eaibanglai
Homeএই বাংলায়শকুনদের মোটা কামাই ডিএসপি তে, আর গেস্ট হাউসে বসে জল মাপেন জামাই...

শকুনদের মোটা কামাই ডিএসপি তে, আর গেস্ট হাউসে বসে জল মাপেন জামাই পরামানিক

মনোজ সিংহ, দুর্গাপুরঃ– খুনিই তো!

ইচ্ছাকৃত নাকি সত্যি সত্যিই নিছক অনিচ্ছাকৃত – তা নিয়ে বিবাদ চলবে – আদালতে, থানায় না হয় ইউনিয়নের নেতাদের আলো আঁধারি চেম্বারে! মৃত শ্রমিকের বিধবা স্ত্রী বা অনাথ সন্তানের কাছে বিবাদের নয় বিষয়টি অজানা বিপদের, স্বজন হারানোর যন্ত্রণার, কালো মেঘে ঢাকা এক শেষ না হওয়া দুঃস্বপ্নের!

আবার, কোনো কোনো নেতার কাছে এই মওকা আসলে নাকি দারুন মোচ্ছবের। বখরা বুঝতে দর হাঁকানোর । পরিপাটি করে ঘর গোছানোর।

শুধু কি তাই ? কারখানার আলিন্দে, শ্রমিক বস্তির চাপা কান্নার ভারি বাতাসে এমন সময়ে হাহুতাশও শোনা যায়। ঠিকাদার, অফিসার আর লেবার ইন্সপেক্টর এর পকেটে গরম চাঁদি ঝনঝন করে, কলকারখানায় এক একটি মজুরের এবং বেঘোরে বলির পরে।

মৃত্যুপুরী দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানায় সাম্প্রতিক অতীতে ডজন খানেক ঠিকা শ্রমিক বিভিন্ন দুর্ঘটনায় অকালেই মারা গেছেন। কেউ ওপর থেকে ঝরে পড়া গলিত গরম লোহায় মৃত্যুস্নান করে, কেউ ছিটকে আসা ফুটন্ত লোহায় ঝলসে, তো কারো মাথায় ওভারহেড ক্রেন ভেঙ্গে পড়ে। বিষাক্ত গ্যাসের ছোবলেই চলে গেছেন হাফ ডজন, দু বছরে। যে কাজ স্থায়ী মজুরের করার কথা, অফিসাররা হয় হুমকি দিয়ে, নয় ফুসলিয়ে নিয়ে গিয়ে, ঢাল তলোয়ার ছাড়াই মজুরকে নিধিরাম সর্দারের মত বধ্যভূমিতে যুদ্ধে পাঠিয়ে ‘মেরে ফেলছে’ নিরন্তর – বিশেষত ইদানিংকার ‘মারণ কলে’র বৃন্দাবন এই ডিএসপিতে। আর ওদিকে, সিপাই যত মরে, কারখানার ভাগাড় ঘিরে থাকা কিছু উটকো শকুনের ফুর্তি ততই বাড়ে। কারণ নাকি মোটা কামাই!

তাই কি?

“নিশ্চয়ই তাই! না হলে সবাই দেখছে বেআইনি ভাবে দিনের পর দিন কেমন করে কারখানায় অপ্রশিক্ষিত শ্রমিকদের বিপদজনক জায়গায় ঠেলে কাজে পাঠানো হচ্ছে, অথচ দামি দামি গাড়ি চড়ে, ঝকঝকে জামা, চাঁদির জুতো পরে বাবু সেজে আসা ঠিকা মজুর ইউনিয়নের নেতারা সব হাসিমুখে মেনে নিচ্ছে কেন? ফুটানি মেরে ফুলবাবুর মতো প্লান্টে আসে, ঠিকাদারদের এক পান্ডার সাথে মাখামাখি করে আর সন্ধ্যা হলেই রাজ্য সরকারের নিয়োজিত আরেক ভাগাড়ের শকুনের বাসায় মজলিশ বসায় যারা, তারা কি শুধু বিনা পয়সার কীর্তনের দল? তাদের ঘরে মাংসের হাঁড়ি চড়ে আমাদের ঘরের ছেলের চিতার ছাই জলের দরে বেচে, নয়তো আর কি?” – প্রশ্ন সজন হারানো এক ঠিকা শ্রমিকের পরিবারের। তাদের আরো দাবি, “আমাদের মরা মানুষটার ডেড বডির পাশে দাঁড়িয়ে ওরা হাঁসি মস্করা করে, কেউ দুর্গাপুরের তো কেউ আসানসোলের। এদের গায়ে শ্রমিকের গন্ধ আছে? কেউ কেউ নামেই শ্রমিকের চাকরি করে ঘরে মোটা মাইনে, উপরি তুলেছে বছর বছর, আদতে গা বাঁচিয়ে কাটমানি, ঘুষ আর দালালির হিসস্যা কমিয়ে জমিদার হয়ে গেল চোদ্দো বছরে। আমাদের কপালে জুটলো শুধুই সাদা কাপড়ে মুড়ে ঘরে পাঠানো ভাই, স্বামী, বাবার লাশ!”

“বার বার আমরাই শুধু প্রতিবাদ করছি বিভিন্ন ফোরামে। শ্রম আইনকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে এখন অহরহ কাজ হচ্ছে। চলছে দেদার লুঠ। খুনের ধারায় ছয় আধিকারিকের নামে অভিযোগ হল এতদিনে। দেখা যাক কি হয়,” বক্তব্য ডিএসপি কারখানার সিটুর ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বরূপ ব্যানার্জীর। পড়তি বাজারেও কারখানায় সিপিএমের এই সিটুরই জোর এখনও অনেক বেশি। রাজ্যের শাসক তৃণমুল কংগ্রেসের আইএনটিটিইউসি নেতা প্রভাত চ্যাটার্জী বলেন, “আগে একজন ঠিকা মজুরের মৃত্যু হলে তার পরিবার যা অর্থ সাহায্য পেত, এখন তার দশগুণ পায়। আমরাই মৃতদের পরিবারের পাশে থাকি সারা বছর।”

ওদিকে, জেগে উঠেছে ইনটাকও। কংগ্রেসের এই শ্রমিক সংগঠনের সভাপতি রজত দীক্ষিত সাফ জানালেন, “কেন্দ্রে একটা শ্রমিক স্বার্থ লুঠের সরকার চলছে, ডিএসপিতে মুহুরমুহু মজুর এখন মুড়ি মুড়কির মতো যেভাবে মারা যাচ্ছে, তাতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু কি আছে? এরা তো নতুন দাসখামার এনেছে রাষ্ট্রায়ত্ব ইস্পাতে। মানুষের জীবনের কোন দামই নেই এদের কাছে।”

গত ২৯ শে ফেব্রুয়ারি কারখানার বেসিক অক্সিজেন ফার্নেসের দুর্ঘটনায় ঝলসে যান তিন কর্মী তাদের মধ্যে দু-জন পরে মারা গেলেন দুর্গাপুর শহরেরই একটি নামী বেসরকারি হাসপাতালে। ওই মৃত্যুর পর, এতদিনে টনক নড়েছে ইস্পাত প্রশাসনের। পরিস্থিতি সামাল দিতে কারখানার ই ডি (ওয়ার্কস) দিব্যেন্দু ঘোষ, চিফ জেনারেল ম্যানেজার বিকাশ মালওয়াটি, অঞ্জনি সরেন, চিফ জেনারেল ম্যানেজার (পার্সোনাল) বি পি রাও, চিফ জেনারেল ম্যানেজার (এস এম এস) সৌমেন চ্যাটার্জি (ডি এস ও) এবং এক নিরাপত্তা আধিকারিক এর নামে অনিচ্ছাকৃত খুনের ধারায় দুর্গাপুর পুলিশের ডেপুটি কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ যদিও তদন্ত শুরু করেছে, তবে তদন্তের বিষয়ে তেমন কোন অগ্রগতি হয়নি বলে সূত্র মারফত জানা যাচ্ছে।

ডিএসপি কারখানার শ্রমিক নিরাপত্তা দেখার জন্য রাজ্য সরকার শ্রমদপ্তরের এক আধিকারিক অনিমেষ পরামানিককে কয়েক বছর ধরে দুর্গাপুরে পোস্টিং দিয়ে রেখেছেন। কারখানায় এতো মৃত্যু মিছিল আর তিনি তবে কি করছেন? কেউ কেউ বলেন,”উনি গোঁফে তা দিচ্ছেন আর কারখানার অতিথিশালায় জামাই আদরে আয়েসে থেকে রসেবসে জল মাপছেন।”

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments