বীরূপাক্ষ সেন, দুর্গাপুর: বাংলায় ধর্ষকের তাৎক্ষণিক শাস্তির নিদান উত্তর প্রদেশ মডেলে দিতে গিয়ে স্রেফ দু নৌকায় পা রাখলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বিজেপি ঘনিষ্ঠ ধর্ষক হলে নিদান একরকম, আর শাসক তৃণমূল কংগ্রেসের লোক হলে, ‘সকালে জমা আর সন্ধ্যায় খরচ।’
অধিকারীর এই হুংকারকে বিশেষ আমল দিতে না চেয়ে শাসক দলের জেলা সভাপতি নরেন চক্রবর্তী এদিন দুপুরে বলেন, ” এইসব পাগলের প্রলাপ বাংলার মানুষ আদৌ কোনো গুরুত্ব দেয়না।”
শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “বিজেপি সরকারে এলে ধর্ষকেদের শাস্তি হবে উত্তর প্রদেশের মতো। সকালে জমা আর সন্ধ্যায় খরচ। আদালতের কোনো ব্যাপার নেই।”
দুর্গাপুরে স্বপ্ন উড়ানের ছ বছরের জগদ্ধাত্রী পুজোর উদ্বোধনে আসেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি মঞ্চে উঠতেই বিজেপির কর্মী সমর্থকরা তার হাতে তরোয়াল ও ত্রিশূল তুলে দেয়। তারপরেই তিনি এসআইআর ইস্যু নিয়ে তৃণমূলকে আক্রমণ করেন। তারপরেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ করে বলেন, “মা কালীকে উনি প্রিজন ভ্যানে তুলেছেন। আর ভাতা, ভিক্ষাতে তিনি চটকদারির রাজনীতি করেন। কারণ উনি জানেন ওনার সাথে সলিড ৩৫% ভোট রয়েছে।”
https://www.facebook.com/SuvenduWB/videos/1548784673230518
“শুভেন্দু অধিকারীর নিজের ফেসবুক পেজ পোস্ট থেকে নেওয়া, ওই ভিডিওর শেষের দিকের কথা গুলো একটু মনোযোগ সহকারে শুনুন“
আইকিউসিটি মেডিকেল কলেজে হোক কিম্বা বিধায়কের ভাইপো, আইন সংহিতা অনুযায়ী ধর্ষকের সাজা হোক। তৃণমূল কিম্বা বিজেপি অথবা অন্য রাজনীতির মানুষেরা ধর্ষণ কাণ্ডে অবিলম্বে দৃষ্টান্ত মূলক সাজা দাবি করেছেন সবাই একই সুর। শুভেন্দু অধিকারী বলেন,”পশ্চিমবঙ্গের মাটিতে ঘটে যাওয়া ধর্ষণ কাণ্ড ঠেকাতে এবার মোক্ষম দাওয়াই, ‘সকাল বেলায় ধরে এনে বিকালে খরচ করে দাও।’ বিজেপি শাসিত অন্য রাজ্যের নজির উল্লেখ করে “এরাজ্যেও ক্ষমতায় এলে আমরা এমনটাই করবো।” রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী মঙ্গলবার দুর্গাপুর শহরে এসে এমনি দাওয়াই বাতলেছেন। আর এই নিয়েই শহরের রাজনীতি সরগরম। তৃণমূল আইনের শাসনের কথা বললেও শুভেন্দু’র হুমকিতে শহরের মানুষ যোগী রাজের ছায়া খুঁজছেন।
মেডিকেল কলেজে দ্বিতীয় বর্ষের ডাক্তারী পড়ুয়া ধর্ষণ কাণ্ডের টেস্ট আইডেন্টিফিকেশন বা টিআই প্যারেডে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। দুর্গাপুরের মুসলিম অধ্যুষিত বিজড়া গ্রামের ফিরদৌস শেখ মূল অপরাধী চিহ্নিত হলেও ধর্ষণের সময় শেখ রিয়াজউদ্দিন, শেখ সফিকুল, নাসিরউদ্দিন শেখ, অপু বাউরি ও ছাত্রীর সহপাঠী ওয়াসিফ আলি সহ ছয়জনের উপস্থিতিতে ঘটনাটি ভয়ঙ্কর গ্যাংরেপ কান্ড হিসেবেই দেখছেন নির্যাতিতার আইনজীবী পার্থ ঘোষ।
ওই ধর্ষকদেরই একজন দীপু বাউরি বিজেপির সক্রিয় ক্যাডার, তাকে নিয়ে বিজেপি গোটা ধর্না কাণ্ডে যেমন একটি শব্দও খরচ করেনি, তেমনি মুখে কুলুপ শুভেন্দুরও।
অপরদিকে পাঁচ বছর আগের অভিযোগের ভিত্তিতে এক নাবালিকা ধর্ষণের ঘটনায় কাঁকসা থানা এলাকার অভিযুক্ত ফেরার সহদেব ঘোড়ুইকে পুলিশ সম্প্রতি গ্রামে ফিরে আসার মাত্র গ্রেফতার করেছে। অভিযুক্ত সম্পর্কে দুর্গাপুর পশ্চিমের বিধায়ক লক্ষ্মণ ঘড়ুইয়ের ভাইপো। শুভেন্দুর পাশেই এদিন মঞ্চ আলো করে বসেছিলেন লক্ষ্মণ। সম্ভবতঃ তাই বিজেপি ক্যাডার সম্পর্কে শুভেন্দু অধিকারীর শাস্তির নিদান বদলে গেলো বেমালুম।
নাবালিকাকে ধর্ষণ কাণ্ডে বিধায়ক লক্ষণ ঘোরুইয়ের ভাইপো সহদেব ঘোড়ুই গ্রেফতার প্রসঙ্গে শুভেন্দু অধিকারী বলেন,”ভারতীয় জনতা পার্টি করলে নানান ভাবে ফাঁসানো হয়। লক্ষণ ঘোরুই একজন প্রতিষ্ঠিত বিজেপি নেতা। ওনার পরিবারের কাউকে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা হলে পুরো বিজেপি পরিবার ওনার পাশে থাকবে। আইন আইনের পথে চলবে। ওনার পরিবার সঠিকভাবে আইনি লড়াই করে নিতে পারবেন এটা আমি বিশ্বাস করি।” এ প্রসঙ্গে বিধায়ক অবশ্য জানিয়েছেন নাবালিকার বাবা তাকে বলেন, “স্থানীয়ভাবে কেউ বা কারা অভিযোগ করতে চাপ দিয়েছিল, কিন্তু তিনি তার অভিযোগ তুলে নিতে চান। বিধায়ক অবশ্য আরো জানান যে, পশ্চিমবঙ্গে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হোক।” জেলা তৃণমূল সভাপতি নরেন চক্রবর্তীর পাল্টা খোঁচা, “মাত্র কয়েকদিন আগেই তো আসানসোল দুর্গাপুর উন্নয়ন সংস্থার দফতরের সামনে বিরোধী দলনেতা ধর্ষণের অভিযোগ তুলে ধর্নায় বসেছিলেন। এবার ধর্না করুন। আইনতো সবার জন্য সমান।”
এদিকে মেডিকেল কলেজের ঘটনায় অভিযুক্তরা এক বিশেষ সম্প্রদায়ের। এবং অভিযোগ তৃণমূল কর্মী হিসেবে এলাকায় পরিচিতি থাকার ফলে তৃণমূলের নেতাদের তুলোধুনা করে বিরোধী দলনেতা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, “জেহাদীদের দল আর তাদের দুধেল গাইদের অত্যাচারে মানুষ অতিষ্ট। ছাব্বিশে ক্ষমতায় এলে আমরা এদের ‘সকালে ধরে এনে সন্ধ্যার মধ্যে খরচ করে দেব’।” শুভেন্দু অধিকারীর এই বক্তব্যে শহরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। তৃণমূল আইন হাতে না তুলে নেবার কথা বললেও শহরের মানুষ উত্তর প্রদেশের যোগী রাজের ছায়া খুঁজছেন।


















