জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,মঙ্গলকোটঃ- এসো মা লক্ষী বস ঘরে – হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী লক্ষী হলেন সম্পদের দেবী। হিন্দুদের বিশ্বাস নিষ্ঠা ও ভক্তি সহকারে দেবীর পুজো করলে সুখ, সম্পদ বৃদ্ধি পাবেই। সেই বিশ্বাসের উপর ভর করে দুর্গাপুজোর পর পঞ্চমী তিথিতে সমগ্র দেশজুড়ে হিন্দুরা লক্ষীপুজো করে। ব্যতিক্রম ছিলেন না পশ্চিম মঙ্গলকোটের বালিডাঙার ‘ঘোষ’ পরিবার।
১৮৫৬ সালে ‘ঘোষ’ পরিবারের অন্যতম সদস্য কালীপ্রসন্ন ঘোষ নিজের বাড়িতে লক্ষীপুজো শুরু করেন। সেই পুজো আজও সাড়ম্বরে পালিত হয়ে চলেছে মঙ্গলকোটের বালিডাঙা গ্রামে। এখানে লক্ষী প্রতিমা অন্যান্য জায়গার থেকে কিছুটা আলাদা। মায়ের সঙ্গে থাকেন জয়া-বিজয়া। মায়ের গায়ে সোনা ও রূপোর তৈরি গহনা থাকলেও মায়ের হাতে ধানের শীষ থাকবেই। তখন ধানের শীষ হাতে মা’কে সত্যিই অন্যরকম মনে হয়।
যেবছর পুজোর দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবার হয় সেদিন গ্রামের ছেলেমেয়েদের নিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। পুজোর সময় সেটা হয় বাড়তি আকর্ষণ। যদিও এবার সেটা হয়নি। কারণ দ্বিতীয় দিন হলো রবিবার।
দেশের উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব, পশ্চিম – যে প্রান্তেই থাকুন না কেন, লক্ষীপুজোর সময় ঘোষ বাড়ির সদস্যরা নিজ গ্রামে ফিরে আসেন। এমনকি আত্মীয় স্বজনেরা এসে উপস্থিত হন। পারিবারিক পুজো হলেও সমগ্র গ্রামবাসী একসাথে পুজোর আনন্দে মেতে ওঠেন। বাড়ির কচিকাচাদের আনন্দ দেখবার মত। পুজোর পরবর্তী সাতদিন এই বাড়ির কোনো সদস্য মাংস, ডিম, পেঁয়াজ বা রসুন স্পর্শ করেন না, শুধু মাছ খান।
পুজোর সময় বিজন ঘোষ, মোহিত ঘোষ, চঞ্চল ঘোষ, স্নেহাংশু ঘোষদের সঙ্গে সঙ্গে সৌশ্রুতি, সৌমিতিদের মত কচিকাচাদের উৎসাহ দেখলে মনে হবে নীলাকাশে মনের আনন্দে উড়তে থাকা কোনো পাখি।
একবছর পর গ্রামে এসে মোবাইলে সারাক্ষণ গ্রামের ও আত্মীয়দের ছবি তুলতে ব্যস্ত প্রাণচঞ্চলে ভরপুর ছটফটে সৌমিতি বলল – বাবার কর্মসূত্রে কাঁথিতে থাকি। লক্ষীপুজোর সময় যখন গ্রামের বাড়িতে আসি তখন যে আনন্দ হয় সেটা প্রকাশ করার মত ভাষা আমার নাই। অপেক্ষা করি পরের বছরের জন্য। কথা শেষ হওয়ার আগেই আবার ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে সৌমিতি। প্রশ্ন করতেই হেসে ফেলে তার দিদি সৌশ্রুতি।
ঘোষ বাড়ির অন্যতম সদস্য স্নেহাংশু কর্মসূত্রে কানপুরে থাকেন। তিনি বললেন – বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজো হলেও আমাদের কাছে লক্ষীপুজো। এরসাথে আমাদের পারিবারিক আবেগ জড়িয়ে আছে। এইসময় আমরা পরিবারের সমস্ত সদস্য একজায়গায় মিলিত হওয়ার সুযোগ পাই। তখন যে আনন্দ হয় সেটা কার্যত অবর্ণণীয়।