eaibanglai
Homeএই বাংলায়৬ না ৯, নাকি 'ফুল নয়ছয়' ডিএমসির প্রশাসক নিয়োগে ?

৬ না ৯, নাকি ‘ফুল নয়ছয়’ ডিএমসির প্রশাসক নিয়োগে ?

মনোজ সিংহ, দুর্গাপুর:– নয় নাকি ছয় নাকি পুরোটাই এখন নয়ছয় – গোটা শহর জুড়ে নিছক ফিসফাস কানাকানি আর নয়। এবার দেদার চর্চা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে গ্রুপে। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা সত্ত্বেও বোর্ড বদল কি তবে সত্যিই লোটিয়াগোল হয়ে গেল?

দুর্গাপুর নগর নিগমে প্রায় দেড় বছর ধরে রাজপাট চালানো মনিবদের ওপর যে বিরক্ত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, তা রাখঢাক না করে খোলা মঞ্চে মাসাধিক কাল আগেই চাঁচাছোলা ভাষায় বলে দেন তিনি। সাথে সাথে ওইসব মনিব বদলের ঘোষণাও করেন তিনি। গতমাসের শেষ সপ্তাহে কলকাতার প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ডিএমসির প্রসঙ্গ উঠতেই বিরক্তির সাথে ঝাঁজ বাড়িয়ে সোজাসাপটা বলে দেন, “ওখানে ছয়জনের সবকটাই অপদার্থ। একজন বাদে। ওদেরকে সরিয়ে দিন।” রাজ্যের পুরো ও নগর উন্নয়ন দপ্তরের সচিবকে এমনতর হুকুম করলেও মুখ্যমন্ত্রীর ওই হুকুম যেমন একচুলও নড়েনি, তেমনি একপা’ও নড়েননি মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমও। তাহলে গোটা বিষয়টা দাঁড়ালো টা কি? এটাকি তবে সেই ‘ইহাউ হয়, উহাও হয়!’

“কে জানে কি ব্যাপার! এসব বড় বড় রাজা উজিরদের খামখেয়ালি কথাবার্তায় আমাদের মত কাঠবিড়ালি চাকর বাকরেরা আসলে খুব ধন্দে পড়ে যায়। না এগোতে পারি, না পেছতে পারি,” মন্তব্য দুর্গাপুর নগর নিগমের এক বরিষ্ঠ বাস্তুকারের। তার মতে, “এখানে যেমন ভোটও হয়না, তেমনি কোন কিছু বদলায়ও না।” সম্ভবত ওই বাস্তুকারের এই আক্ষেপ অতটা সঠিকও নয়। কারণ প্রায় চার বছর আগে ২০২০র ৬ নভেম্বর মুখ্যমন্ত্রী কলকাতায় পুরমন্ত্রী ফিরাদ হাকিমকে হুকুম করা মাত্রই বদলে দেওয়া হয়েছিল নগর নিগমের মেয়র দিলীপ আগস্তিকে। তাহলে দিলিপের বেলায় এক নিয়ম আর হাতের পেয়ারের পাঁচটি আঙুলের বেলায় কি তবে নিয়ম ভিন্ন? দিন যত গড়াচ্ছে নগরনিগমকে ঘিরে জল্পনা, ততই দানা বাজছে, হাতপা গজাচ্ছে উদ্বোট গুজবেরও। এদিকে, এই অস্বস্তিকর অথচ চমকপ্রদ পরিস্থিতিতে প্রশ্ন বানে জর্জরিত যেমন নগর নিগমের মনোনীত পাঁচ প্রশাসক, তেমনি শহরের আরো অন্তত ১০ জন মানিগুণী। প্রশ্নের ধরন অবশ্য দু ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা। আসনে চিতিয়ে পড়া প্রশাসকদের সামনে একটু লেজ নাড়িয়ে তাদের পেয়ারের লোকেরা বলছেন – ‘আপনাকে বাদ দিয়ে বাকিদের বাজে বলেছে দিদি।’ আর অন্য ১০ জনের সামনে তেল মেরে নিজের নিজের রাস্তা পরিষ্কার রাখার জন্য মন খুশি করা তোষামোদ – ‘শুনছি আপনার নামটাতো আছেই। এবার দেখা যাবে কার দম কতো!’ এতেই গদগদ কিছু ব্যবসায়ী, নেতা আবার কৌশলে জনে জনে ফোন করে আবদারও করছেন, ‘একটু চেক করে দেখুন তো, এটা ফেক না আসল!” শহরের ডজন ডজন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে ভালো-মন্দ মিলিয়ে ঘন্টায় ঘন্টায় রোজকার চর্চা – ‘সম্ভবত কালকেই বেরিয়ে যাবে লিস্ট।’ যদিও সেই কালটা আর আসেনি। তবে শহরজুড়ে ছড়িয়ে পড়া ন’জনের উটকো একটি তালিকা এখন নগরবাসীর পকেটে পকেটে ঘুরছে। তাতে শহরের নামী চিকিৎসক, শিক্ষক, গহনা ব্যবসায়ীর পাশাপাশি এক দুজন বর্তমান প্রশাসকের নামও জ্বলজ্বল করছে। এই তালিকা কি ভুয়ো নাকি সত্যিই টায়ে টায়ে ধ্রুব সত্য এর জবাব না মিলেছে নগর নিগমে, না মিলেছে শাসকদলের জেলা স্তরের সর্বোচ্চ অলিন্দে। বিষয়টি নিয়ে শনিবার দুপুরে তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বলেই দিলেন, “ওসব তালিকা মনগড়া। উদ্দেশ্য প্রণদিত। আসলে, কেউ কেউ সুযোগ বুঝে ঘোলা জলে মাছ ধরার চেষ্টা করছে। একে তাকে দিয়ে নিজের নাম ঢুকিয়ে, কাউকে দিয়ে ভাইরাল করে বাজি মারতে চাইছে। ওপর থেকে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব এইরকম কোন তালিকাই পাঠান নি বা এটিকে অনুমোদনও করেননি।” তার কথায়, “আমাদের মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী যে পাঁচজনের সম্পর্কে পুরসভা থেকে বদলে দেওয়ার কথা বলেছেন, তারা তো আমাদের দলেরই লোক। আমার ধারণা – কাজে গতি আনতে ওদের কিছু ভুল ত্রুটি সংশোধনের জন্যই দিদি এভাবে একটু বকাবকি দিয়েছেন মাত্র।” প্রশাসক মন্ডলীর আশু বদল প্রসঙ্গে নরেনের জবাব, “না। আমার কাছে এ সম্পর্কে আলাদা করে কোন নির্দেশই আসেনি এখনো পর্যন্ত।” অর্থাৎ, শাসকদলের জেলা সেনাপতির কাছেও বিষয়টি এখনো আদৌ স্পষ্টই নয়। কি হবে, কেমন হবে – তার হদিশ এখনও ভরা দামোদরের বিশ বাঁও জলের তলায়।

“আসলে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন বদল করেন তখন তা হয় আচমকাই। যেমন তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়কে হঠাতই সরিয়ে আসানসোল দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের বসিয়ে দিলেন হোটেল ব্যবসায়ী কবি দত্তকে,” বলে মন্তব্য রাজ্যের বিরোধী দলের এক নেতার। আবার, ওই বিজেপিরই রাজ্য নেতা, বিধায়ক লক্ষণ ঘড়ুই এদিন বলেন, “পুরসভায় ভোট করার দম নেই, আর এসব বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে শাসক দল দু’বছর ধরে ক্ষমতাসীন দল ভোট করতে পারে না। এটা চূড়ান্ত লজ্জার।” তিনি আরো বলেন, “এইতো তিন দিন আগে পাঁচটা ছাগল নিয়ে ৫০০ লোকের একটা জমাটি বিক্ষোভ করলাম মানুষকে বোঝাতে যে ছাগল দিয়ে কি আর চাষ হয়? এটা আমরা বুঝেছি, মানুষ বুঝেছে, এমনকি খোদ মুখ্যমন্ত্রীও বুঝেই সব বলেছেন। তারপরেও একটা মাস কেটে গেল তবুও বদলালোনা কিছুই। কেন? ওখানে কি তবে ওপর তলায় কারা কারা ঠিকঠাক কালেকশনের টাকা পাঠাতে পারবে তারই বাছাই চলছে এখন? নাহলে অপদার্থ বলে প্রকাশ্যে দেগে দেওয়ার পরও ফের ওদেরই হাতে শহরের রাজপাট ছেড়ে রেখে দিয়েছে কার স্বার্থে?” লক্ষণদের পাঁচটি ছাগল নিয়ে নাচনকোদনকে অবশ্য তীব্র ধিক্কার জানিয়ে নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বলেন, “এটা দুর্গাপুরের মতো রুচিশীল একটি শহরের সংস্কৃতি প্রিয় মানুষ ভালোভাবে নেয়নি। নেবেওনা।”

এদিকে, ঘোষণার পরেও নতুন নির্দেশ না আসায় রাজপাটে পদ আলো করে বসে থাকা পাঁচ মহারথীর সকলেই কি তবে খুব সুখে আছেন এখন? মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পরপরই মুখ শুকিয়ে, মুখ লুকিয়ে থাকা পাঁচ প্রশাসক যাকে বলে প্রায় পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন। এখন তাদের ফের নড়াচড়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তাদেরই মন মরা কেউ কেউ একেক সময় বলেও বসেন, ‘এভাবে কি কাজ করা যায়? কেউ আর মানবে আমাদেরকে?’

প্রশ্ন আরো আছে লোকের এমনকি প্রশাসকদের মনেও। প্রশাসক তো সবাই জানে পাঁচ জন, তবে, মুখ্যমন্ত্রী হঠাৎ ছজন বললেন কেন? উনি কি ভুল বলেছেন, নাকি এটা ছিল তার কৌশলগত কোনো ঘোষণা? বোঝা দায়! পাঁচজনের সবাই প্রতিদিনই এখন ভাবছেন – ‘আজই বোধহয় শেষ দিন!’ দেখাযাক কি বলেছেন এদিন পর্যন্ত মুখ্য প্রশাসকের আসনে বসে থাকা অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায় নিজে? তার কথায়, “আমার কাছে এখনো এনিয়ে কোন নির্দেশ আসেনি। অবশ্য আমার কাছে এমন নির্দেশ আসবেও না। ওসব আসবে এখানে থাকা দুই মন্ত্রী বা জেলা সভাপতির কাছে। তবে, দল যা সিদ্ধান্ত নেবে তা শিরোধার্য।” অনিন্দিতার আরো স্পষ্ট কথা, “আমার দলনেত্রী আমাদের মা। আমাদের মা আমাদের অভিভাবক। একবার কেন – তিনি দরকার হলে ৫০ বার অপদার্থ বলবেন, কারণ তিনিই আমাদের অভিভাবক।” শহরে ঘুরতে থাকা নয় জনের বাজারি তালিকা নিয়ে অনিন্দিতার প্রতিক্রিয়া, “দিদি একবারও বলেননি এক মাসের মধ্যে বোর্ড বদলাতে হবে। উনি কোন সময়সীমাও দেননি। আমার ধারণা হয়তো ভোটের টিকিট দেওয়ার সময় উনি এসব বদলাবেন। এসব লিস্ট কারা ছড়াচ্ছে কে জানে! ওসব নিয়ে ভাবার সময় এখন আমার নেই। ভাবিও না।”

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments