eaibanglai
Homeএই বাংলায়বিপ্লবী রাসবিহারী বসু থেকে মিন্টু হয়ে ওঠার ফান্ডা বললেন অভিনেতা কোলাজ সেনগুপ্ত

বিপ্লবী রাসবিহারী বসু থেকে মিন্টু হয়ে ওঠার ফান্ডা বললেন অভিনেতা কোলাজ সেনগুপ্ত

সঙ্গীতা চ্যাটার্জী:- বাঘাযতীন সিনেমার রাসবিহারী বসু থেকে শাস্ত্রী সিনেমায় একটা ছাপোষা গুন্ডা চরিত্র মিন্টু করে নিজের অভিনয় দক্ষতার প্রমাণ দিয়েছেন অভিনেতা কোলাজ সেনগুপ্ত। সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী দুটি শেডের চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি, বাঘাযতীন থেকে শাস্ত্রীতে তার কাজ নিয়ে সম্প্রতি আমাদের প্রতিনিধিকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে মুখ খুললেন অভিনেতা কোলাজ।

১। আপনি রূপোলী পর্দার জগতে কীভাবে এলেন ?

কোলাজ সেনগুপ্ত:- এলাম বললে সঠিক বলা হয় না। আমি অভিনয়ের বাইরে যাইনি কখনও। ভালো লাগার তাগিদেই অভিনয় করে গেছি, সেই ‘করে যাওয়ার’ সময়সীমা প্রায় ১১-১২ বছর। সেখান থেকেই আস্তে আস্তে, রূপোলী পর্দায় সুযোগ আসে। আমার সেদিন‌ও বিশ্বাস ছিলো আমার নিজের সততার প্রতি,এখনো রয়েছে। তাই যদি আবার শূন্য ঘেঁটে শুরু করতে হয়, আমি তাই করবো। এইবার অন্তত এইটুকু জানবো, কোন কোন ভুলগুলো করবো না।

২। শাস্ত্রীতে দ্বিতীয় বার রনিদার সাথে কাজ করে কেমন অভিজ্ঞতা হল ?

কোলাজ সেনগুপ্ত:- অভিজ্ঞতা অনন্য সাধারণ ! উনি একজন অত্যন্ত ভালো মানুষ এবং ততোধিক উৎকৃষ্ট একজন সহ অভিনেতা। এর আগের ছবির নাম কাল্পনিক, এখনও পোষ্ট প্রোডাকশনে আছে। সেইখানে আমার আর রনিদার গল্পের ট্র্যাক আলাদা আলাদা। এক সাথে একটি মাত্রই দৃশ্য আছে। তখন থেকেই খুব মন থেকে চেয়ে ছিলাম, যেন ওনার সাথে আরেকটু বৃহত্তর পরিসরে কাজ করার সুযোগ আসে, হলোও তাই। ওই যে বললাম, সৎ ভাবে চাইতে হবে, মন থেকে! তাহলেই হবে।

৩। মিঠুন চক্রবর্তীর সাথে কাজের অভিজ্ঞতা কেমন ?

কোলাজ সেনগুপ্ত:- প্রথম শট হওয়া পর্যন্ত আমি বিশ্বাস করতেই পারি নি, আমি মিঠুন দার সাথে এক ফ্রেমে আছি। কিন্তু আছি, এটা বাস্তব! সুতরাং, দায়িত্বও সেইখানেই বর্তায় এসে। অত্যন্ত প্রফেশনাল, কাজ পাগল এবং মজার মানুষ উনি!

৪। যে দুটো ছবি করেছেন, একটি দেবের সাথে একটি মিঠুন চক্রবর্তীর সাথে, কেমন লাগছে? নতুন কিছু কি শিখলেন ওনাদের থেকে ?

