সংবাদদাতা, শাঁকতোড়িয়া(কুলটি)ঃ- ২০২৩ -২৪ অর্থাৎ চলতি আর্থিক বছরে ইসিএলের ৫১ মিলিয়ন টন কয়লা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো। কিন্তু চলতি ফেব্রুয়ারি মাসের ২২ পার হলে গেলেও, ইসিএলে এখন পর্যন্ত মাত্র ৩৯ মিলিয়ন টন কয়লা উৎপাদন হয়েছে। বর্তমানে গড়ে প্রতিদিন ইসিএলের ২ লক্ষ টন বা তার সামান্য বেশি কয়লা উৎপাদন হচ্ছে। তবে এই হারে কয়লা উৎপাদন হলেও চলতি আর্থিক বছরে ৫১ মিলিয়ন টনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব হবে না। কিন্তু তা যাতে লক্ষ্যমাত্রার খুব কাছাকাছি (৪৭ মিলিয়ন টন) যায়, তার চেষ্টা করা অবশ্যই হচ্ছে। এইকথা বৃহস্পতিবার সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন ইসিএলের সিএমডি তথা চেয়ারম্যান কাম ম্যানেজিং ডিরেক্টর সমীরণ দত্ত।
বৃহস্পতিবার আসানসোলের কুলটির শাঁকতোড়িয়া ইসিএলের সদর দপ্তরে এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রায় না পৌঁছানোর কারণ হিসাবে বলেন, কিছু কিছু জায়গায় সংস্থা কয়লাখনির জন্য জমি পেলেও তা দখল করে আছে। সেই দখলদারদেরকে সরিয়ে সময় মতো কয়লা উৎপাদন শুরু করা যাচ্ছে না। এর সঙ্গে স্থানীয় স্তরে কিছু সমস্যা আছে। সেই সমস্যার সমাধান করতেও কিছুটা সময় লাগে। আজকেই জমি পেলাম কালকেই কয়লা উৎপাদন শুরু হয়ে যাবে এটা ভাবাটা একবারেই ঠিক নয়। কোথাও কোথাও নানা ধরনের স্থানীয় সমস্যা দেখা যায়, আউটসোর্সিং করা কোলায়ারিতে। আবার কখনো কখনো প্রচন্ড বৃষ্টি বা অসময় বৃষ্টি সহ কিছু কিছু সমস্যা হয় ওসিপি বা খোলা মুখ খনিতে। যেমন রাজমহলের ক্ষেত্রে চলতি আর্থিক বছরের প্রথম দিকে ঠিক মতো কয়লা উৎপাদন করা যায় নি। পরে তার ঠিক হয়। পরে কিছু মেশিনও আনা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, কয়লা উৎপাদনে সেটা যে কোন রাজ্যেই হোক সে ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা সবসময়ই থাকে। আলোচনার মাধ্যমে তার সমাধানও অবশ্য হয়ে যায়। আগামী আর্থিক বছর অর্থাৎ ২০২৪-২৫ সালে ইসিএলের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৫৪ মিলিয়ন টন করা হয়েছে। চলতি আর্থিক বছরে লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে না পারলেও, কেন তা বাড়ানো হয়েছে? এই প্রসঙ্গে সিএমডি বলেন, এর কারণ ইতিমধ্যেই ইসিএল নতুন করে বেশ কয়েকটি কয়লা খনি হাতে পেয়েছে। তার মধ্যে কয়েকটির টেন্ডার হয়ে গেছে। দু/একটি টেন্ডার প্রক্রিয়া চলেছে। এছাড়াও ইসিএলের যেসব পরিত্যক্ত কয়লাখনি আছে, সেগুলোলে পিপিপি মডেল বা আউটসোর্সিং করে দেওয়া হচ্ছে। এতে ইসিএলের কয়লা উৎপাদন বাড়বে। তিনি বলেন, কয়েকদিন আগেই আমি যখন ইসিএলের দায়িত্ব নিয়ে আসি তখন প্রতিদিন দেড় লক্ষ টন কয়লা উৎপাদন হতো। কিন্তু এখন তা বেড়ে ২ লক্ষ টন হয়েছে। নতুন কয়লা খনি চালু করলে প্রায় দু হাজারের বেশি নতুন করে কর্মী নিয়োগ করা সম্ভব হবে। বেশি করে জমি দিয়েছেন তারাও একজন করে নিয়ম মেনে চাকরি পাবেন।
তিনি বলেন, কয়লা খনি বন্ধ করা হচ্ছে বলে শ্রমিক সংগঠনগুলি যে অভিযোগ করছে এটা ঠিক নয়। সেগুলো হচ্ছে পিপিপি মডেল বা আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে । চিনাকুড়ি কয়লা খনিতে জলের তলায় ৭২ মিলিয়ন টন উচ্চমানের কয়লা ডুবে আছে। এই কয়লা তোলার জন্য নতুন করে কোন চেষ্টা করা হচ্ছে ? এর জবাবে সিএমডি বলেন, ঐ কয়লা খুবই উন্নত মানের। এর পাশাপাশি এখন আধুনিক কিছু পাম্প বেরিয়েছে। সংস্থা বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে এই ব্যাপারে কথা বলে কিভাবে ঐ কয়লা তোলা যায় তার চেষ্টা অবশ্যই করা হচ্ছে ।
কিন্তু বলতে গেলে গোটা ইসিএল জুড়েই কয়লা চুরি আবারও নতুন করে শুরু হয়েছে। কেন তা আটকানো যাচ্ছে না? যেখানে সিবিআই এই কয়লা চুরি নিয়ে তদন্তও করছে। এর উত্তরে সিএমডি বলেন, বিশেষ ধরনের ইলেকট্রনিক গেজেট সহ সিসিটিভি প্রতিটি ডিপোতে ও কোলিয়ারি এলাকায় লাগানোর কাজ শুরু করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে সমস্ত কয়লা পরিবহন করা গাড়ি গুলিকে জিপিএসোর সাথে যুক্ত করা হবে। সর্বোপরি নজরদারির জন্য আরো সিআইএসএফ চেয়ে কেন্দ্র সরকারের কাছে চিঠি লেখা হয়েছে। সাম্প্রতিককালে ইসিএলের বিভিন্ন এরিয়ায় বেশ কিছু কয়লা সহ ট্রাক, গাড়ি ও সাইকেল ধরা পড়েছে। ইসিএলের তরফে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তার দাবি, সংস্থাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সবরকম পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।