সংবাদদাতা, জামুড়িয়া:- “কলকাতা পুলিশে”র লোগো বা স্টিকার লাগানো একটি গাড়ি নিয়ে পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোলের জামুড়িয়া থানার চুরুলিয়ায় একটি সরকারি কয়লা ডিপোয় হানা নিয়ে চাঞ্চল্য। সাদা পোশাকে তিন ব্যক্তি শুক্রবার রাত পৌনে বারোটা নাগাদ জামুড়িয়ার এই কয়লার ডিপোতে আসেন বলে অভিযোগ। কয়লা ডিপোতে থাকা কর্মীদের থেকে ৫ লক্ষ টাকা ওই তিন ব্যক্তি তোলা দাবি করেন বলে জানা গেছে। এও অভিযোগ সেই টাকা না দেওয়ায় ডিপোর এক কর্মীর মোবাইল ছিনিয়ে নেওয়া হয়। পরে ওই তিন ব্যক্তি সিআইএসএফ জওয়ানদেরকে ডাকেন। এরপর বেশ কয়েকজন সিআইএসএফ সেখানে আসে।
গোটা বিষয়টি নিয়ে ওই কয়লা ডিপোর মালিক শেখ আব্দুল মান্নান শনিবার সকালে জামুড়িয়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
যদিও এদিন সকালে ওই ডিপোতে অভিযান চালিয়ে সেখানে থাকা ২০০ টন কয়লা ও ১৪ টি গাড়ি সিজ করা হয়েছে বলে জামুড়িয়া থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের সিআইএসএফের শ্রীপুর ক্যাম্পের ইনচার্জ পিন্টু কর্মকার। ওই অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৪ টি গাড়ির মধ্যে ৮ টি ট্রাক, ৩ টি ট্রাক্টর ও ৩ টি জেসিবি রয়েছে। সিআইএসএফ শ্রীপুর ক্যাম্পের ইনচার্জ পিন্টু কর্মকার তার অভিযোগে বলেন, ১৪ টি, ট্রাক, ট্রাক্টর ও জেসিবি সহ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে ২০০ টন কয়লার। সিআইএসএফের পক্ষ থেকে পুলিশকে দেওয়া অভিযোগে বলা হয়েছে, শুক্রবার রাতে টহল দেওয়ার সময়, টহলদারি দল দুটি ট্রাক্টরে কয়লা নিয়ে যাওয়া হচ্ছে দেখতে পায়। এরপরে ধাওয়া করলে সেই ট্রাক্টরগুলো চুরুলিয়ার ওই কয়লা ডিপোতে পৌঁছায়। যেখানে প্রায় ২০০ টন কয়লা জমা ছিল। ঝাড়খণ্ড থেকে কয়লা কেনা হয়েছে বলে দাবি কারাখানা কর্তৃপক্ষের। অন্য রাজ্য থেকে কয়লা কিনলে যে ডি ফর্ম থাকার কথা। কিন্তু সেই ডি ফর্ম সহ কোন বৈধ কাগজপত্র তারা দেখাতে পারেননি। এরপর কয়লা ও গাড়ি বাজেয়াপ্ত করা হয়।
পাল্টা অভিযোগে ডিপো মালিকের দাবি, তারা কালো পাথর ও ক্রাশারের কাজ করে। সংস্থার আইনজীবী অভিযোগ করেন, শুক্রবার রাত বারোটা নাগাদ সিভিল ড্রেস বা সাদা পোষাকে দুই ব্যক্তি এসে গেটের তালা ভেঙে জোর করে ভেতরে প্রবেশ করে। নিজেদেরকে কলকাতা পুলিশের অফিসার পরিচয় দিয়ে কর্মচারীদের কাছে ৫ লাখ টাকা দাবি করা হয়েছিল। এরপর কর্মীরা ম্যানেজারকে বিষয়টি জানালে তিনি আসেন। তাকেও বলা হয় ৫ লক্ষ টাকা দেন না দেওয়া হলে সবকিছু বাজেয়াপ্ত করা হবে। এরপর টাকা না দেওয়া হলে কলকাতা পুলিশের নাম করে আসা আধিকারিকরা সিআইএসএফকে ডেকে পাঠান। তিনি আরো বলেন, ডিপোতে কর্মরত তিন কর্মী আসগার আলি, হারুন মিয়া ও রোহন মোল্লাকে মারধর করা হয়েছে। তাদের মোবাইল ফোন ও ৩০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে।
গোটা বিষয়টি নিয়ে জামুড়িয়া থানার পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, দুই তরফেই অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু করা হয়েছে। তবে কলকাতা পুলিশের স্টিকার লাগানো গাড়িতে কারা, কিসের জন্য ওই ডিপোতে এসেছিলেন, তা জানা যায়নি। পুলিশ জানায়, গাড়ির নম্বর পাওয়া গেছে। তাদের খোঁজ করা হচ্ছে। যদিও, লোকসভা নির্বাচনের মুখে এই ঘটনা নিয়ে আসানসোল শিল্পাঞ্চলে ব্যাপক শোরগোল পড়েছে।
একটি বিশ্বস্ত সূত্র মারফত জানা গেছে, প্রাক্তন কয়লা মাফিয়া মৃত রাজু ঝায়ের অবৈধ কয়লা চোরা চালান সিন্ডিকেটের সাগরেদদের মধ্যে বেশ কয়েকজন যেমন, পাপ্পু, লোকেশ, রণবীর, মইজরুল, রঞ্জিত, সাজিদ,পার্থ, লাটুয়া,ছোট্টু, সহ আরো বেশ কয়েকজন দুষ্কৃতি মিলে একটি অবৈধ সিন্ডিকেট তৈরি করে কয়লার চোরা চালান চালিয়ে যাচ্ছে শিল্পাঞ্চলে এই নির্বাচনের সময়ও। দিন কয়েক আগে পাণ্ডবেশ্বর থানার পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয় জীতেন্দ্র সাউ ও বিকি পাসোয়ান নামের দুই দুষ্কৃতি। এরা সিণ্ডিকেটের অংশ কিনা সেই বিষয়টিও খতিয়ে দেখছে পুলিশ বলে জানা গেছে।