কোলাজ সেনগুপ্ত:- সবচাইতে বেশি যেটা শিখেছি ওনাদের থেকে সেটা হলো কাজের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি। কাজের সময় কাজটাই যেন সবসময় প্রাধান্য পায়। আমরা দর্শকের প্রতি দায়বদ্ধ। ঘটনা বা দুর্ঘটনা ছবি বানানোর ক্ষেত্রে লেগেই থাকে। বাঘাযতীনের সময়ই তো দেব দার চোখে আঘাত লেগেছিল শুটিং করতে করতে, তাই বলে তো কাজ থামে নি! আমি অত্যন্ত প্রফেশনাল ভাবে কাজ করতে পছন্দ করি। কাজের জায়গায় কাজটাই সব সময় আগে রাখি। সুতরাং ওনাদের সঙ্গে সম মানসিকতার পরিচয় পেয়ে, খুব ভালো লেগেছিল। মনে হয়েছিল, এতদিনে ঠিকঠাক আমার মতন মানুষদের সাথে আলাপ হচ্ছে!

৫। বাঘাযতীনে রাসবিহারী বসুর পর শাস্ত্রীতে এরকম একটা গুন্ডা টাইপ চরিত্রের অফার কেন নিলেন ?

কোলাজ সেনগুপ্ত:- কারণ, চরিত্রের ছোটো বড় হয় না। অভিনেতার প্রস্তুতির ক্ষেত্রে ছোট বড় হয় আর সত্যি বলতে বাঘাযতীনের মতন সিনেমা সব সময় হয় না। পিরিওডিকাল ফিল্ম। সুতরাং চরিত্র গুলো পিরিয়ডিক্যাল, তাদের নিজস্ব একটা ওজন আছেই। তুলনামূলক ভাবে শাস্ত্রীর এই চরিত্রটির ওজন রাসবিহারী বসুর সমমানের নয়। আমার মনে হয়ে ছিলো, অভিনেতা হিসেবে এটাই আমার চ্যালেঞ্জের জায়গা, কারণ খুব সাধারণ অভিনয় করাটাই অনেক ক্ষেত্রে খুব কঠিন আর তার উপর, রজতাভ দত্ত, মিঠুন চক্রবর্তীর মতন দিকপাল মানুষজনের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছি! আরো অনেকেই আছেন এই ছবিতে! এমন একটা শেখার সুযোগ ছেড়ে দেবো?

৬। আচ্ছা গব্বর সিং আর নিত্যানন্দ মহাপ্রভু এইরকম দুটো শেডের চরিত্রের অফার যদি একসাথে আপনার কাছে আসে আপনি কোনটি গ্রহণ করবেন এবং কেন ?

কোলাজ সেনগুপ্ত:- আমার ব্যক্তিগত ভাবে ডার্ক শেডের চরিত্র পছন্দ। সুতরাং হয়ত গব্বর সিং বেছে নেবো। তবে, বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে আরো কিছু কিছু ফ্যাক্টর কাজ করছে। সম্ভব হলে আমি দুটোই করবো।

৭। টেলিভিশনে কাজ করতে চান না অথচ ওয়েব সিরিজের অফার এলে করতে চান এরকমটা কেন ? আপনার কি মনে হয় ওয়েব সিরিজ মানুষের কাছে অনেক বেশি পরিমাণে পৌঁছে যেতে পারে ?

