সঙ্গীতা চৌধুরী,বহরমপুরঃ– মুর্শিদাবাদের কান্দিতে রয়েছে বাবা রুদ্র দেবের মন্দির। এই মন্দির ভীষণ জাগ্রত। সকল জাতি বর্ণ নির্বিশেষে সবাই এখানে বাবা রুদ্র দেবকে মানেন এবং তাঁর পুজো করেন। ৭০০ বছরের পুরনো রীতি মেনে মড়ার খুলি নিয়ে নাচ আজও অব্যাহত রয়ে গেছে এখানে। হ্যাঁ গাজন উৎসবে আজও পুরোনো রীতি মেনে মন্দিরের ভক্তরা মরার খুলি নিয়ে মন্দিরের প্রাঙ্গণে নাচ করেন। স্বাভাবিকভাবে প্রাচীন এই রীতির পালন দেখতে বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ এসে ভিড় করেন কান্দির রুদ্র দেবের মন্দিরে। এইসময় ভক্তরা প্রাচীন রীতি মেনে সঙ সাজেন।
এছাড়া গাজন উৎসবের দিন বাবাকে মন্দির থেকে পালকিতে করে শহর পরিক্রমা করানো হয় ও কান্দির হোমতলা মন্দিরে নিয়ে গিয়ে বিশেষ পুজো করা হয়। আবার গাজনের পরের দিন অর্থাৎ চড়ক পুজোর দিন সকালে একইভাবে রুদ্র দেবের বিগ্রহকে পালকিতে করে নিয়ে গিয়ে গোটা শহর পরিক্রমা করিয়ে আবার রুদ্র দেবের মন্দিরে রেখে দিয়ে আসা হয়। পালকিতে করে বাবার শোভাযাত্রা দেখতে রাস্তার দুই ধারে দাঁড়িয়ে যান ৮ থেকে ৮০ সকল মানুষ।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বাবা রুদ্র দেবের মূর্তি সম্পর্কে যে কাহিনীটি শোনা যায় সেটা বেশ কৌতুহলপ্রদ। ষোড়শ শতকের গোড়ার দিকে কানা ময়ূরাক্ষী নদীর তীরে হোমতলায় কামদেব নামের এক বৌদ্ধ তান্ত্রিক ছিলেন। তিনি তিব্বত থেকে এসেছিলেন। তিনিই রুদ্র দেবের মূর্তিটি এনেছিলেন। তাঁর আনা মূর্তি তাঁর শিষ্য রুদ্র সিংহ কান্দি গ্রামের পূর্বে একটি গভীর জঙ্গলে স্থাপন করেন। সেই থেকেই রুদ্র দেব নামে এই মূর্তি পূজিত হয়ে আসছেন। এই প্রসঙ্গে আরো কথা শোনা যায় তা হল, কামদেব দুটি মূর্তি এনেছিলেন, যার মধ্যে একটি ছিলো দণ্ডায়মান রুদ্রদেব ও আর একটি ধ্যানরত বুদ্ধ মূর্তি। দণ্ডায়মান মূর্তিটি গঙ্গায় স্নান করাতে গিয়ে তলিয়ে গেলেও পরবর্তীতে উদ্ধারণপুরের গঙ্গায় পাওয়া যায় আর তারপর থেকে এই মূর্তি উদ্ধারণপুরেই পূজিত হচ্ছে।
ধ্যানরত বুদ্ধ মুর্তিটিও ১৯৬১ সালের ১৫ ই আগষ্ট কান্দি থেকে হারিয়ে গেলে সেই মূর্তির আদলে একটি মূর্তি বানিয়ে, সেদিন থেকে আজ পর্যন্ত সেই বিগ্রহের পুজো হয়ে আসছে রুদ্রদেবের মন্দিরে।