জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী, আউসগ্রামঃ- ব্যবসায়ী, সমাজসেবী, উদ্যোগপতি বা শিক্ষাবিদ- যে বিশেষণই তার নামের আগে ব্যবহার করা হোকনা কেন পঞ্চাশ সহস্রাধিক বেকার যুবক -যুবতীর স্বপ্ন পূরণ করে আরও হাজার হাজার যুবক-যুবতীর স্বপ্ন পূরণের ফেরিওয়ালা হলেন আউসগ্রামের কুড়ুম্বা গ্রামের বাসিন্দা মলয় পীট। এখন থেকে তার পরিচয় ড. মলয় পিট।
সামাজিক উন্নয়নে অসামান্য অবদানের জন্য দিল্লির বিখ্যাত ‘সক্রেটিস সোশ্যাল রিসার্চ ইউনিভার্সিটি’ কর্তৃপক্ষ গত ৩০ শে মার্চ নিউ দিল্লির ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল সেন্টারে সংস্থার সমাবর্তন অনুষ্ঠানে তাকে সাম্মানিক ‘ডক্টরেট ইন সোশ্যাল সার্ভিস’ ডিগ্রি প্রদান করে। কিন্তু ব্যক্তিগত কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে মলয় বাবু সেইদিন স্বশরীরে উপস্থিত থাকতে না পারার জন্য তার হয়ে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ তথা আইনজীবী মোঃ শাহাজাহান মল্লিক সেই সম্মাননা গ্রহণ করেন।
অবশেষে ৬ ই মে অসংখ্য গুণগ্রাহীর উপস্থিতিতে প্রস্তাবিত ত্রিপুরা শান্তিনিকেতন মেডিকেল কলেজ প্রাঙ্গণে আয়োজিত এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে এই সম্মাননা মলয় পীটের হাতে তুলে দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপদেষ্টা পরিষদের প্রধান তথা আচার্য ড. সুরজ কুমার পাঠক। পাশাপাশি ‘আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক সম্মাননা ২০২৪’ দিয়েও তাকে সম্মানিত করা হয়। এমনকি তার কাজে মুগ্ধ হয়ে সংস্থা তাকে ‘সহযোগী সদস্য’ হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
প্রসঙ্গত দীর্ঘদিন ধরে সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে যেসব ব্যক্তি বিশেষ অবদান রাখেন তাদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই সম্মাননা প্রদান করে থাকেন। একটি প্রত্যন্ত গ্রামের বাসিন্দা মলয় বাবুর ক্ষেত্রে এই সম্মাননা অর্জনের পথটি খুব সহজ ছিলনা। সামাজিক বৈষম্য তার সংবেদনশীল মনকে নাড়া দেয়। সামাজিক উন্নয়নের জন্য নিজেকে মানসিক ভাবে প্রস্তুত করেন। নিজের লক্ষ্যকে স্থির রেখে অধ্যাবসায়, অক্লান্ত পরিশ্রম ও নিষ্ঠাকে সম্বল করে ধীরে ধীরে নিজের লক্ষ্য পূরণের দিকে এগিয়ে গেছেন।
২০০৩ সালে প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ দিয়ে যাত্রা শুরু করে আজ তিনি একাধিক পলিটেকনিক কলেজ, বিএড কলেজ, মেডিকেল কলেজ, প্যারামেডিকেল কলেজ, ফার্মেসী কলেজ, আইটিআই, নার্সিং সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার তিনি। এইসব প্রতিষ্ঠান থেকে গ্রামবাংলার ছেলেমেয়েরা যেমন শিক্ষালাভের সুযোগ পায়, পাশাপাশি অনেকের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেয়। তার কর্মকাণ্ড রাজ্যের সীমা ছাড়িয়ে ভিন রাজ্যেও ডানা মেলেছে। গ্রামীণ অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে তার কর্মকাণ্ড একটা দিশা দেখিয়েছে। সাধারণ মানুষের কাছে তিনি প্রেরণা হয়ে উঠেছেন। এলাকায় তিনি কার্যত ‘ব্রাণ্ড নেম’ হয়ে উঠেছেন। আজ তারই স্বীকৃতি স্বরূপ আজ সাম্মানিক ‘ডক্টরেট’ উপাধি পেলেন।
মলয় বাবুর এই স্বীকৃতির কথা শুনে আমেরিকায় গবেষকরত বাঙালি বিজ্ঞানী বিশ্বরূপ ঘোষ উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে বললেন – আমিও গ্রামবাংলার ছেলে। শুনে খুব গর্ব হচ্ছে। আমার স্থির বিশ্বাস মলয় বাবুর মত উদ্যোক্তাদের হাত ধরে গ্রাম বাংলার অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে বিপুল পরিবর্তন আসবে। প্রসঙ্গত বিশ্বরূপ নিজেও নিজের জন্মভিটে কালনায় সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজ শুরু করেছেন।
সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং চলার পথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যারা তার দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তাদের প্রত্যেকের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে মলয় বাবু বললেন – এই সম্মাননা শুধু আমার নয়, সামাজিক উন্নয়নে নিবেদিত প্রাণ সকলের জন্য গর্বের মুহূর্ত। এই স্বীকৃতি ভাল কাজ করার জন্য আলাদা প্রেরণা যোগাবে। এই স্বীকৃতি ব্যক্তিগত নয় সমষ্টিগত প্রচেষ্টার ফসল। তিনি আরও বলেন – সম্মাননা পেতে সবার ভাল লাগে। আমিও তার ব্যতিক্রম নই। একইসঙ্গে এটি আমার দায়িত্ব আরও বাড়িয়ে দিল। আশাকরি সবার সহযোগিতায় আগামীদিনে আমরা আরও এগিয়ে যেতে পারব।