শুভ্রাচল চৌধুরী, বাঁকুড়াঃ– শীত পড়তেই শুরু হয়ে গেছে পর্যটনের মরশুম। প্রকৃতিপ্রেমী পর্যটকরা বেরিয়ে পড়েছেন জল, জঙ্গল, পাহাড়ে, সমুদ্র সৈকতে ঘুরতে। আর এই সময়ে প্রতিবছর রাজ্যের অন্য়তম জনপ্রিয় পর্যটন স্থল বাঁকুড়ার রানী শুশুনিয়া পাহাড়ে ভিড় জমান প্রকৃতি প্রেমী পর্যটকরা। কেউ ট্রেকিং করতে, কেউ পিকনিক করতে কেউ বা আবার বন্ধু বান্ধব প্রিয়জনের সঙ্গে সুন্দরী শুশুনিয়ার কোলে সময় কাটাতে। কিন্তু এই পর্যটকদের অসচেতনতায় একদিকে যেমন দূষণের কোপে পড়ছে বাঁকুড়া সুন্দরী অন্যদিকে তা পাহাড়ের বাস্তুতন্ত্রেও প্রভাব ফেলছে ও পাহাড়ের প্রকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট করছে।
তাই পর্যটনের মরশুম শুরু হতেই বাঁকুড়ার শুশুনিয়া পাহাড়ের পরিবেশ রক্ষায় মানুষকে সচেতন করতে কোমর বেঁধে নেমে পড়ল বন দপ্তর। বন দপ্তরের ছাতনা ফরেস্ট রেঞ্জ ও শুশুনিয়া বীটের বনকর্মী এবং আধিকারিকরা একগুচ্ছ নির্দেশিকা ছাপিয়ে লিফলেট বিলি করতে শুরু করেছেন। পাশাপাশি শুশুনিয়া মাঙ্গলিক সংঘ ও ছাতনা বনদপ্তর যৌথ উদ্যোগে একটি সচেতনতা মিছিলেরও আয়োজন করা হয়। এই মিছিল থেকে শুশুনিয়া পাহাড়ের সবুজ রক্ষা এবং পাহাড়ের ইকো সিস্টেম বজায় রাখার আবেদন জানানো হয়।
প্রসঙ্গত শুশুনিয়া পাহাড়ের পরিবেশ রক্ষায় একগুচ্ছ সতর্কতাবিধি বেঁধে দিয়েছে বন দপ্তর। যেমন শুশুনিয়া পাহাড় এবং সংলগ্ন এলাকায় প্লাস্টিক ব্যবহার পুরোপুরি নিষিদ্ধ। পাহাড়ে খালি জলের বোতল,চিপস সহ খাদ্য সামগ্রীর প্যাকেট এবং যে কোনো প্রকারের বর্জ্য পদার্থ ফেলা চলবেনা। জঙ্গলের গাছে পেরেক পোঁতা,গাছের গুড়িতে খোদাই করে নাম লেখা,গাছের ছালের মধ্যে কয়েন সাঁটিয়ে দেওয়া এমন কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে সকলকে। পাশাপাশি, পাহাড়ের ওপরে শুকনো পাতা বা গাছে আগুন লাগানো, সিগারেট বা বিড়ির অবশিষ্ট অংশ ফেলা, কোন দাহ্য পদার্থ নিয়ে পাহাড়ে চড়া নিষিদ্ধ। এছাড়া বিনা অনুমতিতে রক ক্লাইম্বিং অর্থাৎ পাহাড়ের শীর্ষে চড়া, পাহাড়ের পাদদেশে তাবু খাটানো চলবে না। শব্দ দুষণ বিধি লঙ্ঘন করে জোরে মাইক বাজালেও এখানকার বাস্তুতন্ত্রে তা প্রভাব ফেলবে। তাই মাইক বাজাতে হবে সীমিত শব্দের মধ্যে। স্থানীয় বাসিন্দা থেকে পর্যটক, এলাকার হোটেল ব্যবসায়ী, দোকানদার এবং ট্রেকিংয়ের জন্য আসা পাহাড় প্রেমী সকলকেই বন দপ্তরের এই জারি করা সতর্কতা বিধি মেনে চলার আহ্বান জানাচ্ছে বন দপ্তর। আর সেই জন্য সচেতনতা গড়তে এই কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে বলে জানান ছাতনা বন দপ্তরের রেঞ্জার এষা বোস।
বনদপ্তরের মতে সাধারণ মানুষ থেকে পর্যটক সকলকে সচেতন করার সবরকম প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। এখন মানুষ কতটা সচেতন হয় সেটাই দেখার। তবে প্রয়োজনে বনদপ্তরের জারি করা বিশেষ নির্দেশবিধি অমান্যকারীদের জরিমানার ব্যবস্থা করা হতে পারে বলে বনদপ্তর সূত্রে জানা গেছে।