eaibanglai
Homeএই বাংলায়"স্বর্গের রথ" চালিয়ে সচেতনতার বার্তা

“স্বর্গের রথ” চালিয়ে সচেতনতার বার্তা

সংবাদদাতা, বাঁকুড়া:– সম্প্রতি বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর স্তরে পড়াশোনা করা পূজা মণ্ডলের এক সাহসী ও পরোপকারী পদক্ষেপ সকলের নজড় কেড়েছে। বাঁকুড়ার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জনপদ বড়জোড়ার বড়জোড়া ব্লক ব্লাড ডোনার্স অ্যাসোসিয়েশনের একটি শব বহনকারী গাড়ি চালানোর গুরুদায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন পূজা। এই গাড়ি চালানোর পাশাপাশি শবদেহর স্ট্রেচার টেনে বাইরে আনা, সব একা হাতেই সামলান এই আত্ববিশ্বাসী মেয়ে। সম্ভবত পশ্চিমবঙ্গে ইনিই প্রথম মহিলা যিনি কোনো শব বহনকারী গাড়ি চালাচ্ছেন। কিন্তু পড়াশোনার পাশাপাশি এমন এক সাহসী পদক্ষেপের কারণ কি? জানা যায় এর পিছনে রয়েছে কুসংস্কারের গল্প। এখনও সাধারণ মানুষের একাংশের চোখে এই শববাহী গাড়িগুলি অপবিত্র এবং অস্পৃশ্য। প্রসঙ্গত বড়জোড়া ব্লক ব্লাড ডোনার্স অ্য়াসোসিয়েশনের এই শব বহনকারী গাড়িটি ২০১৪ সাল থেকেই জনকল্যাণকের কাজে ব্যবহৃত হয়। “স্বর্গের রথ”নামক এই গাড়িটি বড়জোড়া ট্যাক্সি স্ট্যান্ডেই থাকতো। কিন্তু কোন চালক গাড়িটি চালাতে চাইতেন না। চালকদের মতে গাড়িটি চালাতে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হতো তাদের। কখনো পেট্রোল পাম্পে তেল নিতে গেলে ঝামেলা হতো। কখনো আবার গাড়ির টুকটাক কাজ যেমন, টায়ার সারানো কিংবা সার্ভিসিং করাতে গিয়েও সমস্যা হতো। এমনকি প্রয়োজন থাকলেও গাড়িটির সিট কভারও নাকি বদল করা সম্ভব হয়নি তখন। এরই মধ্যে ২০১৮ সালে বড়জোড়া ব্লক ব্লাড ডোনারস অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে যুক্ত হন পূজা। এবং ২০২১ সালে স্নাতক স্তরে পড়াশুনা করার সময়ই “স্বর্গের রথ” চালানোর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু অবহেলিত কাজটি করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। পূজার মতে, আর পাঁচটা যানবাহনের মতোই এটিও একটি বাহন, কোনও অপবিত্র বস্তু নয়। এই বার্তাটিই সকলের কাছে তুলে ধরতে চেয়েছিলেন এবং কিছুটা হলেও তাতে সফলও হয়েছেন তিনি। পূজার মতে ধীরে ধীরে মানুষের চিন্তাভাবনায় পরিবর্তন এসেছে। আগের মতো এখন আর গাড়িটি নিয়ে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় না তাকে।

তবে পূজার এই সাহসী পদক্ষেপে বরাবর তার পাশে থেকে সমর্থন জানিয়েছে তার পরিবার। পূজার বাবা-মাও তার এই কাজকে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করেন। পূজা মণ্ডলের মা টুম্পা মণ্ডল জানান, “আমার তো বেশ ভালই লাগে। তবে যখন প্রথম মেয়ে ঠিক করে যে গাড়িটা চালাবে, তখন খুব ভয় লাগত। এত বড় গাড়ি কি সে আদৌ চালাতে পারবে? তারপর ধীরে ধীরে সবকিছু ঠিক হয়ে যায়। এখন এই বিষয়টা নিয়ে আমি খুব খুশি।”

বর্তমানে সমাজসেবা নিয়ে বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর স্তরে পড়াশোনা করছেন পূজা।পাশাপাশি চালিয়ে যাচ্ছেন সচেতনতার প্রচার এবং সমাজ কল্যাণমূলক কাজ। যদিও পূজার এতে কোনো ক্লান্তি নেই। বরং সমাজের এই গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করার দায়িত্ব নিতে পারায় জীবনের প্রতি কৃতজ্ঞতাই প্রকাশ করেছেন তিনি।

অন্যদিকে পূজার এই কাজে একাধারে যেমন গর্বিত এলাকাবাসী, তেমনই তার এই কাজ নতুন প্রজন্মকে আরো বেশী করে সমাজ কল্যাণমূলক কাজে প্রেরণা যোগাবে বলেই মনে করছেন তারা।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments