সংবাদদাতা,বাঁকুড়া:– কাগজের তৈরি চৌকো তাস তো আমরা সকলেই চিনি। কিন্তু কাপড় দিয়ে তৈরি গোলাকার একরকম তাস এক সময় দিল্লির দরবারে খেলা হত, যার নাম ছিল “গঞ্জিফা”। এমনকি বাংলার ঘরে ঘরেও একসময় এই তাস খেলা হতো। তবে বাংলায় এসে তাসের নাম হয় দশাবতার তাস। তবে ইতিহাসপ্রেমী এবং শিল্প অনুরাগী ছাড়া বেশিরভাগ মানুষ জানেনই না এই দশাবতার তাসের নাম। হাতে তৈরি এই তাসে শিল্পীদের নিপুন রং তুলির টানে ফুটে ওঠে বিষ্ণুর দশটি রুপ অর্থাৎ দশটি অবতারের রূপ। বর্তমান সময়ে অবশ্য এই তাস আর খেলা হয় না। এই দশাবতার তাস এখন শুধুই শিল্প নির্দশন এবং বিষ্ণুপুরের ঐতিহ্যবাহী শিল্প হিসেবেও পরিচিত, যা সম্প্রতি ভারতীয় ডাক বিভাগের বিশেষ খামেও জায়গা করে নিয়েছে।
বাংলায় এই দশাবতার তাসের প্রচলন শুরু হয় বিষ্ণুপুরের রাজা বিরহামবীরের সময়। রাজা একবার দিল্লি সফরে গিয়েছিলেন তখনই গোলাকৃতির “গঞ্জিফা” তাস তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এরপর বিষ্ণুপুরে যখন রাজস্থানের ফৌজদারদের যোধ্যা হিসেবে নিয়ে আসা হয় তখন তাদের রাজা আদেশ দেন বিষ্ণুপুরের ঘরানায় গঞ্জিফা তৈরি করতে। তারপর থেকেই ফৌজদার পরিবার তৈরি করে আসছে এই বিশেষ তাস যার নাম এখন দশবতার তাস। এখনও বিষ্ণুপুরের ফৌজদার পরিবার তৈরি করেন এই দশাবতার তাস। তবে পর্যাপ্ত অর্ডার এলে তবেই বানানো হয় এই বিশেষ ঐতিহাসিক তাস, জানালেন শিল্পীরা। দশবতার তাসের শিল্পী শীতল ফৌজদার জানান “আগে এই তাসের বিপুল রমরমা ছিল, দশাবতার তাস খেলাও হতো ঘরে ঘরে, এখনও হয় কিছু জায়গায়। তবে বর্তমানে বেশিরভাগ মানুষ জানেনই না এই তাসের নাম”
তবে সাম্প্রতি ভারতীয় ডাক বিভাগ বিশ্বের দরবারে দশাবতার তাসের ঐতিহ্য তুলে ধরতে বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে।আর ইতিহাসের পাতা থেকে দশাবতার তাসকে পুনরুদ্ধারের ডাক বিভাগের এই প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন বাঁকুড়া বিষ্ণুপুরের সাধারণ মানুষ।