কোলাজ সেনগুপ্ত:- তার অনেকগুলো কারণের মধ্যে একটা প্রধান কারণ হচ্ছে, আমার মনে হয়, ওয়েব সিরিজের ক্ষেত্রে একজন অভিনেতাকে যে যে রেঞ্জের চরিত্র অফার করা হয়ে থাকে, টেলিভিশনের ক্ষেত্রে সে সুযোগ নেই। টেলিভিশনে টাইপ কাস্ট হয়ে যাওয়াটা খুব সহজ। একজন অভিনেতা নানান রকম চরিত্রে বাঁচতে চান। অন্তত আমি তাই চাই। সিরিয়ালে যে ফরম্যাটে কাজ হয় সেই ফরম্যাটে আমি খুব একটা অভ্যস্ত নই। তবে আমাকে নিজের থেকে যদি টেলিভিশনের প্রযোজক-পরিচালকরা ডাকেন, তাহলে আমি না বলবো না, হয়তো,আবার বলতেও পারি। সেটা ঠিক ভেবে দেখি নি। তবে হ্যাঁ, আমি কখনো নিজে থেকে ওনাদের কাছে যাইনি, ওনারাও আমার কাছে আসেন নি। That doesn’t make me any less of an actor. আর হ্যাঁ, আমার মনে হয় ওয়েব সিরিজ প্রচুর মানুষের কাছে পৌঁছে যাওয়ার ক্ষমতা রাখে।
টেলিভিশনের চাইতে কম বা বেশী, সেটা আমি বলতে পারবো না। তবে ওয়েব সিরিজের টার্গেট অডিয়েন্সের রেঞ্জ তুলনামূলক বেশি বলেই আমি মনে করি।

৮। বাঘাযতীনের রাসবিহারী চরিত্র থেকে বেরিয়ে এসে মিন্টু হয়ে উঠতে কী প্রস্তুতি নিয়েছিলেন ?

কোলাজ সেনগুপ্ত:- রাসবিহারী বসুর জন্য আমাকে একটা মারাত্মক ফিজিক্যাল ট্রান্সফরমেশনের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছিল। প্রায় ১২-১৩ কেজি ওজন বাড়াতে হয়েছিল। ওনাকে নিয়ে প্রচুর পড়াশোনা করতে হয়েছিল। শাস্ত্রীর মিন্টু চরিত্রটির ক্ষেত্রে আলাদা করে কিছু আমাকে করতে হয়নি। আমার একটি ডায়রি আছে যেখানে নানান রকম চরিত্র আমি লিখে রাখি, ডিকশনারির মতন। সেখান থেকে সাজেশন মিলে গিয়েছিলো বলতে পারেন।

৯। ধরুন রাস্তা দিয়ে বেরোলেন,আপনার এক্সপেক্টেশন কী হবে? রাসবিহারী হিসেবে মানুষ প্রণাম করবে না মিন্টু হিসেবে গাল খেতে চাইবেন ?

কোলাজ সেনগুপ্ত:- আমি চাইবো মানুষ রাসবিহারী বসু ভেবে প্রণাম করতে এসে মিন্টু ভেবে গালাগাল দিয়ে দিক। আবার মিন্টুকে গালমন্দ করতে এসে রাসবিহারী বসুকে দেখে থমকে যাক। দুটোই তো আমিই করেছি। প্রণাম করুক বা গালাগাল, তা আসলে আমার অভিনয়ের‌ই গুণগান।

১০। মিঠুন চক্রবর্তীর অসুস্থতার‌ সময় আপনার শ্যুটিং ছিলো? ঠিক কী হয়েছিল সেদিন ?

কোলাজ সেনগুপ্ত:- যেদিন মিঠুনদা অসুস্থ হয়ে পড়েন সেই দিন আমার শুটিং ছিল। আমার কল টাইমের যথারীতি মিনিট ১৫ আগেই আমি পৌঁছোয়। তার আগেই ওনাকে হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হয়ে ছিল। কিন্তু একটা জিনিস আমি সেদিন বুঝলাম, যে অমন একটি দুঃসংবাদ মনের মধ্যে চেপে রেখেও, গোটা উইনিট সুষ্ঠুভাবে তাদের সেদিনের কাজ সম্পন্ন করলো। কাজের প্রতি প্রত্যেকের এই দায়িত্ববোধ শিক্ষণীয়! এই প্যাশনটাই মানুষকে অনেক দূর নিয়ে যায় বলে আমি বিশ্বাস করি। তার পরে অবশ্য খুব স্বাভাবিক কারণেই শুটিং বন্ধ করতে হয়।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments