নিজস্ব সংবাদদাতা, দুর্গাপুরঃ- গোটা রাজ্য জুড়ে বেড়ে চলা একাধিক নারী নির্যাতনের ঘটনায় জেরবার শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। শিল্পাঞ্চল দুর্গাপুরও বাদ যায়নি সেই রকম ঘটনা থেকে। দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলও এখন নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের ঘটনায় চিন্তার ভাঁজ তৃণমূল কংগ্রেসের কপালে। তৃণমূল কংগ্রেস দলের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার লক্ষ্যে আজ এক সাংবাদিক সম্মেলন করে দুর্গাপুর এক নম্বর ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস কার্যালয় থেকে ব্লক সভাপতি রাজীব ঘোষ এক বিবৃতি দিয়ে জানান, “সম্প্রতি নাবালিকা ধর্ষণ কাণ্ডে নাম জড়িয়ে যাওয়ার ফলে দুর্গাপুর এক নম্বর ব্লক তৃণমূলের যুব সম্পাদক মন্ডলীর অন্যতম সদস্য দেবাংশু রায়কে দলের সমস্ত কাজ থেকে অব্যাহতি দিয়ে সাসপেন্ড করা হল।” যদিও ব্লক সভাপতি এদিন বক্তব্যে জানান, “যদি তদন্তে তাকে নির্দোষ পাওয়া যায় তাহলে পুনরায় দল তার বিষয়ে চিন্তা ভাবনা করবে ।”
স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠে হঠাৎ এমন কি হলো বা কি দোষের জন্য এই যুব তৃণমূল নেতাকে সাসপেন্ড করা হলো । উল্লেখ্য দুর্গাপুর ইস্পাত নগরীর রামানুজন এলাকার এক নাবালিকাকে প্রেম সম্পর্কে আবদ্ধ করে স্থানীয় জয়দেব এভিনিউয়ের তৃণমূল কর্মী বলে পরিচিত অঙ্কিত মল্লিক একাধিকবার শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে ও ওই নাবালিকা গর্ভবতী হয়ে পড়েন বলে অভিযোগ । নাবালিকার পরিবার পরিজনেরা এ বিষয়ে দুর্গাপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে পুলিশ অঙ্কিতকে গ্রেফতার করে আদালতে পেশ করেন ।
অন্যদিকে নির্যাতিতা নাবালিক মেয়েটির ওপর গর্ভপাত করানো ও অভিযোগ প্রত্যাহার করার জন্য লাগাতার চাপ দেওয়া হয় যুব তৃণমূল কংগ্রেস নেতা দেবাংশু রায়ের পক্ষ থেকে বলে অভিযোগ। এই পুরো অভিযোগের নেপথ্যে রয়েছে একটি অডিও ক্লিপ। যদিও ওই অডিও ক্লিপের সত্যতা যাচাই করেনি ‘এই বাংলায়’ ওয়েব পোর্টাল । কিন্তু ওই অডিও ক্লিপ এর ওপর ভরসা করেই দুর্গাপুর এক নম্বর ব্লক তৃণমূল যুব কংগ্রেসের নেতা দেবাংশু রায়কে সাসপেন্ড করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এদিকে অন্য একটি সূত্র মারফত জানা গেছে যে অডিও ক্লিপটিকে ভিত্তি করে দেবাংশুর ওপরে দোষারোপ করা হচ্ছে সেটি একটি গভীর ষড়যন্ত্রের সফল রূপদান দেওয়ার জন্যই ওই অডিও রেকর্ডটি করা হয়েছিল বলে জানা যাচ্ছে ।
দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের মধ্যে নাবালিকা ধর্ষণের এই ঘটনায় রীতিমতো কোমর বেঁধে নেমেছে বাম, ডান ও বিজেপি। গতকাল বাম সমর্থিত মহিলা সমিতির একাধিক সদস্য ওই নির্যাতিতা নাবালিক মেয়েটির পরিবারের সঙ্গে দেখা করার উদ্দেশ্যে তার বাড়ি গিয়েও তাদের সাথে কথা বলতে পারেননি । মহিলা সমিতির উপস্থিত নেত্রীদের অভিযোগ তৃণমূল কংগ্রেসের গুন্ডাবাহিনীর ভয়েই ঘর থেকে বেরোলেন না নাবালিকা ও তার পরিবার। খিল দিয়ে রাখলেন দরজায়। আবারো কিছুক্ষণ পরে ওই নাবালিকার বাড়িতে হাজির হয় বিজেপির মহিলা সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা । আগেরবারের মতো এবারও তাদের ডাকে সাড়া না দিয়ে নাবালিকা ও তার পরিবারের লোকজনেরা ঘরের ভেতরেই খিল দিয়ে রইলেন। কিন্তু আজ রাজ্যের মাননীয় মন্ত্রী তথা দুর্গাপুরের বিধায়ক প্রদীপ মজুমদার স্বয়ং ওই নাবালিক নির্যাতিতা মহিলার সাথে দেখা করতে তার বাড়ি যান । এদিন অবশ্য মন্ত্রীকে সামনে পেয়ে নির্যাতিতার পরিবার তাদের সমস্ত অভাব অভিযোগের কথা সবিস্তার তুলে ধরেন । রাজ্যের মাননীয় মন্ত্রী তথা বিধায়ক প্রদীপ মজুমদার সব রকম সহযোগিতা ও পাশে থাকার আশ্বাস দিয়ে ফেরেন । এর কিছুক্ষণের মধ্যেই দুর্গাপুর এক নম্বর ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের ব্লক সভাপতি রাজীব ঘোষ তড়িঘড়ি এক সাংবাদিক সম্মেলন করে দেবাংশু রায়কে দলের সমস্ত কাজ থেকে অব্যাহতি দিয়ে সাসপেন্ড করেন।
কয়েকদিন আগেই তৃণমূল কংগ্রেসের ‘সেকেন্ড ইন কমান্ড’ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এসেছিলেন দুর্গাপুরে। দুর্গাপুর চিত্রালয় মেলা ময়দানে রাত্রি বাস করেন তিনি। সেদিন তিনি তার সহকর্মী পঞ্চায়েত সদস্যদের পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দেন দল কোনরকম দুর্নীতি, সজন পোষণ ও অসামাজিক কাজকর্ম মেনে নেবে না । প্রয়োজনে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চেয়ে দ্রুত সেই সমস্যার সমাধান করা হবে । এখন প্রশ্ন হল কবে ওই নাবালিক নির্যাতিতা মহিলা তার সুবিচার পাবে।
এদিকে, দেবাংশুর বিরুদ্ধে ওঠা এই গুরুতর অভিযোগের হাতিয়ার একটি ফোন কলের রেকর্ডিং। ওই কলের শেষাংশে শোনা যাচ্ছে একজন কাউকে জানাচ্ছে যে, কথামত সবই রেকর্ড করা হয়েছে। তাহলে কি এর ভেতর অন্য কোনো ষড়যন্ত্রই নেপথ্যের আসল নাটক ? এই প্রশ্ন কিন্ত থেকেই গেলো।