নিজস্ব সংবাদদাতা, দুর্গাপুর:- গত জুন মাসের ২৭ তারিখ শুরু হয়েছে পবিত্র রথযাত্রা উৎসব। দুর্গাপুরের সবচেয়ে পুরনো রথ উৎসব গুলির মধ্যে অন্যতম ইস্পাত নগরীর বি-জোনের রাজেন্দ্র প্রসাদ রোডের জগন্নাথ মন্দিরের রথ উৎসব। প্রতি বছর এই মন্দিরের জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রার বিগ্রহকে রথে করে চিত্রালয় স্থিত রাজীব গান্ধী ময়দানে অস্থায়ী মাসির বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই রথ উপলক্ষ্যে বসে বিশাল মেলা, যা শহরবাসীর কাছে চিত্রালয়ের মেলা নামে পরিচিত। রথের সাত দিন শুধু শহর দুর্গাপুর নয় জেলার বিভিন্ন প্রান্ত এমনকি ভিন জেলা থেকেও মানুষজন চিত্রালয়ের মেলা দেখতে ছুটে আসেন।
এবারের মেলার বিশেষ আকর্ষণ আন্ডারওয়াটার ফিস টানেল অ্যাকুরিয়াম। যেখানে একটি স্বচ্ছ কাঁচের টানেলের মধ্যে দিয়ে হেঁটে যেতে যেতে চারপাশে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ সহ জলজ প্রাণীদের দেখা যায়। এক কথায় বলতে গেলে যা দর্শনার্থীদের সমুদ্রতলের অভিজ্ঞতা দেয়। এবারের রথের মেলার অন্যতম আকর্ষণ এই আন্ডারওয়াটার অ্যাকুরিয়াম। যা দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন আট থেকে আশি। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য দুর্গাপুরের মানুষ এই প্রথমবার আন্ডারওয়াটার অ্যাকুরিয়ামের অভিজ্ঞতা করছেন।
কিন্তু মেলা শুরু হওয়ার প্রথম দিন থেকেই বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে আন্ডারওয়াটার অ্যাকুরিয়ামকে কেন্দ্র করে। মেলার শুরুর দিনে এই আন্ডারওয়াটার অ্যাকুরিয়ামের প্রবেশ মূল্য রাখা হয়েছিল ১০০ টাকা। কিন্তু হঠাৎই দ্বিতীয় দিন থেকে তা ১৫০ টাকা করে দেওয়া হয় কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে। তবুও শিল্পাঞ্চলে আগত সকল সাধারণ মানুষ এই আন্ডারওয়াটার ফিস টানেল দেখবার জন্য ভিড় জমান। কিন্তু আন্ডারওয়াটার অ্যাকুরিয়ামে ভেতর প্রবেশ করে তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য প্রজাতির মাছ ও জলজ প্রাণীর দেখা না পেয়ে ক্ষোভের সৃষ্টি হয় আমজনতার মধ্যে। সাধারণ মানুষের অভিযোগ দুর্গাপুর শহরের দুটি ইউটিউব চ্যানেলের কর্ণধাররা মানুষকে বিভ্রান্তিকর ও মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ওই আন্ডারওয়াটার ফিস টানেল দেখবার জন্য দেদার প্রচার করেছিল। এমনকি মিথ্যা প্রতিশ্রুতি, প্রচার ও নাটকীয়তা বজায় রেখে ওই ইউটিউব ব্লগাররা বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে মোটা টাকা নিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। শুধুমাত্র ওই দুই ইউটিউব ব্লগারই নয় দুর্গাপুরে আরেকটি ইউটিউব ব্লগারও নাকি এই আন্ডারওয়াটার ফিস টানেল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে মোটা টাকা নিয়ে ১০০ টাকার টিকিট বলে ১৫০ টাকা টিকিট করে দেওয়াতে সাহায্য করেছে বলে সাধারণ মানুষের অভিযোগ। আন্ডারওয়াটার ফিস টানেল দেখতে এসে হতাশ হয়ে পড়া মানুষজনেরা জানান, “কান মূলে পয়সা নিচ্ছে এই আন্ডারওয়াটার ফিস টানাল কর্তৃপক্ষ। ওই আন্ডারওয়াটার ফিস টানেলটিতে এমন কোন নামকরা প্রজাতির মাছ নেই যা সচরাচর দুর্গাপুরে অবস্থিত বিভিন্ন অ্যাকুরিয়ামের দোকানে দেখতে পাওয়া যায় না। শুধুমাত্র মানুষকে বোকা বানিয়ে এখানে তারা মোটা টাকা রোজগার করছেন।”

দেখুন সেই অভিযোগের ভিডিও নিচের লিংকে ক্লিক করে
https://www.facebook.com/share/v/15ooE7XQS7
এ দিকে শিল্পাঞ্চলবাসীর ক্ষোভ গিয়ে পড়েছে দুর্গাপুরের ইউটিউব ব্লগারদের ওপরে, তাদের অভিযোগ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে মোটা টাকা নিয়ে মিথ্যা প্রচার করে তাদের প্রমোশন করছে এই সব ইউটিউব ব্লগারার । শুধু তাই নয় দুর্গাপুরের ইউটিউব ব্লগারদের বিরুদ্ধে আরো গুরুতর অভিযোগ এই যে, তারা যদি কাউকে প্রমোশনের জন্য বলেন এবং সেই সংস্থা যদি তাদেরকে দিয়ে প্রমোশন না করায়, তাহলে তারা সেই সংস্থার নামে মিথ্যা ভিডিও বানিয়ে তাদেরকে ব্ল্যাকমেল করেন । অবিলম্বে তাদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করা উচিত বলে মনে করছেন একাধিক শিল্পাঞ্চলবাসী।
অন্যদিকে যে মহিলা ব্লগার ওই আন্ডারওয়াটার ফিস টানেলের ভেতর থেকে লাইভ করে অভিযোগ করেছিলেন সেখানে নাকি তেলাপিয়া,পুটি ও রুই, কাতলা মাছ রয়েছে তিনিও সম্পূর্ণভাবে মিথ্যা প্রচার করেছিলেন, তা যে কেউ গিয়ে দেখতে পারেন। এমত অবস্থায় পরস্পর বিরোধী ইউটিউব ব্লগারদের একে অপরকে ভুল প্রমাণ করার দৌড়ে আদতে লাভ হচ্ছে ওই আন্ডারওয়াটার ফিস টানেলের সংস্থার মালিকের। যারা কিনা দুর্গাপুরের সাধারণ মানুষকে বোকা বানিয়ে ১০০ টাকার টিকিটের বদলে ১৫০ টাকা করে নিচ্ছে বলে সাধারণ দুর্গাপুরের মানুষের অভিযোগ।

দেখুন সেই অভিযোগের বিরুদ্ধে দুর্গাপুরের স্থানীয় দুই ইউটিউব ব্লগারের ভিডিও নিচের লিংকে ক্লিক করে
https://www.facebook.com/share/v/1Gvoo1yDhs
দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের বাসিন্দাদের এইসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সারা রাজ্যে ডিজিটাল মিডিয়া পরিচালন সংস্থা, যার মুখ্য কার্যালয় দুর্গাপুরেই রয়েছে সেই সংস্থা, বেঙ্গল ডিজিটাল মিডিয়া ফাউন্ডেশনের সভাপতি মনোজ সিংহকে এইসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, “দুর্গাপুরের সাধারণ বাসিন্দাদের কাছ থেকে বিশেষ করে দুই ইউটিউব ব্লগারের বিষয়ে আমরা বহু অভিযোগ ইতিমধ্যেই পেয়েছি। ওই দুই ইউটিউব ব্লগার আমাদেরই সংস্থার সদস্য। আমরা খুব তাড়াতাড়ি আমাদের এক্সিকিউটিভ বডির মিটিং-এ ওই দুই ব্লগারের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করবো। প্রয়োজনে আমরা লিখিতভাবে সাইবার ক্রাইম ডিপার্টমেন্টকে এ বিষয়ে তদন্ত করে দেখার অনুরোধ জানাবো। যদি আমাদের ব্যবস্থা গ্রহণের পরও ওই দুই ইউটিউব ব্লগার তাদের কুকর্ম থেকে বিরত না থাকেন তাহলে, প্রয়োজনে আমরা ইউটিউবের সদর দপ্তর ও ফেসবুকের সদর দপ্তরে লিখিত অভিযোগ জানিয়ে ওই দুটি চ্যানেলের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানাবো। তবে দুর্গাপুরের আরেক ইউটিউব ব্লগার আমাদের সদস্য না হওয়ার ফলে আমরা তার বিরুদ্ধে কোন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারব না। তাই সাধারণ মানুষের যদি ওই ইউটিউব ব্লগারের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ থাকে তাহলে তারা তা স্থানীয় সাইবার থানাতে অভিযোগ দায়ের করতে পারেন। তবে আমাদের যে দুজন সদস্যর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে, আমরা তাদেরকে ফোন মারফত সচেতন করার সাথে সাথে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির পথে এগোচ্ছি। বেঙ্গল ডিজিটাল মিডিয়া ফাউন্ডেশন কখনোই কোন মিথ্যা প্রমোশন, প্রচার ও লাভের জন্য সমাজের সর্বস্তরের মানুষের কাছে কোন রকম বিভ্রান্তিকর খবর,পরিবেশন করে না। আগামী দিনেও দুর্গাপুর তথা রাজ্যের সমস্ত মানুষের কাছে বেঙ্গল ডিজিটাল মিডিয়া ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে জানানো হচ্ছে আপনাদের কাছে যদি বেঙ্গল ডিজিটাল মিডিয়া ফাউন্ডেশনের কোন সদস্যের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ থাকে তাহলে দয়া করে আমাদেরকে জানান আমরা অবিলম্বে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ব্যবস্থা করব।”

দেখুন সেই অভিযোগকারী ইউটিউব ব্লগারের ঘটনার পরের তাদের মতামত ভিডিও লিংকে ক্লিক করে
চিত্রালয় মেলা ময়দানে অবস্থিত আন্ডারওয়াটার ফিস টানেলকে কেন্দ্র করে এখন বিতর্কের চরম সীমায় পৌঁছেছে। শিল্পাঞ্চলের যে সকল মানুষ ওই আন্ডারওয়াটার ফিস টানেল একবার গিয়েছেন, তারা বাইরে এসে সকল সাধারণ মানুষের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছেন যাতে তারা তাদের মতন ভুল করে ১৫০ টাকার টিকিট কেটে ওই আন্ডারওয়াটার ফিস টানেলের ভেতরে না যান। এ বিষয়ে দুর্গাপুরেরই আরেকটি ইউটিউব ব্লগার আন্ডারওয়াটার ফিস টানেলের সম্বন্ধে ঘটনাস্থল থেকে বিস্তারিত তথ্য পরিবেশন করেছে, যা সারা রাজ্যের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য বলে মনে হয়েছে। এখন প্রশ্ন দুর্গাপুরের অবস্থিত যে সকল ইউটিউব ব্লগাররা রয়েছেন তারা দুর্গাপুরের উন্নতির জন্য সত্যিই কোন কাজ করেন? নাকি মিথ্যা প্রচার ও নিজেদের টাকা রোজকারের এক মাধ্যম বানিয়ে ফেলেছেন ইউটিউব ব্লগগুলিকে? দুর্গাপুরের মানুষ এই সব ইউটিউব ব্লগারদের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। আগামী দিনে এই সব ইউটিউব ব্লগারদেরকে আর ফলো না করার একরকম সিদ্ধান্ত ইতিমধ্যেই নিয়ে ফেলেছেন শিল্পাঞ্চলের বাসিন্দারা বলে জানা যাচ্ছে।







