eaibanglai
Homeএই বাংলায়সাধক শ্রেষ্ঠ বামদেবের তিরোধানের অলৌকিক কাহিনী

সাধক শ্রেষ্ঠ বামদেবের তিরোধানের অলৌকিক কাহিনী

সঙ্গীতা চ্যাটার্জীঃ– ২ রা শ্রাবণ, আজকের দিনেই সাধক শ্রেষ্ঠ বামদেব বাবার তিরোধান ঘটে ছিলো। আজকের দিনে জেনে নেওয়া যাক সাধক শ্রেষ্ঠ শ্রী বামদেব বাবার শেষ দিনের ঘটনা। আজকের দিনেই মা তারার একনিষ্ঠ সন্তান সাধক শ্রেষ্ঠ বামাক্ষ্যাপা ইহ লৌকিক জগতের মায়া কাটিয়ে পরলোকে পাড়ি দিয়েছিলেন। বীরভূম জেলায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন মাতৃসাধক বামাক্ষ্যাপা। তারা মাকে তিনি নিজের বড়মা বলে ডাকতেন, দিনরাত শ্মশানে পড়ে থেকে সেখানেই করতেন শ্মশান সাধনা। কথিত আছে তারাপীঠের শ্মশানে মা তারা তাঁকে দর্শন দিয়েছিলেন মাতৃরূপে।

এখানেই শেষ নয় আরো শোনা যায় যে, তারা মা নিজে সন্তান স্নেহে স্তন্যপান করিয়েছিলেন তাঁর স্নেহের বামাকে। সাধক বামাক্ষ্যাপার ৭৪ বছর বয়সে,তাঁর ওঠা নামা করতে খুব কষ্ট হতো,তাই বাবার সর্বক্ষণের সঙ্গী নগেন সাধক বাবাকে উঠিয়ে বসিয়ে দিতেন। তবে চলে যে যাবেন সে কথা বুঝতে পেরেছিলেন ক্ষ্যাপা বাবা, তাই একদিন নিজের কাছের সেই সঙ্গী নগেনকে তিনি বলেছিলেন যে,“ডাক এসেছে লগেন, ডাক এসেছে। ওরা আমাকে ডাকছেন।” নগেন তখন ক্ষ্যাপা বাবাকে বলেন,“তুমি কি সব উল্টোপাল্টা বকছো বলতো? অনেক রাত হয়েছে শুয়ে পড়ো, মায়ের মঙ্গল আরতির এখন‌ও অনেক দেরি!” সেদিন ধমক দিয়ে ক্ষ্যাপা বাবাকে চুপ করিয়ে দিলেও নগেন বুঝেছিলেন বাবা আর বেশিদিন থাকবেন না এই জগতে, তার ডাক যে কিসের এসেছে তা তিনি বুঝতে পেরেছিলেন।

পরের দিন ভোরে ক্ষ্যাপা বাবা যখন নগেনকে ডাক দিয়ে বলেন,“লগেন আমাকে নদীর ঘাটে নিয়ে চল আমি চান করবো লগেন।” নগেন একথা শুনে অবাক হয় ও বলেন ,“ ক্ষ্যাপা বাবা তোমার তো শরীর ভালো নেই এত ভোরে তুমি দ্বারকা নদীর জলে চান করবে?” বাবা তখন বলেন,“হ্যাঁ করব শালা, তাতে তোর কী‌রে শালা?” এরপর নগেন আর কথা না বাড়িয়ে ক্ষ্যাপা বাবাকে দ্বারকা নদীর ঘাটে নিয়ে গেলো। এরপর ক্ষ্যাপা বাবা নদীতে ডুব দেন আর প্রতি ডুবে তিনি জয় তারা বলতে থাকেন।

এরপর নগেন ক্ষ্যাপা বাবাকে ঝোপড়া নিয়ে যায় ও সেখান থেকে বেরিয়ে আবার তিনি শিমুলতলায় যান আর সেখানে মায়ের চরণে মাথা রেখে অনেকক্ষণ কান্নাকাটি করে মায়ের সাথে কথা বলতে থাকেন, এরপর মঙ্গলারতির আওয়াজ বাজতে শুরু করলে “মা তারা জয় মা তারা” বলতে বলতে ক্ষ্যাপা বাবা নিনাদ করেন। মঙ্গলারতির ঘন্টা শেষ হলে নগেন ক্ষ্যাপা বাবাকে ডেকে বলেন,“লগেন এই দেখ শালা এইখানে আমার সমাধি দিবি। আমার বড়মার সাথে এই কথা হল।” এরপর ক্ষ্যাপা বাবার অপর একজন সঙ্গী নন্দা সেখানে এলে ক্ষ্যাপা বাবা নগেনকে বলেন,“শালা গ্যাঁজা সাজ” বাবার কথায় নগেন গাঁজা সাজতে সাজতে নন্দাকে সব কথা বলে। বাবা কান্নার শব্দ শুনে শুধোন, ও শালা লগনা নন্দা শালা কাঁদছে কেন রে? নগেন বিষয়টা এড়িয়ে গিয়ে বলেন ও কিছু নয় বাবা।

এরপর দুপুরে মায়ের সামান্য ভোগ খান বাবা আর সন্ধ্যে বেলায় মায়ের আরতি করেন নিজে। তারপর আরতির পর লুচি, চিঁড়ে, মুড়কি খেয়ে নগেন ও নন্দাকে খেতে বললেন। তাঁরা প্রসাদ গ্রহণ করলে তারপর খ্যাপা বাবা তন্ত্রের ক্রিয়া শুরু করেন। মাঝে গাঁজা খেতে শুরু করেন, তন্ত্র ক্রিয়া শেষ হয়ে গেলে উত্তর দিকে মুখ করে ‘জয় তারা জয় জয় তারা’ করতে থাকেন। সেইদিন রাতেই আনুমানিক ১ টা ৫ মিনিট নাগাদ ক্ষ্যাপা বাবার ব্রহ্মতালু ফট করে ফেটে সামান্য রক্ত গড়িয়ে পড়ে আর ১৩৮৮ সালের ২রা শ্রাবণ আষাঢ়ে কৃষ্ণ অষ্টমী তিথিতে ক্ষ্যাপা বাবা পৌঁছে যান তাঁর বড় মার কাছে। তাঁর দেহত্যাগের ঘটনায় তাঁর সঙ্গী সাথী থেকে শুরু করে ভক্তরা ভেঙে পড়েন।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments