সঙ্গীতা চৌধুরীঃ- বন্ধুরা আজকে আপনাদের বলবো সর্বধর্ম সমন্বয়ের আদর্শ লাহিড়ী বাবার আশ্রমের কথা! ব্যান্ডেলের লাহিড়ী বাবার আশ্রমে আধ্যাত্মিক ও প্রাকৃতিক পরিবেশের এক মেলবন্ধন ঘটেছে। রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব বলেছিলেন যত মত তত পথ, সকল ধর্মই সত্য, রামকৃষ্ণের এই বাণীকেই যেন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ব্যান্ডেলের লাহিড়ী বাবার আশ্রমে। বাস্তবিক এই আশ্রমে ঢুকলে আপনি দেখতে পাবেন খ্রিস্টানদের যীশু খ্রীষ্ট থেকে শুরু করে রাম,লক্ষণ,সীতা,হনুমান থেকে শুরু করে জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা থেকে শুরু করে গৌতম বুদ্ধ এমনকি লোকনাথ বাবা পর্যন্ত এই আশ্রমে বিদ্যমান।
সব থেকে আশ্চর্যজনক কথা হলো লাহিড়ী বাবার আশ্রমে কোন এন্ট্রি ফি নেই, যে কেউ সেখানে যেতে পারে, গেট পাশে কোন টাকায় দিতে হয় না। এবার বলব ব্যান্ডেল থেকে কীভাবে লাহিড়ী বাবার আশ্রমে যাবেন?
আপনার যদি মূল গন্তব্য হয় লাহিড়ী বাবার আশ্রম তাহলে, ব্যান্ডেল থেকে নেমে একটি টোটো বা অটো ভাড়া করলেই পৌঁছে যাবেন লাহিড়ী বাবার আশ্রমে। ব্যান্ডেল স্টেশন থেকে পাঁচ-ছয় কিলোমিটার রাস্তা। আর কেউ যদি পুরো ব্যান্ডেল ট্যুর করতে চান, সে ক্ষেত্রে ব্যান্ডেল চার্চ, ইমাম বাড়া ও ব্যান্ডেলের আরো দু একটি দর্শনীয় স্থান দেখে লাহিড়ী বাবার আশ্রমে যেতে পারেন।
লাহিড়ী বাবার আশ্রমে যদি ভোগ খেতে চান তাহলে সকাল সকাল যেতে হবে। সে ক্ষেত্রে গিয়ে ভোগ কুপন কাটতে হবে। ৬০ টাকা দাম সেই ভোগ কুপনের। আর যদি আপনি খাওয়া দাওয়া করেই আসেন, তাহলে চেষ্টা করবেন সন্ধ্যের দিকে যাওয়ার কারণ সন্ধ্যের সময় আরতী হয় এবং তখন আশ্রমের বৈদ্যুতিক আলোগুলো জ্বলে উঠলে সন্ধ্যার মায়াবী পরিবেশ তৈরি হয়। বৈদ্যুতিন আলোয় জলের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা লাহিড়ী বাবার আশ্রম এক অপূর্ব মাধুরীর সৃষ্টি করে, যা মুখে বলা সম্ভব নয়। (এক্ষেত্রে বলে রাখা ভালো সন্ধ্যে ছটার পর কিন্তু লাহিড়ী বাবার আশ্রমে আর প্রবেশ করা যায় না, তবে আপনি যদি সন্ধ্যে ছটার আগে লাহিড়ী বাবার আশ্রমে প্রবেশ করেন তাহলে সাতটা অবধি আশ্রমের মধ্যে আপনি থাকতে পারবেন,তাই সন্ধ্যা আরতি দেখতে চাইলে ও বিকেলের শান্ত পরিবেশে আশ্রমের স্নিগ্ধতা অনুভব করতে চাইলে ব্যান্ডেলের অন্যান্য জায়গা ঘুরে বিকেল পাঁচটার দিকে বাবার আশ্রমে যেতে পারেন)। আবার কেউ মনে করলে এই আশ্রমে রাত্রি বাসও করতে পারেন, রাত্রে থাকার ব্যবস্থাও এখানে রয়েছে।
লাহিড়ী বাবার আশ্রম খোলা থাকে দশটা থেকে বারোটা ও বিকেল চারটা থেকে ছয়টা। আপনাকে এই সময়টা মাথায় রেখে সেখানে যেতে হবে। লাহিড়ী বাবার আশ্রমে গেলে আপনি দেখতে পাবেন এখানে সর্বধর্ম সমন্বয় হয়েছে। শাক্ত ধর্মের উপাস্য আদি শক্তি কালী থেকে শুরু করে শৈব ধর্মের উপাস্য মহাকাল যেমন আছেন,আছেন মাতা জগদ্ধাত্রী,তেমনি আছেন বৈষ্ণব ধর্মের জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা, শ্রীকৃষ্ণ, বিষ্ণু মন্দির থেকে শুরু করে বৌদ্ধ ধর্মের ভগবান বুদ্ধ ও বিপদ-আপদে ভক্তের সহায় সম্বল হয়ে ওঠা লোকনাথ বাবা। এখানেই শেষ নয়, যীশু খ্রীষ্ট রয়েছেন এই আশ্রমে। এমনকি লাহিড়ী বাবার আশ্রমের একটি জায়গায় রয়েছে মক্কার ছবি, অর্থাৎ সনাতন থেকে ইসলাম, খ্রিস্টান থেকে বৌদ্ধ সকল ধর্মের এই আশ্রম। তাই লাহিড়ী বাবার এই আশ্রমে সকল ধর্মের মানুষই জাতি ধর্ম ভুলে গিয়ে মিলিত হন। পুরো আশ্রমটি গাছ গাছালি, ফুল ফল, হাঁস আর পাখিতে পরিপূর্ণ হওয়ায় আপনি যেদিকেই তাকাবেন, সেদিকেই প্রকৃতির ছোঁয়া পাবেন, যা আপনার যাবতীয় মন খারাপ কে ভুলিয়ে দেবে।