eaibanglai
Homeএই বাংলায়উচ্ছেদ অভিযানঃ ডিএসপির বীরত্ব থমকে প্রান্তিকায়, ডিভিসির মায়াবাজারে

উচ্ছেদ অভিযানঃ ডিএসপির বীরত্ব থমকে প্রান্তিকায়, ডিভিসির মায়াবাজারে

মনোজ সিংহ, দুর্গাপুরঃ- এক কেন্দ্রীয় সংস্থা দখলদার উচ্ছেদে দু কদম এগুতে ভয় পেলেও, মোদি সরকারের দুর্গাপুর ইস্পাত কর্তৃপক্ষ মঙ্গলবার নির্বিচারে বুলডোজার চালিয়েই দিলো ফুটপাথের দোকান, ঘরের ওপর। এদিন ইস্পাত নগরীর কিছু জায়গায় উচ্ছেদের ভাংচুর চললেও, কর্তৃপক্ষ নয়নের মনির মতো তোয়াজ বজায় রাখলো প্রান্তিকা এলাকার গুচ্ছ গুচ্ছ দোকানঘর, ঝুপড়ি, বস্তিগুলির ওপর। ছুয়েও দেখলনা কাবাড়িপট্টি কে। কিন্তু কেনো – এ প্রশ্ন শহর জুড়েই।

রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বেশ কিছুদিন আগে কলকাতার এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে বিভিন্ন জেলায় বেদখল হয়ে যাওয়া সরকারি জায়গা পুনরুদ্ধার করার লক্ষ্যে নির্দেশ দেন। এ কাজে লেগে পড়তে বলা হয় পুরসভা সহ সরকারের নগরোন্নয়ন সংস্থাগুলিকেও। মুখ্যমন্ত্রীর আদেশ পাওয়া মাত্রই রাজ্য সরকারের অধীনস্থ সেই সব দপ্তর,পৌর নিগম, ভূমি ও ভূমি রাজস্ব বিভাগ, জেলা প্রশাসন, পুলিশ সহ একাধিক সরকারি সংস্থা কোমর বেঁধে নেমে পড়েন অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ অভিযানে। কলকাতা সহ রাজ্যের একের পর এক সরকারি বেদখল হওয়া জমি পুনরুদ্ধার হওয়া শুরুও হয়। শিল্পাঞ্চল দুর্গাপুরেও আসানসোল দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদ, দুর্গাপুর নগর নিগম, দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন, দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা সহ একাধিক সংস্থা তাদের বেদখল হওয়া জমি পুনরায় দখল নিতে মাঠে ময়দানে নেমে পড়েন। শহরের সিটি সেন্টার, বিধাননগর, বেনাচিতি এলাকায় আংশিক উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে, ক্ষেত্র বিশেষে ছাড় দিয়ে একদফা কাজ করে এখন বিশ্রাম নিচ্ছে এ ডি ডি এ। এরই মাঝে নামকে ওয়াস্তে একদিন আড়া, বামুনারা এলাকায় মাইকিং করেও বিস্ময়কর ভাবে গত সপ্তাহে হঠাৎই অজানা কারণে হাতগুটিয়ে এলাকা ছেড়ে পালায় এ ডি ডি এ।

যদিও, দুর্গাপুরের বহু এলাকা থেকে ইতিমধ্যেই অবৈধ দখলদার সরিয়ে ফেলা হয়েছে। কয়েক হাজার মানুষ নিরুপায় হয়ে চোখের জলে ভেঙে যেতে দেখেছেন তাদের একমাত্র রুজি রুটির সংস্থান। শিল্পাঞ্চল দুর্গাপুরে হকারী ও ছোট্ট বাঁশটালীর দোকান করে নিজের ও নিজের পরিবারের ভরণ পোষণ করা কয়েক হাজার মানুষ পুজোর মুখেই এখন কর্মহীন। যদিও শিল্পাঞ্চল দুর্গাপুরের সাধারণ নাগরিকেরা রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন ও আগামী দিনেও যেন এই উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত থাকে তার আর্জিও জানিয়েছেন। দুর্গাপুরের প্রাণকেন্দ্র সিটি সেন্টার এর সত্তর ঊর্ধ্ব নাম প্রকাশে অনুচ্ছুক এক প্রাক্তন ইস্পাত কর্মী জানান, “দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে সরকারি রাস্তার পাশে জায়গা দখল করে, সরকারি বিদ্যুৎ চুরি করে দিনের পর দিন ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া এই অবৈধ দখলদাররা কোনদিনই সরকারকে তাদের উপযুক্ত কানা-কড়িও দেয়নি। তাহলে কেন সাধারণ দুর্গাপুরের বাসিন্দারা তাদের কষ্ট অর্জিত ট্যাক্সের টাকায় ওইসব অবৈধ দখলদারদের সমর্থন করবে?”

