সঙ্গীতা চৌধুরীঃ- আজ বহুলাষ্টমী তিথি। আজকের দিনেই বৃন্দাবনের রাধাকুণ্ডের আবির্ভাব হয়। কিন্তু রাধা কুন্ডের এই আবির্ভাবের পূর্বে আছে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের গোহত্যা জনিত পাপের গল্প! ভাবছেন তো ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যিনি গো জাতিকে রক্ষা করবার জন্যই গোপাল নাম পেয়েছেন, তিনি কী করে গো বধের মত ভয়ানক পাপে লিপ্ত হতে পারেন? শুনুন সেই ইতিহাস।
আসলে অরিষ্টাসুর নামের এক অসুর ছিল। পূর্বজন্মের শাপজনিতকারণে যে বৃষরূপ ধারণ করেছিল। এই অসুর রূপ বৃষ কে বধ করে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যখন রাধারানী এবং তাঁর সখী গনের কাছে এলেন তখন তাঁরা বললেন আমাদের কাছে এসো না কারণ গো হত্যা জনিত পাপ করেছ তুমি। ভগবান অনেক করে তাদের বোঝাবার চেষ্টা করলেন যে তিনি গো হত্যা করেননি , তিনি এক অসুরকে বধ করেছেন, কিন্তু সখী সহ রাধারাণীরা এই কথা বুঝতে পারলেন না। তাঁরা তখন ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে বললেন এই মুহূর্তে ত্রিভুবনের সমস্ত নদীতে স্নান করতে হবে তবেই এই পাপ থেকে মুক্ত হওয়া যাবে, এক মুহূর্তে ত্রিভুবনের সমস্ত নদীতে কী করে অবগাহন করা যায় এই কথা ভেবে পায়ের গোঁড়ালি দিয়ে শ্রীকৃষ্ণ তৈরি করলেন শ্যাম কুন্ডু এবং সেখানে তার আজ্ঞাতে ত্রিভুবনের সমস্ত নদ নদী একত্রিত হলেন আর এই শ্যামকুণ্ডের নির্মাণ দেখেই রাধারানী ও তার সখীরা রাধা কুণ্ড নির্মাণের ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
বহুলাষ্টমী তিথির অর্থ কী?
আসলে আজ থেকে বহু বছর আগে বৃন্দাবনে বহুলা নামে একজন গো মাতা ছিলেন। একবার একজন বাঘ তাকে ভক্ষণ করবে বলে ঠিক করেন, গো মাতা তখন বলেন মৃত্যুর আগে তিনি একবার তার বাছুরকে দুধ খাইয়ে আসতে চান এবং তার মালিকের থেকে অনুমতি নিয়ে আসতে চান। বাঘ অনুমতি দেয়। কিন্তু মালিককে শেষ বিদায়ের কথা বললে গো মাতার সেই মালিক বলে তুমি আমার মাতা আমি থাকতে তোমাকে মৃত্যুবরণ করতে দিতে পারি না, আমি সেই বাঘের খাদ্য হব। বাছুরও নিজের মাতাকে বাঁচানোর জন্য বহুলার পিছু পিছু সেই বাঘের কাছে গেল। এইভাবে বহুলা গাইকে বাঁচাতে যখন তার মালিক, বাছুর এবং বহুলা তিনজনে উপস্থিত হল, তখন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সেখানে প্রকট হয়ে বাঘকে থামান। বহুলা তার মালিক এবং বাছুরের উদারতার জন্য এই তিথি বহুলাষ্টমী নামে পরিচিত হয় এবং এই বহুলার নামে বৃন্দাবনে বহুলা বন বলে একটি বন রয়েছে। আজকের দিনে বৃন্দাবনে শ্যাম কুণ্ড ও রাধা কুণ্ডের আবির্ভাব হয়। এই তিথির মাহাত্ম্য শ্রবণে ও ভক্তদের অশেষ পূণ্য লাভ হয়।