নীহারিকা মুখার্জ্জী, কলকাতা -: ‘খিড়কি থেকে সিংহদুয়ার’- এটাই ওদের পৃথিবী। প্রকৃতির রূপ-রঙ-রস উপভোগ করা থেকে ওরা বঞ্চিত। কারণ ওরা আর পাঁচজন সাধারণ মানুষের মত স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারেনা। অঙ্গজনিত ত্রুটি ওদের চলার পথে নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। ওদের কেউ মূক, বধির অথবা ক্ষীণ দৃষ্টিযুক্ত। কেউ কেউ আবার পায়ের সমস্যার জন্য ঠিকমত হাঁটতে পারেনা। নিজের সন্তানদের জন্য ওদের অভিভাবকরা প্রতি মুহূর্তে চিন্তিত থাকেন। কিন্তু ওদেরও যে মন আছে, ওরাও নিজেদের মত করেই আনন্দ উপভোগ করতে চায় সেই খবর কেউ রাখেনা। সবার কাছে ওরা বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন।
এবার প্রকৃতির সঙ্গে এদের পরিচয় ঘটিয়ে দেওয়ার জন্য ‘প্রকৃতি শিবির’-এর অঙ্গ হিসাবে সম্প্রতি প্রায় ২০ জন ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে পুরীর সমুদ্র ভ্রমণে বেরিয়ে পড়ে বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের জন্য গড়ে ওঠা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কলকাতার ‘টুইঙ্কিল স্টার ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট’। সঙ্গে ছিলেন ওদের অভিভাবক এবং অবশ্যই শিক্ষক-শিক্ষিকারা।
পুরীর বিশাল সমুদ্র ও ঢেউ দেখে অনীক, রিক, তমাল, সৌম্যদীপ, তনুশ্রী প্রমুখদের চোখে-মুখে ফুটে ওঠে অপার বিস্ময়। ওদের নিয়ে সাবধানে যখন সমুদের জলে নামা হয় তখন ওদের আনন্দের সীমা থাকেনা। একে একে জগন্নাথ দেবের মন্দির, কোনারকের সূর্য মন্দির দর্শন করে ওরা যখন ‘নন্দন কানন’ চিড়িয়াখানায় পৌঁছায় তখন ওদের মনে আর এক আনন্দের সৃষ্টি হয়। ওদের
অব্যক্ত মনের অভিব্যক্তি ভাষা হয়ে ফুটে ওঠে। সাধারণ মানুষের কাছে ওদের আর্ত আবেদন – ঘৃণা নয়, দয়া করে আমাদের দিকে একটু সহানুভূতির হাত বাড়িয়ে দিন। আমরাও বাঁচতে চাই। সবমিলিয়ে এক নতুন জগতের সঙ্গে পরিচয় ঘটে ওদের।
প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে লোপা, ব্রততী, নীতা, শিবানীরা থাকলেও ঝর্ণা ও সবিতা পরম মমতায় ওদের দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখে। কিন্তু কখনোই আনন্দ উপভোগের পথে বাধা সৃষ্টি করেনি। এছাড়াও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন অতনু মিত্র, সুদীপ্ত গুহ, পার্থ শিকদার, সুমিত কোয়েল, তুষারকান্তি ঘোষ প্রমুখ। সবার মিলিত প্রয়াসে ওইসব অবোধ ছেলেমেয়েরা চার দেওয়ালের বাইরে বেরিয়ে প্রকৃত আনন্দ উপভোগ করার সুযোগ হয়।
কথা হচ্ছিল নিউ ব্যারাকপুরের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ‘স্পেশাল এডুকেটর’ ছবি নাথের সঙ্গে। সংশ্লিষ্ট সংস্থার উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করে তিনি বললেন – এইসব ছেলেমেয়েদের ‘হ্যাণ্ডেল’ করা কতটা কষ্টকর সেটা আমি জানি। এতগুলো ছেলেমেয়েকে বাইরে নিয়ে গিয়ে প্রকৃতির সঙ্গে পরিচয় ঘটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা সত্যিই খুব গর্বের।
সংস্থার কর্ণধার শিবানী মিত্র বললেন – ‘প্রকৃতি শিবির’-এর মধ্যে দিয়ে আমরা আমাদের ছেলেমেয়েদের প্রকৃতির সঙ্গে পরিচয় ঘটিয়ে সামগ্রিক অর্থাৎ হলিস্টিক উন্নয়নের চেষ্টা করেছি। আশাকরি আমাদের এই প্রচেষ্টা সফল হবে।