সঙ্গীতা চৌধুরীঃ- আমাদের কেউ কিছু বললে আমাদের যদি মন খারাপ হয়ে যায় তাহলে অবশ্যই এই প্রতিবেদনটি আমাদের মন দিয়ে পড়া উচিত। একবার একজন ভক্ত প্রশ্ন করেছিলেন,“ একটা খারাপ অভিজ্ঞতা হল। পাত্রপক্ষ আমাকে দেখতে এসে দুদিন বাদে জানাল তাদের মেয়ে পছন্দ হয়নি। মন খুব খারাপ। কী করি?” স্বামী সোমেশ্বরানন্দ মহারাজ এই প্রসঙ্গে বলেছেন,“অন্যের সার্টিফিকেটের উপর তোমার অস্তিত্ব নির্ভর করে না। নিজের পায়ের উপর দাঁড়াও, মানসিকভাবে। তুমি এক অনন্য ব্যক্তি, এক স্বাধীন সত্তা, অনুভব করো। ভিক্ষাপাত্র নিয়ে দাঁড়াতে নয়, তুমি জন্মেছ ইতিহাস রচনা করতে। একথা কখনও চিন্তা করেছ? তোমার ধর্ম, বেদান্ত তো এটাই শেখায়-নিজের অসীম শক্তি, নিজের দিব্য সত্তাকে ভুললেই মানুষ দুঃখ পায়। তুমি চন্দ্রমল্লিকা না রজনীগন্ধা, শিউলি অথবা জুঁই, এটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। প্রশ্ন হলো, তুমি কি কলি থেকে ফুল হয়ে ফুটে উঠছো? এটাই জীবন, এটাই মনুষ্যত্ব, এটাই ধর্ম।”
মহারাজ আরও বলেন,“ যারা তোমায় দেখতে এসেছিলেন সেদিন, তারা এই পরীক্ষায় পাস করেছেন কিনা জানি না। কিন্তু তোমায় তো পাস করতে হবে। তুমি ফুল হয়ে ওঠো। নিজের সুপ্ত সম্ভবনাকে প্রকাশ করো। বেদান্ত তোমায় মুক্ত হতে বলে। সমাজের প্রভাব থেকে মুক্ত, পরনির্ভরতা থেকে মুক্ত, দাঁড়াতে বলে নিজের পায়ে। তবুও আমরা অন্যদের সার্টিফিকেট চাই, অন্যের হাততালির উপর ভরসা করি বেশি আরও এক সমস্যা-নিজের সমস্যা মিটে গেলেই খুশি হই, ভুলে যাই যে এই সমস্যা অন্যদেরও আছে। তাদের সতর্ক করি না, তাদের পথ দেখাই না, সাহায্যের জন্য এগিয়ে যাই না। তুমি তো ইতিহাস রচনা করতে এসেছ। এগিয়ে এসো, পথ দেখাও মানুষকে। মেয়েদের শেখাও মাথা উঁচু করে বাঁচতে। কলি থেকে ফুল হয়ে উঠতে সাহায্য করো। সবাইকে সূর্যমুখী করে তুলতে চেয়ো না। নিজের স্বভাব অনুযায়ী জুঁই হতে দাও, জবা, গোলাপ, রজনীগন্ধা, কদম। সবাই নিজের মতো হোক, ফুল হয়ে ফুটুক নিজের স্বাধীন সত্তা নিয়ে।”
মহারাজ আরও বলেন, “শুধু সমাজের দোষ নিয়ে চিৎকার করে কি হবে? মানুষকে শক্তিশালী করে তোল। সে যাতে নিজের সমস্যা নিজে মেটাতে পারে এটা শেখাও। মেয়েদের দুঃখের মূল কারণ পুরুষ নয়, দুঃখের আসল কারণ মেয়েরা নিজের শক্তির বিষয়ে সচেতন নয়। এটাই বলছে বেদান্ত- দুঃখের মূল কারণ অজ্ঞান, নিজের সত্তাকে না জানা। আত্মজ্ঞানের নামে আগেই পরমাত্মায় না গিয়ে জীবাত্মাকে তো চেনো। দৈনন্দিন জীবনে নিজের আমিকে অনুভব করো। অনুভব করো নিজের সুপ্ত শক্তিকে, ভেতরের অসীম সম্ভাবনাকে। এটাই কলি। একে ফুল করে তোল। নিজেকে প্রকাশিত করো মানুষ হিসাবে। নিজের ভাগ্য নিজে গড়ে তোল। তুমি নারী না পুরুষ সেটা ভুলে যাও। এক মানুষ হয়ে জন্মেছ তুমি, মানুষ হয়ে বেঁচে থাকো।”


















