বিশেষ প্রতিনিধি, দুর্গাপুরঃ নিখোঁজ মালিকের একটি বাড়ী। তাও আবার দুর্গাপুরের বিলাসবহুল এলাকা সিটিসেন্টারে। যেখানে ন্যূনতম একটি বাড়ীর দাম ৫৫ থেকে ৬০ লক্ষ টাকা, সেই বাড়ীরই বেআইনী হস্তান্তর হল ২৫ লক্ষ টাকায়। প্রশাসনের তাবড় কর্তা- ব্যক্তিদের নাকের ডগায় এমন কান্ডটা করলেন কে ?
তিনি আর কেউ নন, আসানসোল- দুর্গাপুর উন্নয়ন সংস্থা (এ ডি ডি এ) র ঘরের ছেলে অতনু। অতনু চক্রবতী। একজন সাদামাঠা কেরানী। দেখে ‘বোকা-সোকা’, সাদামাঠা মনে হলেও অতনু আদৌ যে তা নন, তার একের পর এক কাজকারবারে, সংস্থার কর্মী থেকে কাজের সুবাদে ‘আড্ডা’ য় যাওয়া মানুষজনের কাছে সে ‘ছাপ’ রেখেই চলেছেন তিনি, একের পর এক। আর সব জেনে বুঝে সবই সইছেন সংস্থার মুখ্য কর্তা থেকে চাপরাশি- সকলেই।
প্রশ্ন- কেন? কেন সবাই আস্কারা দিচ্ছেন অতনু কে?
উত্তর- সম্ভবতঃ সকলেই ফিট। অথবা, অতনুর “সন্মান” রক্ষা করাই হল ‘আড্ডা’ র সন্মান রক্ষা করা, তাই এই নিস্পৃহতা।
বারোভূতের আড্ডায় রসে বসে থাকেন সবাই। কেউ-ই নাকি কম নন। বিধাননগর,ভিড়িঙ্গিঁ, সিটিসেন্টারের এক শ্রেনীর জমি, বাড়ীর দালাল আড্ডায় অফিসার, কেরানী, কর্মচারীদের একাংশকে নাকি যাকে বলে “ভরিয়ে” দিচ্ছেন। আর এ সবই হচ্ছে আড্ডাকে নিজের কব্জায় রাখা প্লানিং বিভাগের এককর্তা, সার্ভে বিভাগের দুই কর্মী আর ল্যান্ড বিভাগের গুটিকয় কেরানীর হাত ধরে। সম্প্রতি আড্ডায় ‘মেজকর্তা’ র পদ থেকে উত্তরবঙ্গে বদলি হওয়া এক আধিকারিকের কাছে “সবকিছু’ ” পৌঁছে দেওয়ার ঠিকা ও নাকি নিয়ে নিয়েছিলেন অতনু। এক কোম্পানীর কর্ণধার বলেন, ” আমার কাছে মোবাইলে রেকর্ড আছে। বদলি হওয়া সাহেবের জন্য কি কি চাওয়া হয়েছিল। আমাকে কাটমানির জন্য জোর জবরদস্তি করেছিলেন অতনু। আমি সে সবই জমা দিচ্ছি উপযুক্ত জায়গায়। তারপর দেখি, কোথাকার জল কোথায় দাঁড়ায়?” জল দাঁড়াক বা না দাঁড়াক, অতনুর ঘরবাড়ী বেশ দাঁড়িয়ে যাচ্ছে একের পর এক। আর কেরানীর ‘নকল বুঁদি’ র গড় রক্ষায় প্রহরী সেজে দাঁড়িয়েছেন আড্ডারই ধোপ দুরস্ত কিছু কর্তা বলে অভিযোগ। ওই আধিকারিকেরাই পরামর্শ দিলেন- আর সেই মোতাবেক আগে থেকে “ফিট” করে রাখা লোকেরা সিটিসেন্টারের বিতর্কিত জবরদখল করে রাখা ওই বাড়ীর ভ্যালুয়েশন করলেন। বাজার দর মোতাবেক আলাউদ্দিন খান বিথির বাড়িটির দাম ধার্য হল ৩৮ লক্ষ টাকা। সেই বাড়ীর আসল মালিক সুকেশ চন্দ্র বসুর বন্ধু, অজিত চ্যাটাজির কাছে অতনু ‘কিনেছিলেন ২৫ লক্ষে। অর্থাৎ ১৩ লক্ষ টাকার হেরফের কে করলেন? আড্ডারই কর্মচারী। আন্ডার ভ্যালুতে কেনা বাড়ীটি যাতে আইনসিদ্ধ হয়, তাই আড্ডার কিছু পন্ডিত কর্তা চোর বাঁচাতে ফিসফিসিয়ে বুদ্ধি দিলেন,” ভ্যালুয়েশনের সাথে কেনা দামের যে ফারাক তার ১০ শতাংশ ‘ফাইল’ হিসেবে জমা করুক অতনু,নইলে আরো ফাঁসবে ভবিষ্যতে”। কর্তার ইচ্ছেয় সে কর্মটিও করে ফেললেন কেরানী। জমাও হয়ে গেল সে টাকা। অর্থাৎ ন্যূনতম ৬০ লক্ষ টাকার বাড়ী অতনুর কব্জায় এল প্রায় সাড়ে ২৬ লক্ষে। সাধু সাধু ……. { চলবে }