জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জীঃ- এই জগতে এমন কিছু বিপর্যয় আছে যেগুলো একদল মানুষের অতিরিক্ত লোভের কারণে সৃষ্ট। এই বিপর্যয়গুলো ধীরে ধীরে একটা সতর্কবার্তা দিয়ে গেলেও বিপদ সৃষ্টকারী মানুষগুলোর সঙ্গে সঙ্গে সাধারণ মানুষও সেগুলো গুরুত্ব দেয়না, নুন্যতম সতর্ক হয়না। স্বাভাবিকভাবেই একসময় বিপদ প্রকৃতির সহ্যসীমা অতিক্রম করে যায়। ফলে মানব সমাজের অস্তিত্ব চরম সংকটের মুখোমুখি হয়ে পড়ে।
একদিবসীয় সীমিত ওভারের ক্রিকেটে জয়ের জন্যে বিপুল রানের বোঝা নিয়ে পরে ব্যাট করতে নেমে অনেক সময় বিপক্ষের ‘টাইট’ বোলিংয়ের মুখে পড়ে অসহায় হয়ে পড়ে ব্যাটসম্যানরা। দ্রুত রান তুলতে তারা ব্যর্থ হয়। আবার অনেক সময় তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে দ্রুত উইকেট হারায়। ওদিকে তখন আস্কিং রেট বাড়তে বাড়তে একসময় নাগালের বাইরে চলে যায়। ফলাফল কী হতে পারে সহজেই অনুমেয়। ব্যাটসম্যানরা শুরু থেকেই একটু সতর্ক হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই থাকত।
গতবছর গ্রীষ্মের সময় তাপমাত্রা বাড়তে বাড়তে একসময় রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় ৪০° সে: অতিক্রম করে কোথাও কোথাও ৪৮° সে: ছাড়িয়ে যায়। এমনকি শিলিগুড়ির মত পাহাড়ি এলাকায় নাকি ফ্যান ব্যবহার করতে হয়েছে। পরিবেশবিদরা সতর্ক করে দেন এখনই সচেতন নাহলে এবার তাপমাত্রা হয়তো ৪৪° সে: থেকে শুরু হবে এবং ৫২° সে: স্পর্শ করবে। তারপর সেটা চলে যাবে মানুষের সহ্য সীমার বাইরে। কেউ কেউ ঠাট্টা করে বলতে শুরু করে – এখানেই মরুভূমির আবহাওয়া উপলব্ধি করা যাচ্ছে।
ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময় থেকেই সেই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। আগামী কয়েক দিনের আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী তাপমাত্রা ৩০° সে: এর উপরে থাকার সম্ভাবনা। এপ্রিল-মে মাসে সেটা কোথায় পৌঁছাতে পারে এখন থেকেই সেটা অনুমান করা যায়।
গতবছর ওই সময় অতিরিক্ত গরমের হাত থেকে বাঁচতে ধনীরা বা যাদের আর্থিক সামর্থ্য আছে তারা নিজ নিজ বাড়িতে এসি ব্যবহার করেছেন। এটি করতে গিয়ে একদিকে যেমন দূষণের মাত্রা বেড়ে গেছে তেমনি অতিরিক্ত চাপ পড়ে বিদ্যুৎ ঘাটতিও দেখা গেছে। যারা খোলা জায়গায় কাজ করে তাদের অবস্থা করুণ হয়ে ওঠে। পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির গ্রীষ্মের ছুটি বাড়িয়ে দিতে বাধ্য হয়। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি দুর্বিষহ হয়ে ওঠে।
তবে এই সমস্যা শুধু এইরাজ্যের বা দেশের নয়। গোটা বিশ্ব উষ্ণতার কবলে। ফলে মেরু অঞ্চলের বরফ গলতে শুরু করেছে। বহু জীবের অস্তিত্ব বিপন্ন। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা এরফলে উপকূল সংলগ্ন বিস্তীর্ণ এলাকা চলে যাবে সমুদের জলের গভীরে। পৃথিবী হয়ে যাবে জীবশূন্য। পানীয় জলের চরম ঘাটতি দেখা যাবে।
কথা হচ্ছিল বিশিষ্ট পরিবেশবিদ সোমনাথ চ্যাটার্জ্জীর সঙ্গে। তিনি বললেন – দূষণের হাত থেকে বাঁচতে হলে বৃক্ষরোপণ করতেই হবে। পাশাপাশি দূষণ সৃষ্টিকারী যন্ত্রপাতির ব্যবহার কমাতে হবে। সবটাই সরকারের উপর ছেড়ে না দিয়ে আমাদের সতর্ক হতে হবে। তবেই বাঁচতে পারব। নাহলে পৃথিবীর অস্তিত্ব লোপ পাবে।