জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,পূর্ব বর্ধমানঃ- শহরের মানুষ দূর থেকে দেখলে মনে করবে হয়তো করোনা অতিমারি অথবা যুদ্ধে যারা প্রাণ হারিয়েছে তাদের গণদাহ চলছে। সংখ্যাটা অস্বাভাবিক বেশি হওয়ার জন্য শ্মশানের পরিবর্তে যেখানে ফাঁকা জায়গা পাওয়া গেছে সেখানেই দাহ করে দেওয়া হচ্ছে।
বাস্তবে অবশ্য সেটা নয়। প্রতিবছর আমন বা বোরো ধান উঠতে শুরু করার সময় গ্রাম বাংলায় এই দৃশ্য খুব স্বাভাবিক হয়ে ওঠে। মাঠ থেকে ধান তোলার পর খামারে ধান ঝাড়ার কাজ যেমন চলছে তেমনি মাঠে পোড়ানো হচ্ছে নাড়া। পাশাপাশি দুর্ঘটনা বা পরিবেশের কথা না ভেবে গলি থেকে রাজপথ – প্রধান সড়ক থেকে থেকে শুরু করে গ্রামের রাস্তার উপর মিলে দেওয়া হচ্ছে ধানের কুটুরি।
অন্যদিকে মাঠে পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে নাড়া। এরফলে পরিবেশ যেমন দূষিত হচ্ছে তেমনি মাটির মধ্যে বসবাসকারী চাষের পক্ষে উপকারী ব্যাকটেরিয়া, কেঁচো, ছত্রাক প্রভৃতি অণুজীবগুলো মারা যাচ্ছে। জমির স্বাভাবিক উর্বরতা শক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আবার উপরের স্তরের মাটি পুড়ে গিয়ে চাষের অনুপযুক্ত হয়ে পড়ছে।
প্রতি বছর ব্লক ও স্হানীয় প্রশাসন থেকে চাষীদের বারবার সতর্ক করা হলেও পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হচ্ছেনা। সামান্য খরচ বাঁচাতে গিয়ে পরিবেশ ও জমির মারাত্মক ক্ষতি করা হচ্ছে।
কথা হচ্ছিল আমেরিকায় গবেষণারত বাঙালি বিজ্ঞানী ড. বিশ্বরূপ ঘোষের সঙ্গে। তিনি বললেন- রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহারের ফলে জমির স্বাভাবিক উর্বরতা শক্তি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। জমিতে নাড়া পোড়ানোর ফলে সেই ক্ষতির পরিমাণ বহুগুণ বেড়ে যাচ্ছে। ফল কিন্তু ভবিষ্যতের পক্ষে মারাত্মক হবে। তিনি আরও বললেন- নাড়াগুলো জমি থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিবর্তে যদি জমির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয় তাহলে জমির উর্বরতা শক্তি বাড়বে।
জামালপুরের বিধায়ক অলোক মাজি বললেন – সত্যিই এটা একটা বড় সমস্যা। জোর করে নাড়া পোড়ানো বা রাস্তার উপর কুটুরি মিলে দেওয়ার প্রবণতা বন্ধ করা যাবেনা। জনপ্রতিনিধি হিসাবে আমি অবশ্যই আমার এলাকার চাষীদের সচেতন করার জন্য দ্রুত আলোচনায় বসব।