আগের ঘটনা। তারপর থেকেই মহাধুমধামে এই গ্রামে দুর্গাপুজো অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
ফলতায় একাধিক বারোয়ারি দুর্গাপুজো হলেও এদের মধ্যে অন্যতম হলো ঈশ্বরীপুর কর্মমন্দির ক্লাব পরিচালিত দুর্গাপুজো। ‘মা’ এখানে গতানুগতিক রূপ থেকে বের হয়ে
অকাল বোধন রূপে পূজিতা হন। এই বছর পুজোর থিম হলো – ‘সহজপাঠ’। ভাবনার মধ্যে অভিনবত্ব আছে। উদ্যোক্তাদের আশা, পাশাপাশি মায়ের মায়া মাখানো অপরূপ রূপ, মন্ডপ ও আলোকসজ্জা সকল দর্শনার্থীর মন কেড়ে নেবে।
এখানে পুজো প্রচলিত রীতি মেনে শাক্ত মতে হয়। দশমীর দিন সিঁদুর খেলায় যখন গ্রামের বধূরা সংস্কার ভুলে মেতে ওঠে তখন দেখলে মনে হবে ওরা এই গ্রামেরই মেয়ে। এটা বাড়তি পাওনা। এরসঙ্গে পুজোর চারদিন ব্যাপী আছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সঙ্গীত, নৃত্য, যাত্রা সহ বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মেতে ওঠে গ্রামবাসীরা। তখন কচিকাচা ও বড়দের মধ্যে কোনো পার্থক্য খুঁজে পাওয়া যায়না। সবমিলিয়ে এখানকার দুর্গাপুজো এক অন্য উচ্চতায় পৌঁছে যায়। সবার অংশগ্রহণে সত্যিকারের বারোয়ারি হয়ে ওঠে। এবার পুজো কমিটির সম্পাদক অনন্ত হালদার ও উপদেষ্টা কমিটির বিশেষ সদস্য মালা নস্কর হলেও আট থেকে আশি সকলেই পুজোর কাজে হাত লাগান। মালা দেবী বললেন, এই গ্রামের বধূ হলেও পুজোর সময় আমি এই গ্রামের মেয়ে হয়ে উঠি। ভুলে যাই সমস্ত সংস্কার। সবার সঙ্গে আনন্দে মেতে উঠি। সত্যি এটা এক আলাদা অনুভূতি।