সঙ্গীতা চ্যাটার্জী (চৌধুরী),বহরমপুরঃ- আজ ৩রা জুন,১৯ শে জ্যৈষ্ঠ-শ্রী শ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারী বাবার ১৩৪ তিরোধান দিবস। আজকের তিথিতেই তিনি বেলা ১১ঃ৪০ মিনিট নাগাদ যোগবলে তার স্থূল দেহ ত্যাগ করে সুক্ষরূপে বিরাজ করতে শুরু করেন। স্থূল দেহ ত্যাগ করবার সময় তার বয়স ছিল ১৬০ বছর। ১৯শে জ্যৈষ্ঠর আগেই তিনি বলে দিয়েছিলেন যে এই তিথিতে তিনি দেহত্যাগ করবেন তাই স্বাভাবিকভাবেই সেই ১৯শে জ্যৈষ্ঠ রবিবার বাবাকে শেষ বার দর্শন করবার জন্য প্রচুর ভক্তের সমাগম হয় লোকনাথ বাবার আশ্রমে।
গোয়ালিনী মা দুঃখে ভারাক্রান্ত হয়ে বাল্যভোগ তৈরি করে শেষবার লোকনাথ বাবাকে খাইয়ে দেন, এরপর ভক্তরা বাইরে এসে কান্নাকাটি শুরু করলে ঘর থেকে বেরিয়ে এসে লোকনাথ বাবা ভক্তদের উদ্দেশ্যে বলেন,“ওরে তোরা চিন্তায় এত কাতর হচ্ছিস কেন ? আমি কি মরে যাব ? কেবল আমার জীর্ণ দেহটা পাত হবে। আমি যেমন আছি, ছিলাম তোদের কাছে ঠিক তেমনই থাকব। আমার মৃত্যু নেই। ভক্তি আর বিশ্বাস নিয়ে আমাকে একটু আদর করে ডাকলেই দেখবি তোদের কত কাছটিতেই আছি। এখন তোদের কথা শুনছি, কৃপা করছি তখনও শুনব, দেখিস ডাকলেই কৃপা পাবি। একথা মিথ্যা হবে না। আরে আমি যাবই বা কোথায় ? সর্বভূতের অস্তিত্বে যে আমিই বিরাজ করছি। তোরা আত্মনিষ্ঠ হয়ে ভক্তিকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে চল। তোদের বাধা দেবে কে ? তোরা যে আমারই সন্তান। আমার সন্তানের উপর কারো শাসন চলবে না। আমি উপদেশ করছি না এ আমার আদেশের স্থল। তোরা আমায় ছাড়া নস, এই ভাবটি ভূলিস না। আমি তোদের মধ্যেই আছি, তোদের মধ্যেই থাকব। আমি নিত্য, আমি অবিনাশী।”
- বাল্যভোগ প্রসাদ করে দেওয়ার পর ভক্তগণ সেই প্রসাদ মহানন্দের সাথে ভক্ষণ করেন, লোকনাথ বাবার নির্দেশ অনুসারে বেলা নয়টার মধ্যেই সকলে ভোজন সমাপ্ত করেন, এরপর বাবা কাষ্ঠাসনে হেলান দিয়ে মহাযোগে বসেন, সকলে অবাক হয়ে অশ্রু সজল চোখে তাকিয়ে থাকতে শুরু করে যে বাবার কখন মহাযোগ কখন ভাঙবে কিন্তু সেদিন বাবার মহাযোগ আর ভাঙ্গেনি, ১১ টা ৪৫ এ ভক্তরা তার দেহ স্পর্শ করলে তার দেহ মাটিতে পড়ে যায় তখন বারদী আশ্রমে শোক বিহ্বল ভক্তরা উচ্চস্বরে কাঁদতে থাকেন আর বাবার নামে জয়ধ্বনি করতে থাকেন।
তবে স্থূল দেহ ত্যাগ করলেও আজও তিনি তার ভক্তদের রক্ষা করেন সূক্ষ্ম দেহে, তাইতো তিনি তার ভক্তদেরকে অভয় বাণী দিয়ে গিয়েছিলেন যাওয়ার আগে,“রণে বনে জলে জঙ্গলে যখনই বিপদে পড়িবে আমাকে স্মরণ করিও আমিই রক্ষা করিব।”