সঙ্গীতা চোধুরী( চ্যাটার্জী)ঃ- বন্ধুরা অনেক সময় ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা প্রশ্ন করে থাকে যে, কেন দেবাদিদেব মহাদেবকে নেশাজাত দ্রব্য ভাঙ নিবেদন করা হয়? অন্য ধর্মের মানুষেরা তো আরো এক কদম এগিয়ে প্রশ্ন করে যে, ভগবান হয়ে তিনি যদি নেশা করতে পারেন তাহলে সাধারণ মানুষ হয়ে আমরা নেশা করলে কী দোষ? এখন সনাতন ধর্মালম্বীরা এই সকল প্রশ্ন শুনে রেগে যান, রেগে যাওয়ার কারণ শুধু এটা নয় যে, আমাদের ভগবানকে নিয়ে তারা অসম্মান করছে রেগে যাওয়ার কারণ এটাও বেশিরভাগ সনাতন ধর্মাবলম্বী জানেনই না যে, ভগবানকে কেন ভাং নিবেদন করা হয়? নিজেদের অস্বস্তি ঢাকতে তারা রাগ দেখায়, কিন্তু সত্যিটা যদি আপনি জানেন তাহলে আর কখনো অস্বস্তিতে পরবেন না এবং ভিন্নধর্মী মানুষদের উত্তর দিতে আপনার সুবিধা হবে, গর্বের সাথে মাথা উঁচু করে বলতে পারবেন আমাদের সনাতন ধর্মে এতটুকু খারাপ নেই।
চলুন আজ জেনে নিই দেবাদিদেব মহাদেব যিনি ভোলেবাবা যাকে আদর্শ স্বামী, আদর্শ বাবা বলা হয়, যিনি ভক্তের ভগবান, অল্পেই যিনি সন্তুষ্ট হন, কেন তাকে ভাঙ নিবেদন করা হয়?
আসলে বন্ধুরা এই ঘটনা জানতে গেলে আমাদের সমুদ্র মন্থনের সময় চলে যেতে হবে। সমুদ্র মন্থনের সময় দেবতা এবং অসুর সবাই মিলে সমুদ্র মন্থন করছিল। মন্দার পর্বতকে মন্থন দণ্ড করা হয়েছিল এবং বাসুকি নাগকে করা হয়েছিল রজ্জু, সমুদ্রের মধ্যে মন্দার পর্বতকে স্থির ভাবে রাখবার জন্য স্বয়ং নারায়ণ কূর্ম অবতার ধারণ করে মন্দার পর্বতকে স্থির করেছিলেন, মন্থন কার্য চলার সময় একের পর এক জিনিস নির্গত হচ্ছিল এবং তা দেবতা এবং অসুরদের মধ্যে সমান ভাগে ভাগ হয়ে যাচ্ছিলো, এইরকম অবস্থায় একবার মন্থন চলতে চলতে তীব্র হলাহল বিষ নির্গত হলো এবং সেই বিষ সমগ্র জগতে ছেয়ে ফেলল, দেবতা অসুর সবাই সেই বিষের দাপটে প্রাণহীন নিস্তেজ হয়ে পড়তে শুরু করলেন, নারায়ণ সেই সময় মন্থন কার্যে ব্যস্ত ছিলেন তাই দেবতারা মহাদেবের কাছে ছুটলেন,মহাদেব তখন সৃষ্টিকে রক্ষা করবার জন্য নিজে সেই তীব্র হলাহল বিষ গ্রহণ করলেন ও নিজের কন্ঠে ধারণ করে রাখলেন। এই বিষ গ্রহণ করার ফলে দেবাদিদেব মহাদেবের শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে গেলো, তখন মহাদেবের শরীরকে ঠান্ডা করবার জন্য তাকে ভাং খাওয়ানো হলো। আসলে ভাং খেলে শরীরের টেম্পারেচার কম হয়ে যায়।
এখন যে সকল মানুষরা বলেন বা ভিন্নধর্মী মানুষরা সনাতন ধর্মকে নিয়ে মজা করবার জন্য বলেন ঠাকুর ভাং খাচ্ছেন , আমাদের সকলকে ভাং খাওয়ার পরামর্শ দিতে, তাদের কি আপনি এটা সহজেই বলতে পারবেন , ঠাকুর ভাং খেয়েছিলেন বিষ গ্রহণ করার পর, আপনি আগে বিষ খেয়ে দেখুন তারপর না হয় ভাং খাবেন! অর্থাৎ বিষে বিষে বিষক্ষয়ের মতো বিষের প্রভাব কাটাবার জন্য তিনি ভাং খেয়েছিলেন এমনি এমনি ভাং খাননি, তাই ভগবানের সাথে তুলনা করবার আগে বা ভগবানকে নিয়ে মজা করা করবার আগে সনাতন ধর্ম কী তা জানুন।