জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জীঃ- ‘সংসার করা/ কংসের কারা/ কতনা বেদনা বিধুর’- কার লেখা জানিনা কিন্তু সংসারে সব মানুষের মধ্যে সম্পর্কের জটিলতা বর্তমান পরিস্থিতিতে খুবই স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে উঠেছে। সবকিছু স্বাভাবিকভাবে চলতে চলতে অসময়ের বৃষ্টি কিভাবে মানুষের স্বাভাবিক জীবন যাপনের পথে বিঘ্ন ঘটিয়ে দেয় তারই একঝলক নমুনা দেখা গেল সজল-মল্লিকা জুটি নির্দেশিত ও ‘চালচিত্র’ পরিবেশিত স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবি ‘হঠাৎ বৃষ্টি’।
১৬ মিনিট ৩৫ সেকেন্ডের এই কাহিনীর শুরুতেই দেখা যাচ্ছে – প্রেমিক ঈশান তার প্রেমিকা তিস্তাকে ভিডিও কলের মাধ্যমে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাচ্ছে। পরে নিজেদের ভবিষ্যত জীবনের পরিকল্পনা করছে। শুরুটা দেখে মনে হতে পারে এটা একটা প্রেমের কাহিনী।
তিস্তা তার প্রেমিকের সঙ্গে ‘লিভ ইন’ করতে চাইলেও তাকে বিয়ে করতে রাজি নয়। ‘সিঙ্গেল মাদার’ হতে তার কোনো সমস্যা নাই। আসলে সে চায়না ‘বন্ধন যেন সুন্দর সম্পর্ককে নষ্ট করে না দেয়’। কিছু ক্ষেত্রে প্রতারণা ঘটলেও বাস্তবে প্রত্যেক প্রেমিক-প্রেমিকা যেখানে পরস্পরকে বিয়ে করতে চায় সেখানে তিস্তার কেন এই সিদ্ধান্ত? এর পেছনে লুকিয়ে আছে এক অশ্রুসজল করুণ কাহিনী। দেখা যায় সামান্য অজুহাতে তিস্তার মা মধুমিতা দেবী স্বামী কুণালকে ডিভোর্স দিয়ে দেন। মন না চাইলেও আদালতের নির্দেশে বাবা অন্ত প্রাণ তিস্তা মায়ের কাছে থাকতে বাধ্য হয়। এইভাবে কেটে যায় এগারোটা বছর। আদালতের নির্দেশ ছিল আঠারো বছর বয়স হলে তিস্তা তার বাবার কাছে যেতে পারবে। আজ সেই দিন।
অন্যদিকে ঈশানও তার কাকাই-কাকিমার মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েনের সাক্ষী থেকেছ। পরিণতিতে একরাত তাদের জেলেও থাকতে হয়েছে। এরমাঝে আছে ঈশান-তিস্তার প্রেমের ছোট্ট দৃশ্য। সুপর্ণা বিশ্বাস ও প্রদীপ কুমার রায়ের কণ্ঠের যাদুতে ‘মায়াবনো বিহারিনী হরিণি’ সেই প্রেমে আলাদা মাত্রা এনে দেয়। অথবা শেষ দৃশ্যে তিস্তা যখন তার বাবার কাছে ফিরে যাচ্ছে তখন মল্লিকা সিংহরায়ের কণ্ঠে ভেসে আসা ‘আপনার চেয়ে আপন যে জন’ অদ্ভুত পরিবেশের সৃষ্টি করে। পুরো কাহিনী জুড়ে আছে তিস্তা-ঈশান অর্থাৎ সুপ্রিয়া মণ্ডল ও প্রান্তর চ্যাটার্জ্জী। দু’জনেই তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে গেছে। দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রী সুপ্রিয়ার মুখে আছে ‘চার্মিং বিউটি’, কণ্ঠে আছে এক মায়াবী মাদকতা। বেশ কয়েকটি জায়গায় তার সরলতায় ভরপুর স্বাভাবিক বাচন ভঙ্গি দর্শকদের মুগ্ধ করবেই।
মধুমিতার ক্ষেত্রে প্রথমে সন্তানকে কাছে পাওয়ার আনন্দ ও পরে হারানোর বেদনা এবং কুণালের ক্ষেত্রে বিপরীত ঘটনার ক্ষেত্রে দুই শিল্পী মল্লিকা ও সজলের প্রতিক্রিয়া ছিল যথার্থ মাতা ও পিতা সুলভ। উজ্জ্বল আলোর পরিবর্তে আলো-আঁধারি পরিবেশ সম্পর্কের টানাপোড়েনের ক্ষেত্রে মানানসই হয়ে উঠেছে। সবমিলিয়ে বলা যেতেই পারে দর্শক এই স্বল্প দৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্রের মধ্যে নিজেদের চেপে রাখা দৈনন্দিন অভিজ্ঞতার মিল খুঁজে পাবে। চলচ্চিত্র প্রেমী বার্ণপুরের মুনমুনের ছোট্ট প্রতিক্রিয়া – ‘হঠাৎ বৃষ্টি’ দেখে ভাল লাগল।