নিজস্ব প্রতিনিধি, দুর্গাপুরঃ- বুধবার শিল্পশহরে আসবেন কলকারখানার দেবটা বিশ্বকর্মা। আর সোমবার ভোরবেলায়, যাকে বলে পাতাল ফুঁড়ে শহর দুর্গাপুরের শিল্প তালুকের একটি পুকুরের থেকে সশরীরে মর্তে এলেন দেবী মনসা! বিশ্বাস করুন আর নাই করুন, “দেবী” র আগমনকে ঘিরে দু দিন যাবৎ বিস্তর শোরগোল পড়ে গেছে দুর্গাপুরের অঙ্গঁদপুর- রাতুড়িয়া শিল্প তালুকে। কাতারে কাতারে মানুষের থিক থিকে ভিড়। একটি পুকুড়ের পাড়ে। সেখানে, উদোম গায়ে তরতর করে জলে নামছেন জটাধারী এক বাবাজি। কপালে তীলক, কোমরে লাল কৌপিন। ও-ই, ও-ই যে তিনি নামলেন। ডুব দিলেন। জলে হাঁতড়ে বেড়ালেন প্রায় তিরিশ সেকেন্ড। তারপর দু হাতে তুলে ধরলেন বিশালাকার একটি গোখরো! হৈ হৈ করে উঠলো জনতা। বেজে উঠল শাঁখ। আর উপচে পড়া ভিড় ভিজে গেল ভক্তি রসে! “ওই তো রে, দেখ দেখ, মা মনসা-ই তো!” দেবীকে গলায় জড়িয়ে বিজয়ীর গর্বে পুকুরের জল ভেঙ্গে ধীর পায়ে উঠে আসছেন ‘বাবাজি’ ফনীভূষন মন্ডল আস্ত একটি গোখরো। গায়ে গতরে বেশ ভারি। রাঢ় বঙ্গেঁ খুব প্রচলিত এই সাপ পাড়ার ঝোপ-ঝাড়, এমনকি গৃহস্থের আনাচে কানাচে গ্রীষ্ম- বর্ষায় উঁকি মারে, ইঁদুরের খোঁজে। কিন্তু শহর দুর্গাপুরের ৩৮ নম্বর ওয়াডের অঙ্গঁদপুরে,পুকুর থেকে উঠে আসা এই গোখরো নাকি যে- সে গোখরো নয়! “ইনি-ই দেবী মনসা। আসার আগে বাবাজিকে স্বপ্নাদেশ দিয়ে, তবেই ইনি এসেছেন। এনাকে আমরা দেবী মানি,” বললেন প্রতীমা ঘোষ, রাতুড়িয়ার এক গৃহবধূ। পুকুর থেকে’দেবী’ কে তুলে এনে মন্দিরে জায়গা দিলেন বাবাজি। ব্যাস! ঘটা করে শুরু হয়ে গেল পূজো! টানা দুদিন ধরে পিল পিল করে লোকজন দৌড়াচ্ছে বাবাজির মন্দিরে, দেবী দর্শন করতে। কিন্তু, বাস্তব কি বলছে? পুকুর থেকে কি সত্যি করেই সাপ উদ্ধার সম্ভব? বিজ্ঞান মোতাবেক, জলে খরিশ, চোঁড়া নামে জলে। তবে সাপকে কি আটক করে মন্দিরে রাখা যায়? দুর্গাপুরের বিভাগীয় বনাধিকারিক, মিলন মন্ডল বললেন, “বন্যপ্রানী সংরক্ষন আইন মোতাবেক এভাবে সাপ বা কোনও জীব জন্তুকেই আটক রাখা বেআইনী।” তিনি বলেন,”অঙ্গঁদপুরে ঠিক কি হচ্ছে, আমরা বিস্তারিত খোঁজ নিয়ে যথাযত ব্যবস্থা নেব।”