eaibanglai
Homeএই বাংলায়শ্রীকৃষ্ণের ভাগের দুঃখ গ্রহণ করেন সুদামা! জানুন সেই কাহিনী!

শ্রীকৃষ্ণের ভাগের দুঃখ গ্রহণ করেন সুদামা! জানুন সেই কাহিনী!

সঙ্গীতা চ্যাটার্জী (চৌধুরী)ঃ- কথায় বলে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ নাকি দয়াময় তিনি ভক্তের দুঃখ দূর করেন, এখন আমাদের মনে এই প্রশ্নটা আসতেই পারে, যে ভগবান যখন এতই দয়াময় এতই কৃপালু, তাহলে তিনি তার বন্ধু সুদামার জীবনের দুঃখ কষ্ট কেন দূর করেন নি? কেন সুদামার জীবনে এত গভীর দারিদ্র্য জানা সত্ত্বেও তিনি কৃপা দৃষ্টিতে সেই দারিদ্র ঘুচিয়ে দেননি? যিনি এত কৃপালু, এত বন্ধু পরায়ণ যে সুদামা তার কাছে এলে তিনি নিজে সুদামার সেবা করতে ব্যস্ত হয়ে যান, তিনি কেন তার বন্ধুর দুঃখ দেখেও চুপ হয়ে বসে ছিলেন! আসলে কথাই বলে কপালের নাম গোপাল। কথাটা কিন্তু সত্যি আমাদের কপালে কি আছে না আছে সব গোপাল জানেন আর তিনি জেনেও যখন চুপ থাকেন তখন বুঝতে হবে তা আমাদের ভালোর জন্যই।

ঠিক একই রকম ভাবে সুদামার দুঃখ না ঘুচিয়ে তিনি সুদামার মাহাত্ম্য বাড়িয়ে দিয়েছেন। কীভাবে? কৃষ্ণ আর সুদামা যখন ছোটবেলায় সন্দীপন মুনির আশ্রমে শিক্ষা গ্রহণ করছিলেন তখন সেই আশ্রমের নিকটে একজন দরিদ্র বৃদ্ধা বাস করতেন, যিনি সর্বদা নিজে ভিক্ষা করে যা কিছু পেতেন, তা ভগবানকে নিবেদন করে প্রসাদ হিসেবে তা গ্রহণ করতেন। একবার সেই বৃদ্ধা দীর্ঘ পাঁচ দিন কোন ভিক্ষা পান নি, তাই পাঁচ দিন তিনি কোন কিছু খাবার গ্রহণ না করে জল খেয়েই কাটিয়ে দেন, ছয় দিনের দিন ভিক্ষা করতে বেরিয়ে তিনি সামান্য কিছু ছোলা পান, কিন্তু তিনি সেই ছোলা টি সেদিন না খেয়ে পর দিন ভগবানকে নিবেদন করে খাবেন বলে একটি পুটলিতে ভরে মাথার কাছে রেখে দেন, নিয়তির এমনই পরিহাস যে, সেই রাত্রেই বৃদ্ধার বাড়িতে চোর আসে এবং অন্ধকারে চোর গোটা ঘরময় খুঁজে কিছু না পেয়ে, বৃদ্ধার মাথার কাছে থাকা পুটলিতে সোনা দানা আছে ভেবে সেটাই চুরি করে নিয়ে পালায়। ঐ ছোলার পুঁটলিটা নিয়ে তারা সন্দীপন মুনির আশ্রমে যান খুলে দেখবার জন্য, কিন্তু তখনই গুরু মাতার পায়ের শব্দ পেয়ে, তারা সেখানেই পুঁটলি ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। গুরু মাতা সেই পুঁটলি খুলে দেখেন তার মধ্যে কী আছে, এরপর কৃষ্ণ সুদামা মাঠে গরু চরাতে গেলে তিনি তাদের হাতে পুঁটলিটা তুলে দেন পথমধ্যে খিদে পেলে খাওয়ার জন্য।

অন্যদিকে ঘুম ভেঙ্গে বৃদ্ধা যখন বুঝতে পারলেন তার ছোলার পুঁটলিটা চুরি গেছে তখন দুঃখে কষ্টে অনাহারে তিনি অভিশাপ দিয়ে বসলেন, যে তার ওই ছোলা খাবে, তাকে তার মতোই দুঃখ কষ্টের জীবন কাটাতে হবে। মাঠে গরু চরাতে গিয়ে প্রবল ঝড় বৃষ্টি হলে কৃষ্ণ সুদামা এক জায়গায় আটকা পড়ে যান, কৃষ্ণ তখন সুদামার কাছ থেকে সেই পুঁটলি টা চান খাওয়ার জন্য, কিন্তু সুদামা ছোট থেকেই ছিলেন প্রখর অনুভূতি প্রবণ, পুঁটলিটা হাতে নিয়েই তিনি বুঝতে পারেন খাবারটা অভিশপ্ত, তাই কৃষ্ণকে তিনি বলেন পুটলিটা কোথাও পড়ে গেছে, কিন্তু আসলে তিনি নিজেই পুঁটলির খাবারটা খেয়ে নেন, বন্ধু কৃষ্ণকে আজীবনের দারিদ্র্যের হাত থেকে বাঁচাতে। অর্থাৎ আধ্যাত্মিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখলে অবাক হতে হয় এই ভেবে যে ভগবানের দুঃখ তিনি হরণ করেছিলেন, ভগবানকে অভিশাপের হাত থেকে বাঁচাতে নিজে অভিশাপ ভোগ করেছিলেন, এই ছিল সুদামার বন্ধুত্বের নিদর্শন, তাই বন্ধু সুদামা দুঃখ কষ্টে জর্জরিত হয়ে, প্রবল অনটনে দিন কাটালেও কখনো শ্রীকৃষ্ণকে স্মরণ করেন নি দুঃখ মোচনের জন্য, এরপর একটা দীর্ঘ সময় অভাবের তাড়নায় খেতে না পেয়ে স্ত্রী ও সন্তানদের কাতর অনুরোধে বাধ্য হয়ে যখন তিনি দ্বারকায় পৌঁছান, শ্রীকৃষ্ণের দরবারে, তখন স্বয়ং দ্বারকাধীশ ভগবান শ্রীকৃষ্ণ চোখের জলে বন্ধু সুদামার পা ধুইয়ে দিয়েছিলেন।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments