সন্তোষ কুমার মণ্ডল,আসানসোলঃ– কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃণমুল ছাত্র পরিষদের চলা টানা আন্দোলনের মধ্যে এবার উপাচার্যকে শারীরিকভাবে হেনস্থার অভিযোগ উঠল। এমনকি তাঁর অফিসের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে ও জলের লাইন কেটে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যালয় থেকে তাঁকে বেরিয়ে যেতে বাধ্য করা হয়েছে বলেও এদিন দাবি করেন উপাচার্য ডঃ দেবাশীষ বন্দোপাধ্যায়ের।
প্রসঙ্গত, ছাত্রভর্তির টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আইনি লড়াইয়ের খাতে খরচ করা হয়েছে। এই অভিযোগ তুলে টানা ২০ দিন ধরে আন্দোলন করছে তৃণমূল ছাত্র সংগঠন। অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল থেকে আইনি খরচ বাবদ প্রায় ৭০ লক্ষ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। ওই টাকা কখন, কোথায়, কী কারণে খরচ করা হয়েছে— শ্বেতপত্র প্রকাশ করে তা উপাচার্যকে জানানোর দাবি জানিয়েছে টিএমসিপি নেতৃত্ব।
উল্লেখ্য প্রতিদিন সকাল সাড়ে দশটার পরে টিএমসিপির কর্মী পড়ুয়ারা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনিক ভবনের সামনে ধর্ণা বিক্ষোভে বসেন। কিন্তু সোমবার সাড়ে ন’টা নাগাদ বিশ্বিবিদ্যালয়ে নিজের কার্যালয়ে পৌঁছে যান উপাচার্য এবং নিজের কাজকর্ম শুরু করেন। অভিযোগ পরে পড়ুয়ারা বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছে উপাচার্যের আসার কথা জানতে পারে এবং টিএমসিপি-র পশ্চিম বর্ধমান জেলা সভাপতি অভিনব মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে উপাচার্যের অফিসে ঢুকে পড়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকে। এরমধ্যে টিএমসিপি নেতৃত্বের সঙ্গে উপাচার্যের বাকবিতন্ডা শুরু হয়ে যায়। এমনকি উপাচার্যের নিরাপত্তা রক্ষী হিসেবে সেই সময় রাজ্যপুলিশের এক কর্মী সেখানে উপস্থিত ছিলেন তাঁকেও বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয় বলে অভিযোগ। প্রায় ঘণ্টা দু’য়েক ধরে এই পরিস্থিতি চলতে থাকে। অবশেষে উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে যান। সেই সময় “ভিসি গোব্যাক” স্লোগান দিতে থাকে বিক্ষোভকারীরা। এমনকি উপাচার্যের গাড়ির সামনেও শুয়ে পড়েন কয়েক জন।
অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরোনোর সময় উপাচার্য সরাসরি টিএমসিপির কর্মীদের দিকে অভিযোগ আঙুল তুলে বলেন, “আমার অফিসের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও জলের লাইন কেটে দেওয়া হয়। আমাকে শারীরিক ভাবে হেনস্তা করা হয়েছে। আমি সাড়ে তিন ঘন্টার মতো ছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন। তার পেনশন সহ অন্য সবকিছুর কাগজে সইয়ের দরকার ছিল। রাজ্যের শিক্ষা মন্ত্রী ব্রাত্য বসুর নির্দেশে সেই কাজ করতে এসেছিলাম। কিন্তু তা করতে পারিনি। আন্দোলনের নামে এমন কিছু করা হচ্ছিলো যে, বাধ্য হয়েই বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়লাম।”
যদিও উপাচার্যের করা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন টিএমসিপি নেতা অভিনব মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “আমরা কাউকে কোন রকম ভাবে হেনস্তা করিনি। উনি মিথ্যে কথা বলছেন। ওনার মতো ছাত্র বিরোধী মানুষ আগে কেউ দেখেননি। ওনাকে ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে নেওয়া টাকার হিসেব দিতেই হবে। যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফান্ডের টাকা নিজেদের আইনী খাতে খরচ করেছে, তাদের কাছ থেকে আদায় না করা পর্যন্ত আমাদের এই আন্দোলন চলবে। আর আমরা তো এই খরচ নিয়ে শ্বেত পত্র প্রকাশের দাবি করেছি।”
যদিও আইনী খাতে খরচ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের উত্তরে উপাচার্য বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় কোন মামলা করেনি। আমার আসার আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। তার মধ্যে একটি নিয়োগ সংক্রান্তও মামলা আছে। বিশ্ববিদ্যালয় শুধু হাইকোর্টে লড়াই করছে। আইন মেনে তা করতেই হবে। তার জন্য যা খরচ করার তা করা হয়েছে। ওই খরচের হিসেবে যে কেউ চাইলেই তো আমি দিতে পারিনা। ওটা কনফিডেনসিয়াল। এর হিসেব নিতে গেলে, তিনটে রাস্তার কথা আমি টিএমসিপির জেলা নেতৃত্বদের বলেছি। প্রথমটা আরটিআই করা। দ্বিতীয় হলো উচ্চ শিক্ষা দপ্তরের প্রধান সচিবকে চিঠি লেখা ও তৃতীয় হলো আমাকে চিঠি লেখা। তা আমি উচ্চ শিক্ষা দপ্তরে পাঠাবো। সেখান থেকে নির্দেশ পেলে আমি খরচের হিসেব দিয়ে দেবো।”
সব মিলিয়ে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের কর্মীদের বিক্ষোভের জেরে এদিন বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।