এদিকে দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা তাদের নিজস্ব ইস্পাত নগরীর টাউনশিপের ভেতর বহুদিন ধরেই চলে আসা অবৈধ দখলদারের অত্যাচারে অতিষ্ট। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যখন সরকারি জায়গা থেকে দখলদারির উচ্ছেদের ডাক দেন তখন এই সুযোগে ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমে পড়ে দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার উচ্ছেদ অভিযান বাহিনী। শুরু হয় ইস্পাত নগরীর ভেতরের রাস্তার দু- ধরে থাকা একের পর এক গুমটি দোকানঘর বুলডোজারের ঘায়ে ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেওয়ার কাজ। দুর্গাপুর ইস্পাত নগরীর ভেতরে একের পর এক নতুন করে গজিয়ে ওঠা সরকারি জমির উপরে দোকান, ক্লাব,পার্টি অফিস সহ অবৈধ বস্তি ভেঙে ফেলার কাজ শুরু করেছে ইস্পাত কর্তৃপক্ষের উচ্ছেদ অভিযান বাহিনীর কর্মকর্তারা। নিঃসন্দেহে, দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার এই উচ্ছেদ অভিযানকে সমর্থন জানিয়েছেন সাধারণ ইস্পাত নগরীর বাসিন্দারা। যদিও কয়েক হাজার বেকার যুবক, যারা এইসব গুমটি দোকানগুলি থেকে নিজেদের জীবন ধারণের পথ খুঁজে পেয়েছিলেন তারা আবার প্রকাশ্য রাজপথে দাঁড়িয়ে পড়েছেন খালি হাতে।

ইস্পাত কর্তৃপক্ষের এই উচ্ছেদ অভিযান কি শুধুই প্রহসন?

ইস্পাত নগরীর বাসিন্দারা একযোগে অভিযোগ করছেন ইস্পাত নগরীর এ-জোন এলাকার প্রান্তিকা বাস স্ট্যান্ড সংলগ্ন বস্তি ও অবৈধ দোকানগুলির উচ্ছেদ না হওয়ার কারণ কি? দুর্গাপুর ইস্পাত কর্তৃপক্ষের উচ্ছেদ অভিযানের কর্মকর্তারা প্রতিটি এলাকায় অবৈধ দখলদারদের রাস্তা থেকে কুড়ি ফুট দূরত্বে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিলেও, কোন এক অজানা কারণে টেগর এভিনিউ, সি আর দাস রোড সহ প্রান্তিকা বাস স্ট্যান্ড সংলগ্ন রাস্তার দু ফুট উপরে বসে থাকা দোকান, গুদামঘর ও বস্তি ভাঙ্গার কোন প্রচেষ্টায় লক্ষ করা যাচ্ছে না কেনো ? ডিএসপি’র উচ্ছেদ অভিযান বাহিনীর কর্মকর্তাদের এর পেছনে আসল কারণটাই বা কি ? অনেকে বলছেন, দুর্গাপুর ইস্পাত নগরীর ভেতরে থাকা জনপ্রতিনিধিরা একপ্রকার নিশ্চুপ হয়ে বসে থাকার ফলেই দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার উচ্ছেদ অভিযান বাহিনীর কর্মকর্তারা নির্বিচারে নিজেদের ইচ্ছে মতন তুলনামূলক প্রতিরোধহীন ভাবেই এলাকা গুলির দোকান ঘর ভেঙে গুড়িয়ে দিচ্ছেন। কিন্তু যেখানে রাস্তার দু ফুট উপরে গুদামঘর, দোকান ও বস্তি হয়ে রয়েছে এবং সেটি ইস্পাত নগরীর প্রাণকেন্দ্র বেনাচিটি বাজারে প্রবেশ করার মূল রাস্তা তার দু ধার পরিষ্কার করার বা অবৈধ দখলদার উচ্ছেদের কোন প্রচেষ্টায় লক্ষ্য করা যাচ্ছে না তার কারণ কি ? শক্ত প্রতিরোধের মুখে পড়তে হবে জেনেই কি ডিএসপি’র অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ অভিযানের কর্মকর্তারা তাদের বীরত্বে ওইসব এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান না চালিয়ে পিছু হেঁটে, মুখ লুকাচ্ছেন? মঙ্গলবারের একপেশে অভিযানের পর যদিও কর্তৃপক্ষ এনিয়ে কোনো উচ্চবাচ্চ করেননি।

ওদিকে, রাষ্ট্রায়ত্ত দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন এখানকার মায়াবাজার এলাকায় তার প্রস্তাবিত ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের জন্য প্রয়োজনীয় নিজস্ব জমি উদ্ধারে এখনো ব্যর্থ। মঙ্গলবার সংস্থার চেয়ারম্যান সুরেশ কুমার এবিষয়ে দুর্গাপুরে দ্বিতীয় দফায় এসেও কাজের গতি আনতে ব্যর্থ হয়েছেন। এদিন মায়াবাজারে তিনি মহকুমা শাসকের সাথেও বৈঠক করেন। কিন্ত উচ্ছেদ অভিযান আদৌ ফলপ্রসূ হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যায়নি। সুরেশ কুমার উচ্ছেদ প্রসঙ্গে এদিন বলেন, “দখলদারেরা কারখানার জমি দখল করে বসে আছে। ওদের সাথে কথাও বলে জানিয়ে দিয়েছি ওদেরকে সরে যেতেই হবে। কোনো ক্ষতিপূরণও দেওয়া যাবেনা।” তিনি এদিন বলেন, “আশা করি দ্রুত সমস্যা মিটবে।”

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments