eaibanglai
Homeএই বাংলায়নেশা মুক্তির মরণ ফাঁদে/২....উদোম ছবি ভাইরাল করার ভয় দেখিয়ে চলে দেহ ব্যবসা

নেশা মুক্তির মরণ ফাঁদে/২….উদোম ছবি ভাইরাল করার ভয় দেখিয়ে চলে দেহ ব্যবসা

মনোজ সিংহ, দুর্গাপুর:- নামেই নেশা মুক্তি কেন্দ্র। শহরের এধার ওধার জমিয়ে ব্যবসা করা এইসব কসাইখানাগুলির আড়ালে নাকি চলছে সেক্স- র‍্যাকেট আর ড্রাগ-র‍্যাকেটের জামাটি কারবার।

পরিবারের লোকেরা রোগ মুক্তির উপায় খুঁজতে, সাদা মনে এইসব কেন্দ্রগুলিতে সাথে করে পরিবারের মাদকাসক্তকে নিয়ে আসছেন, নগদ কড়ি গুনে ভর্তি করছেন, আর নিজেদের অজান্তেই পরিবারের সম্পদকে তুলে দিচ্ছেন সেই ড্রাগ-মাফিয়াদের হাতেই। অর্থাৎ, নেশা মুক্তির বদলে এইসব কেন্দ্রগুলিতে বাঁচতে আশা যুবক-যুবতীরা নতুন করে সর্বনাশা নেশার খপ্পরে পড়ে তলিয়ে যাচ্ছেন গহীন আধারে- এমন অভিযোগ মিলছে ভুক্তভোগী বেশ কয়েকটি পরিবার থেকে। আবার মুক্তির পথের খোঁজে আসা দিশাহারা কিছু যুবতীর ‘অসহায়তা’কে কৌশলে ব্যবহার করে, তাদেরকে মাদকের বিনিময় বিভিন্ন পাড়া, শহর থেকে আশা কাস্টমারদের কাছে শরীর বিক্রি করতে বাধ্য করছে কয়েকটি কেন্দ্র, এমন নজিরও মিলেছে। পাশাপাশি, এমন তথ্যও হাতে এসেছে, যে, মাদকাসক্ত কিছু বিবাহিতা যুবতীর শরীরের মোহে পড়ে তার অসতর্কতার সুযোগে গোপনে ভিডিও ক্লিপ বানিয়ে ভাইরাল করে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে তাদের কাউকে কাউকে জোর করে বিয়ে করে আলাদা সংসার পেতে বসেছেন কোন কোন এরকম ‘কেন্দ্র’ চালানো বিবাহিত মালিকেরা। এসব পরিস্থিতিতে, চাপে পড়ে সামাজিক লজ্জায় মুখে কুলুপ এঁটে নিরবে অশ্রুপাত করছেন ‘নির্যাতিতা’ ও তাদের পরিবারগুলি।

“দু বছর আগে আমার বাড়ির লোকেরা আমাকে দুর্গাপুরের কেন্দ্রে দিয়ে যায়। মাসে ছ’হাজার টাকা খরচ করে আমাকে সুস্থ করার আশায় তারা এখানে রেখে যায়। প্রথম প্রথম ওরা কয়েকটা দিন কড়া ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন করে রাখতো। দিনে এক বেলা খাবার আর ঘুম ভাঙ্গার সময় বুঝতে পারতাম আমার শরীর নিয়ে নাড়াচাড়া করা হয়েছে। দু-এক দিন বুকের, কোমরের বোতাম খোলা দেখে অবাক হয়েছিলাম। পরে বুঝতে পারি, আমার গোপন ছবি তোলা হয়েছে। বাড়ি থেকে সপ্তাহে একদিন দেখা করার লোক আসতো। ওরা সামনে দাঁড়িয়ে থাকায় ভয়ে কিছু বলতে পারতাম না। ওরা শাসিয়েছিল, কিছু বললে উলঙ্গ ছবি ভাইরাল করে দেবে,” বলে থামলেন ৩২ বছরের যুবতী গৌরী সরকার (পদবী পরিবর্তিত)। গৌরীর কথায়, “মালিকেরা প্রথমে ধর্ষণ করে। তারপর বাইরের লোক ঘরে ঢুকিয়ে দিত ঘন্টা পিছু। বিনিময় আমাকে ওরা দিনে দুবার মাদক দিতো। দেশের লকডাউনের সময় কয়েক মাস ইচ্ছের বিরুদ্ধে এভাবে শরীর বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছিলাম।” সেই গৌরীকে তার পরিবার মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থাতে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। কলকাতার এক নামী সাইক্রিয়াটিস্টের চিকিৎসায় বাঁকুড়ার গৌরী এখন সুস্থ মানুষ।

শহর দুর্গাপুরের এ- জোনের এক গৃহবধূ সরলা ঘোষে(পদবী পরিবর্তিত)র অভিযোগ, “ওরা আমার অচেতন অবস্থায় আমার শরীর ব্যবহারের চেষ্টা করে। কপাল গুণে আমার ঘুম ভেঙ্গে যেতে দেখি শরীরের উর্ধাঙ্গের পোশাক খুলে ফেলা হয়েছে। ঘরের ভেতর এক নেশাগ্রস্ত অচেনা যুবক মোবাইলের ক্যামেরা সেট করছে। তার গায়ে জামা নেই। চিৎকার করতেই দৌড়ে পালায়। সেন্টারের লোকেরা বলে তাদের অজান্তেই নাকি বাই চান্স ঘরে ঢুকে পড়েছিল ছেলেটা। বাকিটা অনুমান করে নিজেকে বাঁচাতে পালিয়ে আসি।”

সিটি সেন্টারের পাশাপাশি দুর্গাপুর শহরের ফুলঝোড়, বেনাচিতি আর শহরের ইস্পাত নগরী লাগোয়া সেপকো কলোনীতে রমরমিয়েই চলছে নারী শরীর বিক্রি, মাদকের কারবার আর চিকিৎসা- শুশ্রুষা র নামে পাশবিক শোষণের ব্যবসা চালানো এইসব কেন্দ্রগুলি।

“আমি যতদূর জানি, এদের কোনরকম অনুমোদন জেলার স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে কখনোই দেওয়া হয়নি। এইতো, পাঁচ ছ দিন আগেই আসানসোলে জেলাশাসকের সাথে বৈঠকের সময় এই বিষয়টিও আলোচিত হয়,”বলে জানালেন পশ্চিম বর্ধমান জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ সেখ মোহাম্মদ ইউনুস। ডাঃ সেখ আরো বলেন, “রাজ্য সরকার এইসব নেশা মুক্তি কেন্দ্র চালাতে গেলে জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিকের দপ্তরের অনুমোদন নেওয়া বাধ্যতামূলক করলেও, আমাদের জেলায় যেসব এরকম কেন্দ্র চলছে বলে আমরা জানতে পারছি, তারা কেউ অনুমোদনের জন্য আবেদনও করেনি। এদের বিরুদ্ধে কি কি ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে, তা নিয়ে আমরা এবার চিন্তা-ভাবনা শুরু করেছি। শীঘ্রই কাজ শুরু হবে।”

প্রশাসন তার মতো ‘ব্যবস্থা গ্রহণ’ করবে, কিন্তু, সামাজিক প্রতিরোধটাই বা কোথায় ? দিনের পর দিন নয়, বছরের পর বছর অর্থ-শরীর লুঠের এই পিশাচের কারবার চলছে কাউকে পরোয়া না করেই! কিভাবে ?

সিটিসেন্টার শহরের মুখ্য প্রশাসনিক কেন্দ্র। সেখানে কিভাবে, সকলের নাকের ডগায় চলছে এইসব অবৈধ ব্যবসা ? তাও আবার জনবসতির মধ্যে ? আশে পাশের বাড়ির মালিকেরাই বা মুখে কুলুপ এঁটে কেন ? সিটিসেন্টারের সমাজসেবী পরিমল অগস্তি বলেন, “গোটা সিটিসেন্টারটাই নানা রকম ক্রিমিনালদের এখন ডেরা হয়ে উঠেছে। নেই সেরকম নজরদারিও। কাকে বলবো ? সবাই এখানে খুবই ব্যস্ত মানুষ!”

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments