জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,আউসগ্রামঃ- দশভুজা মা দুর্গা কৈলাস থেকে এল/ কার্তিক, গণেশ, সরস্বতী, লক্ষী সাথে….. না, আউসগ্রামের দীগনগরের রায় বাড়িতে মায়ের সঙ্গে তার সন্তান সন্ততি আসনা। এখানে মায়ের দু’পাশে আছেন শুধু দুই সখী জয়া ও বিজয়া। চিরাচরিত দশভুজা ও পূর্ণাবয়বের পরিবর্তে মায়ের মূর্তি এখানে আবক্ষ পর্যন্ত বিস্তৃত। এর পিছনে লুকিয়ে আছে পৌরাণিক কাহিনী। সেই কাহিনী শোনালেন রায় বাড়ির দুই সদস্য তপন রায় ও গৌতম রায়।
ব্রহ্মার বরে বলীয়ান পুরুষদের অবধ্য মহিষাসুরের সঙ্গে শুরু হয়েছে দেবী দুর্গার ভয়ংকর যুদ্ধ। কেঁপে উঠেছে স্বর্গ, মর্ত্য, পাতাল। ওদিকে দেবীকে বিভ্রান্ত করার জন্য ক্ষণে ক্ষণে মহিষাসুর নানা রূপ ধারণ করতে থাকে, নেয় নানা ছলাকলার আশ্রয়। বাধ্য হয়ে দেবীও নেন ছলনার আশ্রয়। হস্ত-পদ হীন আবক্ষ মূর্তি ধারণ করে মৃতবৎ পড়ে থাকেন। মহিষাসুর দেবীর ছলনার ভুলে বিভ্রান্ত হলে দেবীর পক্ষে মহিষাসুরকে বধ করা সুবিধা হয়। যুদ্ধের সময় যেহেতু দেবীর দুই সখী জয়া-বিজয়া ছিলেন তাই এখানে সন্তানদের পরিবর্তে দুই সখী মায়ের সঙ্গে থাকেন।
মায়ের পুজোর বাকি রীতি একই থেকে গেছে, কোনো পরিবর্তন নাই। রায় বাড়ির ব্যক্তিগত পুজো হলেও সমগ্র গ্রামবাসী স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই পুজোয় অংশগ্রহণ করে। এইভাবেই কয়েক শতাব্দী ধরে দেবী দুর্গা এখানে পূজিতা হয়ে আসছেন।
জিতাষ্টমী অর্থাৎ আশ্বিন মাসের কৃষ্ণাষ্টমী তিথিতে মায়ের মূর্তি তৈরি করা শুরু হয়। দশমীর দিন ঘট বিসর্জন করার সঙ্গে সঙ্গে মায়ের আবক্ষ মূর্তি বিসর্জন করা হয় এবং তার পরিবর্তে অন্য মূর্তি রেখে সন্ধ্যায় সেটি বিসর্জন করা হয়।
এর পেছনেও আছে আর এক অলৌকিক কাহিনী। তপন বাবু বললেন – ঘট বিসর্জনের সময় কোনো এক ঋষি দেখেন মায়ের মূর্তি নাই। অর্থাৎ মা চলে গেছেন। তারপর থেকেই নাকি এই রীতি চলে আসছে।