সঙ্গীতা মুখার্জ্জী মণ্ডলঃ- কারও খ্যাতি বাংলার সীমা ছাড়িয়ে পৌঁছে গেছে বিশ্বের দরবারে প্রবাসী বাঙালিদের ঘরে ঘরে। কেউ আবার খুব সাধারণ হয়েও মানুষের মঙ্গলের জন্য অসাধারণ সব কাজ করে চলেছেন। এই রকম একঝাঁক কবি, সাহিত্যিক, শিক্ষক, সমাজসেবী, আইনজীবী, সাংবাদিক সহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের উপস্থিতিতে কুমুদ সাহিত্য মেলা কমিটির উদ্যোগে ৩ রা মার্চ পল্লীকবি কুমুদরঞ্জন মল্লিকের ১৪২ তম জন্মদিন পালিত হলো কবির জন্মভিটে কোগ্রামের ‘মধুকর’ প্রাঙ্গনে এবং অনুষ্ঠিত হলো ‘কুমুদ সাহিত্যমেলা’ এবং মেলায় আগত অতিথিদের দীর্ঘদিনের দাবি মেনে কবির বাড়ির সামনে স্থাপন করা হয় কবির একটি আবক্ষ মূর্তি। কমিটির উদ্যোগে একটানা ১৫ বছর ধরে এই মেলা হচ্ছে।
চেনা ছকের মেলার বাইরে এখানে কবির স্মৃতিচারণার সঙ্গে সঙ্গে চলে স্বরচিত কবিতা পাঠ, সঙ্গীত পরিবেশন, বই প্রকাশ ও সাহিত্যচর্চা। গুরুত্ব দেওয়া হয় সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষকে। মেলা কমিটির পক্ষ থেকে উপস্থিত প্রতিটি ব্যক্তির প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করে তাদের হাতে স্মারক হিসাবে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের স্মৃতি বিজড়িত মেমেণ্টো তুলে দেওয়া হয়। পাশাপাশি তাদের কর্মদক্ষতার স্বীকৃতি স্বরূপ কয়েকজন সাংবাদিকের হাতে স্মারক তুলে দেওয়া হয়।
সাহিত্য মেলার উদ্বোধক ছিলেন রবীন্দ্র ভারতী সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায়। প্রধান অতিথি ছিলেন বার কাউন্সিল অফ ওয়েস্ট বেঙ্গলের কার্যনির্বাহী চেয়ারম্যান শ্যামল ঘটক ও সভাপতি ছিলেন বিধান শিশু উদ্যানের সম্পাদক গৌতম তালুকদার। অতিথি হিসেবে ছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়, শীর্ষেন্দু সিংহরায়, বৈদূর্য ঘোষাল, কাজী নজরুল ইসলাম এর বংশধর সোনালি কাজী, পল্লীকবি বংশধর মহাশ্বেতা বন্দ্যোপাধ্যায়, মঙ্গলকোট থানার আইসি মধুসূদন ঘোষ, বর্ধমান জেলা আদালতের সিনিয়র এপিপি সঞ্জয় ঘোষ, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক প্রকাশ মল্লিক, হুগলি জেলা আইনী পরিষেবা কর্তৃপক্ষের অফিস মাস্টার সাহানা খাতুন, সাহিত্যিক শুভাশীষ মল্লিক, বাংলাদেশের লেখক কাজী নূর, চিকিৎসক অভয় সামন্ত, বাচিক শিল্পী দেবিকা মুখার্জি প্রমুখ।
মেলা কমিটির পক্ষ থেকে ১৭ জনকে রত্ন সম্মান দেওয়া হয়। টলিউডের সঙ্গীত পরিচালক অশোক ভদ্রকে ‘লোচনদাস রত্ন’, সঙ্গীত শিল্পী কুমকুম সেনগুপ্তকে ‘নজরুল ইসলাম রত্ন ‘, হাওড়া জেলা আইনী পরিষেবা কর্তৃপক্ষ এর অফিস মাস্টার প্রসেনজিৎ ভট্টাচার্যকে ‘নুরুল হোদা রত্ন’, সাংবাদিক সংগঠক শম্ভু সেনকে ‘সমীরণ চৌধুরী রত্ন’, সাংবাদিক পার্থ চৌধুরীকে ‘পুরুষোত্তম সামন্ত স্মৃতি’ পুরস্কার,স্বাস্থ্য বিজ্ঞানী ড. শ্যামলেন্দু চ্যাটার্জিকে ‘বর্ধমান জেলা রত্ন’, কেন্দ্রীয় সরকারের পেটেন্ট পাওয়া বিজ্ঞানী চন্দ্র নারায়ণ বৈরাগ্যকে ‘মেমারি রত্ন’, বাংলাদেশের লেখক পংকজ পালকে ‘হাসান আজিজুল হক রত্ন’, সাংবাদিক রফিকউদ্দিন মন্ডলকে ‘দক্ষিণ দামোদর রত্ন’, সমাজসেবী সফিকুল ইসলামকে ‘খন্ডঘোষ রত্ন’, বর্ধমান সহযোদ্ধার কর্মকর্তা সোমনাথ ভট্টাচার্যকে ‘কাটোয়া মহকুমা রত্ন’, আইনজীবী মাসুদ করীমকে ‘মঙ্গলকোট রত্ন’, আঞ্চলিক গবেষক নির্ম্মলেন্দু পালকে ‘কালনা মহকুমা রত্ন’, সমাজসেবী মূলচাঁদ আগরওয়ালাকে ‘বীরভূম রত্ন’, সাংবাদিক আমিরুল ইসলামকে ‘সমীর ভট্টাচার্য রত্ন’ এবং পশুপ্রেমী সমাজসেবী আমির সেখকে ‘মমতা মণ্ডল স্মৃতি’ পুরস্কার দেওয়া হয়।
পল্লীকবির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে মেলায় কবির লেখা কবিতার ওপরে পেইন্টিং করেন কলকাতার বিখ্যাত পাঁচ চিত্রশিল্পী- দীপঙ্কর সমাদ্দার সুদীপ্ত ভট্টাচার্য, উজ্জ্বল মুখার্জি, কৌশিক মজুমদার, বিশ্বনাথ দাস। পরে মহাশ্বেতা দেবী ছবিগুলি কবির গৃহে সংরক্ষণ করেন। উপস্থিত প্রতিটি মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে মেলা কমিটির সম্পাদক মোল্লা জসিমউদ্দিন বললেন – সবার সহযোগিতায় এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে ধীরে ধীরে এই সাহিত্যমেলার জনপ্রিয়তা বেড়েই চলেছে। আশাকরি আগামী দিনে এই সাহিত্যমেলা আরও জনপ্রিয়তা অর্জন করবে। একই আত্মবিশ্বাসের সুর শোনা যায় মেলা কমিটির অন্যতম সদস্য শ্যামলাল মকদমপুরীর কণ্ঠে।