এই বাংলায় ওয়েব ডেস্ক:- সারাদেশ তথা রাজ্যজুড়ে পুলিশের বিরুদ্ধে জনগণের একাধিক অভিযোগ আছে, কোথাও অত্যাচারের, তো কোথাও তোলাবাজির। কিন্তু একথাও ঠিক যে পুলিশের দায়িত্ব পালনের জন্যই আজ দেশ তথা রাজ্যের মানুষ সুরক্ষিত আছে। রাজনৈতিক দল, সমাজসেবী সংগঠন তথা সাধারণ মানুষেরা পুলিশকে সব সময় নিজেদের শত্রু মনে করেন। তার কারণও থাকে অবশ্যই পুলিশ প্রশাসনের কড়া মনোভাব ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ ও আইনের বলপূর্বক ইচ্ছামতন প্রয়োগের জন্য। কিন্তু সারাদেশ তথা রাজ্যের এমন অনেক পুলিশ আধিকারিক আছেন যারা নিঃশব্দে মানুষের সেবা করে চলেছেন দিনরাত। এমনই এক পুলিশ আধিকারিক এর কথা জানাজানি হল দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে।
গত ৩১ শে মার্চ দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের ইস্পাত নগরীর এক বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের ব্যবসায়ী অত্যন্ত জরুরী দরকারে স্ত্রী, যুবতী কন্যা ও ড্রাইভার সহ তাদের নিজস্ব সুইফট ডিজায়ার গাড়িতে করে কল্যাণী যাবার উদ্দেশ্যে দুর্গাপুর শহর থেকে রাত নটা নাগাদ বের হন। ১৯ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে যাওয়ার সময় বিভিন্ন জায়গায় যানজট থাকার ফলে বর্ধমান অবদি পৌছাতে প্রায় রাত্রি এগারোটা বেজে যায়। অত্যন্ত জরুরি কাজ থাকার ফলে ওই ব্যবসায়ী ও তার পরিবার পুরনো জি টি রোড ধরে অন্ধকারের মধ্যেই গাড়ি চালিয়ে কল্যাণীর উদ্দেশ্যে রওনা দেন। রাত্রি প্রায় পৌনে বারোটা নাগাদ পান্ডুয়া থানা অন্তর্গত সিমলা গড় এলাকার কাছাকাছি তাদের গাড়িটি দুর্ঘটনাগ্রস্থ হয়। দুর্ঘটনার জেরে গাড়ির সামনের অংশ সমস্তটাই ভেঙে চুরে যায়। বিকল হয়ে পড়ে তাদের মারুতি সুইফট ডিজায়ার গাড়িটি। জনমানব হীন গুট গুটে অন্ধকারের মধ্যেই রাস্তার ওপর অসহায়ের মতন দাঁড়িয়ে থাকতে বাধ্য হন স্ত্রী,যুবতী কন্যা ও চালক সহ। দুর্ঘটনার আকস্মিতা কাটিয়ে ওই ব্যবসায়ী দুর্গাপুরের একটি অভিজাত ক্লাবের সদস্য হওয়ার সুবাদে সেই ক্লাব সদস্যদের ফোন মারফত তার এই দুর্ঘটনা ও পরিস্থিতির কথা সবিস্তারে বলেন। শিল্পাঞ্চল দুর্গাপুরের অভিজাত ওই ক্লাবের সদস্য একাধিক গণ্যমান্য ব্যক্তি হওয়ায় সহজেই পান্ডুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিকের মোবাইল নম্বর জোগাড় হয়। দুর্গাপুরের ওই বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবসায়ী পান্ডুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক বড়বাবুর সাথে ফোনে যোগাযোগ করে নিজের দুর্ঘটনার কথা ও তার অসহায়তার কথা পরিষ্কার করে জানান।
দুর্গাপুরের ওই বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবসায়ী জানান, “ফোন মারফত পান্ডুয়া থানার বড়বাবুকে সমস্ত ঘটনার কথা বলার কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই সাব ইন্সপেক্টর পদ মর্যাদার আধিকারিক সহ পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে তাকে সাহায্য করতে আসেন। মূলত তাদেরই সহায়তায় ও আন্তরিকতায় তৎক্ষণাৎ একটি অন্য গাড়ি ভাড়া করে তাকে তার স্ত্রী ও কন্যাকে তাদের গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। শুধু তাই নয় দুর্ঘটনাগ্রস্থ গাড়িটির ও সুরক্ষার পূর্ণ ব্যবস্থা করেন।” ওই ব্যবসায়ী অত্যন্ত প্রসন্নতার সাথে জানান, “বহুবার জীবনে চলার পথে পুলিশ কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। কিন্তু সেই মধ্যরাত্রে পান্ডুয়া থানার বড়বাবু যেভাবে সামাজিক ব্যবহার ও অতুলনীয় মিষ্টি ব্যবহার তার সাথে করেছেন তাতে তিনি মুগ্ধ।” শুধু তাই নয় তাকে সহায়তা করতে ছুটে আসা প্রতিটি পুলিশ কর্মী যেন নিজের পরিবার-পরিজনের সদস্যের দুর্ঘটনার খবর পেয়ে সামাজিক ব্যবহার করেন, তেমনি ব্যবহার পেয়ে অত্যন্ত আনন্দিত ওই ব্যবসায়ী।
পান্ডুয়া থানার বড়বাবু ও পুলিশ কর্মীদের সেই রাত্রের ব্যবহারের প্রশংসা করে দুর্গাপুরের ওই অভিজাত ক্লাবের অন্যান্য সদস্যদের জানান। দুর্গাপুরের ওই অভিজাত ক্লাবের অন্যতম সদস্য ও বেঙ্গল ডিজিটাল মিডিয়া ফাউন্ডেশন এর সভাপতি মনোজ সিংহ জানান, “পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ কর্মীদের ব্যবহারে বদল এসেছে সে কথা জোর দিয়ে বলা যায়। পুলিশ সমাজ বন্ধু হিসেবে তাদের সামাজিক দায়বদ্ধতা নিষ্ঠার সাথে পালন করতে শুরু করেছেন। সেই রাত্রে আমাদের ক্লাব সদস্যের সাথে যে ব্যবহার পান্ডুয়া থানার বড়বাবু ও ওই থানার পুলিশ কর্মীরা করেছেন তাতে আমরা তাদের কে সাধুবাদ জানাচ্ছি। আমাদের সকল ক্লাব সদস্য ও একজন সাংবাদিক হিসেবে আমি পান্ডুয়া থানার বড়বাবু ও ওই থানার সকল পুলিশ কর্মীকে শ্রদ্ধা ও অন্তরের ভালোবাসা জ্ঞাপন করছি। আগামী দিনেও তারা সাধারণ মানুষের বিপদে এভাবেই মানুষের পাশে থাকবেন এই আশা রাখি।”
পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের ব্যবহারে যে বদল এসেছে তা বলাই বাহুল্য। কিন্তু এখনো শিল্পাঞ্চলের বহু পুলিশ কর্মীর ব্যবহার সন্তোষজনক নয়। মফস্বলের একটি ছোট্ট থানা পান্ডুয়ার বড়বাবু সহ সকল পুলিশ কর্মীরা, যেভাবে নিশুতি মধ্যরাত্রে দুর্ঘটনাগ্রস্থ একটি পরিবারের পাশে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে তা নিঃসন্দেহে প্রশংসার যোগ্য।